১৮তম নিবন্ধনে ‘ভুতুড়ে’ ফল, কোনো বোর্ডে ফেল ২৯, কোনোটিতে ৩
- শিহাব উদ্দিন
- প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫, ০৬:৩৩ PM , আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৬:১৪ PM
সম্প্রতি প্রকাশিত ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফলাফলে এক বোর্ডে অত্যধিক সংখ্যক প্রার্থীর ফেল ও অন্য বোর্ডে অধিক পাসের ঘটনায় ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ফলাফলে একদিকে কোনো বোর্ডে ৩০ জনের মধ্যে ২৯ জন ফেল করেছেন, একই দিন অন্য বোর্ডে ৩০ জনে ২৭ জন পাস করেছেন, যা প্রার্থীদের চোখে ‘ভুতুড়ে’ হিসেবেই ধরা পড়ছে।
চাকরিপ্রার্থীরা অভিযোগ করেন, মৌখিক পরীক্ষাতে (ভাইভা) মাত্র ৪ নম্বরের জন্য এমন ব্যাপক ফলবৈষম্য অস্বাভাবিক। প্রাপ্ত নম্বর ও যোগ্যতা বিবেচনায় না নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট বিষয়ে পদশূন্য থাকা সত্ত্বেও অনেক মেধাবী প্রার্থীকে ‘ইচ্ছাকৃত’ ফেল করানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রার্থীরা এনটিআরসিএর কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নিয়েছেন এবং ফল পুনর্মূল্যায়ন বা বোর্ডভিত্তিক তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
যদিও প্রার্থীদের এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে এনটিআরসিএ। সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মুহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, ভাইভা প্রক্রিয়া এবার “তুলনামূলক কঠিন” হওয়ায় ফেলের সংখ্যা বেশি। তিনি বলেন, “ভাইভা বোর্ডে একজন প্রার্থীর প্রেজেন্টেশন, যোগ্যতা, শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন ইত্যাদি মূল্যায়ন করে ফল নির্ধারণ করা হয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করানো হয়নি” । তবে তিনি উল্লেখ করেন, চূড়ান্ত ফলাফল রদ করার কোনও নিয়ম নেই; তবে মন্ত্রণালয় চাইলে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে পারে।
তবে এনটিআরসিএর এমন দাবি প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা বলে জানিয়েছেন ১৮তম নিবন্ধনে অনুত্তীর্ণ প্রার্থীরা। তারা বলছেন, বোর্ডভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণই বলে দেয়, ফলাফলে অনিয়ম হয়েছে। একইদিন একই বিষয়ে কোনো বোর্ডে ২৭-২৯ জন ফেল; আবার কোনো বোর্ডের দুই/তিনজন ফেল। যা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
মো. মিলন নামে এক ভুক্তভোগী জানান, ফলাফলে অসংগতি ও বৈষম্য করা হয়েছে। ভাইভায় অংশ নিয়ে ভালো করার পরও অনেকে অনুত্তীর্ণ হয়েছেন। একাধিক বোর্ডে ৩০ জনের মধ্যে মাত্র ১ থেকে ৩ জন পাস করেছেন, অন্যদিকে কিছু বোর্ডে ২৯ জনও পাস করেছেন। ভাইভায় সবগুলো প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার পরও অনেককেই ফেল দেখানো হয়েছে। এটা ন্যায়সংগত নয়।’
১৮তম নিবন্ধনের বোর্ডভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ৬ ও ৮ মে অনুষ্ঠিত আরবি প্রভাষক বিষয়ের ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়। এ পরীক্ষায় ১২০ জন অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে মাত্র ২০ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। এ বোর্ডে এক্সপার্ট হিসেবে ছিলেন লালবাগের মাহমুদা খাতুন মহিলা কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি বদিউল আলম সরকার।
গত ৫ মে হিসাববিজ্ঞানের প্রভাষক পদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন ৬বি বোর্ডে ভাইভায় অংশ নেওয়া ৩০ জনের মধ্যে ২৭ জনকেই ফেল করানো হয়েছে। একইদিন একই বিষয়ে অন্য বোর্ডে ফেলের সংখ্যা তুলনামূলক কম।
৬ মে ১০এ বোর্ডে ভাইভায় অংশ নেওয়া ৩০ জনের মধ্যে ২২ জনকে ফেল করানো হয়েছে। ৮ মে ৩বি বোর্ডে আরবি প্রভাষক পদে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৩০ জনের মধ্যে ২৫ জনই ফেল করেছেন। পাস করেছেন পাঁচজন।
২৬ মে ফিকহ্ বিষয়ে ভাইভায় অংশ নেওয়া ২০ জনের মধ্যে মাত্র দুইজনকে পাস করানো হয়েছে। এ বিষয়ে মোট ভাইভা প্রার্থী ছিলেন ৫১ জন। পদ খালি রয়েছে ৫০টি। তবে পাস করানো হয়েছে মাত্র ১৭ জনকে।
গত ১৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের মৌখিক পরীক্ষায় ২এ বোর্ডে ৩০ জন প্রার্থীর মধ্যে ২১ জনকেই ফেল করানো হয়েছে। যদিও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে অনেক পদ ফাঁকা বলে দাবি করেছেন প্রার্থীরা।
একইভাবে বাংলা, ইংরেজি, গণিতসহ অন্যান্য বিষয়েও বোর্ডভিত্তিক ফলাফলে বিস্তর ফারাক দেখা গেছে। বিষয়টি সমাধানে প্রধান উপদেষ্টা এবং শিক্ষা উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।