মানহীন শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সংসদে ক্ষোভ

সংসদ অধিবেশন
সংসদ অধিবেশন   © সংগৃহীত

বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা দাবি করেছেন, শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমানে ভেঙে পড়েছে। নিয়োগ বাণিজ্য, মানহীন শিক্ষাব্যবস্থায় জাতি ক্রমাগত অবনমন হচ্ছে। এর ফলে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।

মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর বিলের ওপর আলোচনায় বিরোধিতা করে এসব কথা বলেন বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা। এর আগে, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বিলটি উপস্থাপন করেন।

বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যদের মধ্যে ছিলেন- বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ, রুমিন ফারহানা, জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু, ফখরুল ইমাম, রুস্তম আলী ফরাজী।

বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, বর্তমানে শিক্ষার গুণগতমান একেবারে ভেঙে পড়েছে। তাছাড়া স্কুল-কলেজগুলোতে গত ১০ থেকে ১৫ বছরের অর্থ বিনিময়ের ছাড়া কোনো শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ হচ্ছে না। সম্প্রতি দপ্তরি নিয়োগেও ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা নিয়োগবাণিজ্য হচ্ছে। গতানুগতিক শিক্ষা বাদ দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাব্যবস্থা চালুর অনুরোধ করেন তিনি।

জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইচ্ছে মতো আর্থিক ব্যবস্থাপনা করছে। এটি বন্ধ করতে না পারলে দুর্নীতি বেড়ে যাবে, শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।

তিনি বলেন, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি নীতিমালা করা উচিত। দেখা যাচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নীতিমালা হচ্ছে। এগুলো বন্ধ না হলে শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়বে, শিক্ষা বাণিজ্য বেড়ে যাবে।

আরও পড়ুন : যে বেশি শিক্ষিত, তার বেকার থাকার সম্ভাবনাও বেশি: রুমিন ফারহানা

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামো খুবই সুন্দর। কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থা কর্মবিমুখ। শিক্ষকরাও তেমনিভাবে প্রশিক্ষিত নন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেসব ছেলে-মেয়েরা বের হচ্ছেন তারা অধিকাংশই বেকার হয়ে ঘুরছেন। এ সময় তিনি কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালুর আহ্বান জানান।

সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, যে যত বেশি শিক্ষিত, তার বেকার থাকার সম্ভাবনাও তত বেশি। সবচেয়ে বেশি বেকার স্নাতক ডিগ্রিধারীরা। আজকের এই বিল নিয়ে আমরা ১৫৭টি বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাস করলাম। কিন্তু বেকারত্বের হার বেড়েছে বৈ’কমেনি।

রুমিন ফারহানা বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস’র গবেষণায় বলা হয়েছে, স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করে চাকরি পান মাত্র ২১ শতাংশ। ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী এখনও অন্য কোনও বিষয়ে স্নাতকোত্তর বা কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করছেন বা কিংবা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী স্ব-উদ্যোগে কিছু করার চেষ্টা করছেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপের বরাতে সংরক্ষিত নারী আসনের এ সদস্য বলেন, দেশের শিক্ষিত মানুষের মধ্যে বেকারের হার বেশি। ৪৭ শতাংশ মানুষই বেকার থাকছে। আরেকটা বিষয় এখানে গুরুত্বপূর্ণ স্পিকার আমাদের দেশে চাকরিরত মানুষের মধ্যে বড় একটা অংশ আন্ডার এমপ্লয়েড। অর্থাৎ তারা তাদের যোগ্যতার তুলনায় নিচু পদে ও কম পারিশ্রমিকে কাজ করছে।

তিনি বলেন, দেশের শিক্ষিত তরুণরা বিসিএস’র দিকে ছুটছে। অথচ সবশেষে বিসিএস’র পরীক্ষায় যখন পৌনে পাঁচ লাখ প্রার্থী অংশগ্রহণ করছেন, তখন শূন্য পদের সংখ্যা দুই হাজার একশটি। সরকারি চাকরি লোভনীয় কোনো সন্দেহ নেই।

তিনি বলেন, চাকরিতে নিশ্চয়তা আছে, ভালো বেতন ও অবসরের পরে পেনশনের ব্যবস্থা আছে। চাইলে আছে অবৈধভাবে অকল্পনীয় উপার্জনের রাস্তা। আছে ক্ষমতার দো-দণ্ড প্রতাপ। কিন্তু দেড়-দুই দশক আগেও বিসিএস নিয়ে এমন উন্মাদনা ছিল না। কারণ নিশ্চিতভাবে শিক্ষিত তরুণদের জন্য ভালো চাকরির সুযোগ এখনকার তুলনায় অনেক বেশি ছিল।

আরও পড়ুন : বরেণ্য শিক্ষাবিদরা উপাচার্য হতে চান না: শিক্ষামন্ত্রী

জাতীয় সংসদে বিএনপি’র এই নেত্রী বলেন, গণতন্ত্র ও বাজার অর্থনীতিতে বিশ্বাসী ৩৮টি দেশের সংগঠন অর্গানাইজেশন ফর ইকোনোমিক কো-কর্পোরেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’র মতে, এসব দেশ শুধু উন্নয়নশীল দেশই নয়, জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকেও অত্যন্ত উচ্চস্তরের অধিকারী।

এই নেত্রী আরও বলেন, তাদের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশজুড়ে আছে সরাসরি কর্মমুখী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। ভোকেশনাল অ্যাডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং। এসব দেশে মাধ্যমিক পর্যায় থেকে যুক্ত হয় প্রায় এক তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী। মাধ্যমিক স্তরে যুক্ত না হলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে গিয়ে ৪২ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোকেশনাল অ্যান্ড ট্রেনিংয়ে যুক্ত হয়। এ ধরনের শিক্ষায় যুক্ত হওয়ার হার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মাত্র ১২ শতাংশ। শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন হবে সেটার যথেষ্ট নজির আছে বিশ্বব্যাপী। কিন্তু সেদিকে না হেঁটে আমাদের সরকার হাঁটছে উল্টো দিকে।ন


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence