আসপিয়ার জন্য অনশনে বসার ঘোষণা নির্মলেন্দু গুণের
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:৫১ AM , আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২১, ০২:৪৫ PM
স্থায়ী ঠিকানা জটিলতার কারণে নিয়োগ পরীক্ষার সবকটি ধাপ পেরিয়েও চাকরি হচ্ছে না বাবা হারা আসপিয়ার। বরিশালে পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজির সঙ্গে দেখা করেও কোনো লাভ হয়নি। শেষে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হয়ে তাকে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যে সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
আসপিয়ার পুলিশের চাকরি না হলে অনশনে বসার ঘোষণা দিয়েছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। চাকরি না হওয়ার বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে করা একটি প্রতিবাদী পোস্টে মন্তব্য করে তিনি এই ঘোষণা দেন।
আরও পড়ুন: জমি না থাকায় চাকরি হলো না আসপিয়ার
নির্মলেন্দু গুণ তার ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘ভূমিহীন হলে পুলিশের চাকরি করা যাবে না-এ রকম একটা আইন আছে, সেটাই তো জানতাম না। মেধা তালিকায় পঞ্চম হয়েও ভূমিহীন বলে বরিশালের আসপিয়া চাকরি পাবে না, এটা হতে পারে না। হতে দেওয়া যায় না। এই আইন বাতিল কিংবা সংশোধন করে তাকে চাকরি দেওয়া হোক। নইলে আমি অনশনে বসব।’
এদিকে নির্মলেন্দু গুণের অনশনে বসার ঘোষণাকে অনেকে সমর্থন জানিয়েছেন। এমনকি তার সঙ্গে অনশনে বসার আগ্রহও দেখিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ছাত্রীকে পিটিয়ে জখম, যুবলীগ নেতা বাপ্পি বহিষ্কার
জানা গেছে, বরিশালের হিজলা উপজেলার সরকারি হিজলা ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করেন মৃত সফিকুল ইসলামের মেয়ে আছপিয়া ইসলাম কাজল। মা, তিন বোন ও এক ভাইয়ের সঙ্গে আছপিয়া বড়জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের খুন্না-গোবিন্দপুর গ্রামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর জমিতে আশ্রিত হিসেবে বসবাস করছেন। তার বড় ভাই ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করেন। আর মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন।
গত ১০ সেপ্টেম্বর পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পুলিশ সদর দফতর। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বরিশাল জেলা থেকে টিআরসি পদে ৭ জন নারী ও ৪১ জন পুরুষ নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী হিজলা থেকে অনলাইনে আবেদন করেন আসপিয়া ইসলাম। ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর বরিশাল জেলা পুলিশ লাইন্সে অনুষ্ঠিত শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। ২৩ নভেম্বর প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফলেও কৃতকার্য হন। ২৪ নভেম্বর পুলিশ লাইন্সে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হন আছপিয়া।
২৬ নভেম্বর পুলিশ লাইন্সে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২৯ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে কৃতকার্য হন আসপিয়া। তবে চূড়ান্ত নিয়োগের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশনে নিয়োগ থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। কারণ তিনি বরিশাল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা নন। এই নিয়োগ পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
আসপিয়ার পরিবারের তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী হিজলা থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আব্বাস জানান, আছপিয়ার বাবা মারা গেছেন। তিনি মা ও ভাই-বোন নিয়ে হিজলায় বসবাস করেন। কিন্তু তাদের মূল বাড়ি হিজলায় নয়। তাদের মূল বাড়ি হচ্ছে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায়। সেখানে তার দাদার নামে জমি আছে। কিন্তু অতদূর আমাদের খতিয়ে দেখার বিষয় না। তিনি বরিশাল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা কিনা সেটি তদন্ত করা হয়। আমি তদন্তে পেয়েছি আবেদনকারী বরিশাল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা নন। সেটি উল্লেখ করেছি। বাকি বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। বুধবার (৮ ডিসেম্বর) পুলিশ সুপার বরাবর প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
আসপিয়া ইসলাম কাজল বলেন, যেকোনো বিবেচনায় হোক আমাকে চাকরিটি দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই। এতে আমার সংসারের দুঃখ মোচন করতে পারব। আমার মায়ের দুঃখ ঘোচাতে পারব। আমরা হিজলায় ভূমিহীন হলেও সব পরীক্ষায় আমি পাস করেছি। যদি যোগ্য হই তাহলে আমাকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাই।