প্রযুক্তির কল্যাণে হারিয়ে গেছে আবেগ-অনুভূতির চিঠি 

তিন ধরনের ডাক বাক্স
তিন ধরনের ডাক বাক্স  © ফাইল ফটো

‘ভালো আছি ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’ গানটি লিখতে গিয়ে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ কি ভেবেছিলেন মানুষ একসময় শুধুই আকাশের ঠিকানায় অর্থাৎ অন্তজালে (ইমেইল) চিঠি লিখবে। বাস্তবতা এই যে এখন দাপ্তরিক কাজের নথি বা আবেদন পত্রের ঝুঁকি ছাড়া কেউ ডাকঘরে যায় না।

অথচ একসময় দূর থেকে আপন জনের সঙ্গে যোগাযোগ করার একমাত্র মাধ্যম ছিল চিঠি। এমনকি অন্তরের খুব কাছের কাউকে মুখ খুলে বলতে না পারা কথাগুলোও সযত্নে সাজিয়ে নেয়া হতো চিঠিতে। মোবাইল ফোন ইমেইলের যুগের আগে চিঠি ছিল যোগাযোগের সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম। টেলিফোন আবিষ্কৃত হলেও তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় সাধারণ মানুষ যোগাযোগের জন্য চিঠির উপর নির্ভরশীল ছিলেন। 

চিঠি লিখে খামে ভরে নির্দিষ্ট ডাক বাক্সে ফেলতে হতো। এখনো রাস্তার মোড়ে মোড়ে নির্দিষ্ট জায়গায় অব্যবহারে জীর্ণ, ধূলি ধূসরিত ডাকবাক্স চোখে পড়ে। চিঠির সাথে জড়িয়ে ছিল নানা স্মৃতি নানা আবেগ। সেই আবেগ এখন আর মেসেঞ্জার কিংবা ইমেইলে পাওয়া যায় না। আগে এক একটি চিঠি যেন হয়ে উঠতো এক একজনের প্রাণের সঞ্চার। 

শুধু প্রেম নয় সব ধরনের যোগাযোগ হতো চিঠির মাধ্যমে। কোন এক বেকারের চাকরির খবর, বিদেশে থাকা সন্তানের মায়ের কাছে চিঠি, কিংবা দেশ হতে বিদেশ মায়ের লেখা ছেলের কাছে চিঠি। শুধু দূরে কিংবা অদেখা লোকের কাছেই মানুষ চিঠি লিখতো না,যার সাথে প্রায় দেখা হয় কিংবা প্রতিদিন দেখা করা প্রেমিক প্রেমিকা ও একে অপরকে চিঠি লিখতো। শুভেচ্ছা বার্তা,খোঁজ-খবর নেওয়া,টাকা পাঠানো, চাকরির যোগদান পত্র এক সময় সবকিছুই আসতো চিঠির মাধ্যমে।

মহাদেব সাহার কবিতার মতো করে কত প্রেমিকই তো তার প্রিয়তমার কাছে চিঠি চাইতেন।

‘করুণা করে হলেও চিঠি দিও, খামে ভরে তুলে দিও
আঙ্গুলের মিহিন সেলাই
ভুল বানানেও লিখো প্রিয়, বেশি হলে কেটে ফেলো তাও,
এটুকু সামান্য দাবি, চিঠি দিও, তোমার শাড়ির মতো
অক্ষরের পাড়-বোনা একখানি চিঠি।’

সাধারণত তিনটি ডাক বাক্স একসাথে দেখা যায়। তিনটি ডাক বাক্সের রং তিন ধরনের। লাল,নীল, হলুদ। চিঠি লিখে এই ডাক বাক্স গুলোতে ফেললে ডাক পিয়ন এগুলোকে সংগ্রহ করে পোস্ট অফিসে নিয়ে যেতেন। সেখান থেকে নির্দিষ্ট ঠিকানায় চিঠি গুলো পাঠিয়ে দেওয়া হতো।  

এই নির্দিষ্ট ঠিকানায় পাঠানোর সুবিধার্থে তিন রঙে ডাকবাক্সের প্রচলন শুরু হয়। নীল ডাকবক্সে বিদেশে পাঠানো চিঠি, লাল ডাকবাক্সে দেশের অভ্যন্তরের চিঠি এবং হলুদ ডাকবাক্সে ফেলা হতো একই শহরের ঠিকানার চিঠি। 

রানার ছুটছে তাই ঝুম ঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে। রানার চলছে খবরের বোঝা হাতে, রানার রানার চলছে; সুকান্ত ভট্টাচার্যের 'রানার' কবিতার সেই 'রানার' আজ আর নেই। আগের মত আর বাড়ি গুলোর গেটে দেখা মেলে না চিঠির বাক্সের। প্রেয়সীর কাছে সুগন্ধি মেখে চিঠি লিখতো প্রেমিক, এমন কথা অনেকেই হয়তো শুনে থাকবে। এখন আর এসব নেই। 

বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে বর্তমানে যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে মোবাইল ফোন। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ  ইমো, টুইটার, মেসেঞ্জারসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ফলে চিঠি হারিয়ে ফেলেছে তার ঐতিহ্য। ডাক বিভাগে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও গত পাঁচ বছরে ডাক বিভাগের চিঠি কমেছে অর্ধেক। 

আজ ১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক চিঠি দিবস। লাল-নীল পাতায় বাহারি রঙে মনের নানা কথা জানিয়ে চিঠি লিখতে পারেন আপনিও। যা শুরুতে স্নেহময় এবং শেষে থাকবে ইতি তোমারই। শুধু প্রেয়সী প্রিয়তমা নয়, আপনি বাবাকে ভালবাসেন এ কথা হয়তো মুখে বলতে পারছেন না এ কথাটা আপনি লিখে চিঠির মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনার বাবকে। মাকেও চিঠি লিখতে পারেন আজ। ছোটবেলার কোন বন্ধু যে আপনার ছেলেবেলা জুড়ে আছে কিন্তু বর্তমানে তার সাথে তেমন যোগাযোগ নাই। সেই প্রিয় বন্ধুকেও চিঠি লিখতে পারেন। 

লেখক: শিক্ষার্থী, কবি নজরুল সরকারি কলেজ


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence