অর্ধেক ভাড়ার আন্দোলনের সমাধান কোথায়?

অর্ধেক ভাড়ার আন্দোলনের সমাধান কোথায়?
অর্ধেক ভাড়ার আন্দোলনের সমাধান কোথায়?  © ফাইল ছবি

সপ্তাহ ধরে ঢাকায় শিক্ষার্থীরা গণপরিবহণে অর্ধেক ভাড়ার (হাফ পাস) জন্য আন্দোলন করলেও সরকার বা মালিক পক্ষের দিক থেকে এখনো দাবি মেনে নেয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এই আন্দোলন ধীরে ধীরে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। এই আন্দোলন ধীরে ধীরে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। এইদিকে বুধবার হাইকোর্টে অর্ধেক ভাড়ার পক্ষে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের কর্মীদের হামলার পর বুধবার নতুন করে বড় কোনো হামলা ও হাঙ্গামার খবর পাওয়া যায়নি। ছাত্রলীগ এরইমধ্যে ছাত্রদের এই অর্ধেক ভাড়া দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক আছে। তারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে জড়ো হলেও বড় কোনো শো ডাউন করেনি। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনেই পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ বাস, ট্রেন ও লঞ্চে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার দাবি জানিয়ে যে রিট আবেদন করেছেন তার শুনানি রোববার হতে পারে। ইউনুস আলী আকন্দ বলেন, ‘‘আমরা নিজেরাও গণপরিবহণে ছাত্র জীবনে অর্ধেক ভাড়া দিয়েছি। এটা একটা ঐতিহ্য। দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে। এটা বন্ধ করা যাবে না। এটা বন্ধ করা সংবিধানেরও লঙ্ঘন। সরকারকে এখন অর্ধেক ভাড়ার জন্য সুনির্দিষ্ট আইন করে দিতে হবে।”

তিনি বলেন, সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে নারী ও শিশুদের জন্য বিশেষ সুবিধার কথা বলা আছে। শিক্ষার্থীদের শতকরা ৫০ ভাগ নারী। আর ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু। তাই শিক্ষার্থীদের সংবিধান অনুযায়ী গণপরিবহণে অর্ধেক ভাড়ার সুযোগ আছে। কিন্তু সরকার তা করছে না। উল্টো শিক্ষার্থীদের ওপর ডাবল ভাড়া চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে এই আন্দোলন এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।”

তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারের দুই-একজন মন্ত্রীও শিক্ষার্থীদের এই দাবির সাথে একমত। তারপরও মঙ্গলবার ছাত্রলীগের কর্মীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এটা ন্যাক্কারজনক। তাদের আইনের আওতায় আনা হোক।”

রিটে স্বরাষ্ট্র, নৌ ও সড়ক পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পুলিশের আইজিকে প্রতিপক্ষ করা হয়েছে।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার দাবির প্রতি আমাদের পুরো সমর্থন আছে। তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের প্রতিও আমাদের সমর্থন আছে। তবে সতর্ক থাকতে হবে যে একটি গোষ্ঠী সব সময় এই ধরনের আন্দোলনে মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়।”

তিনি মঙ্গলবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের কর্মীদের হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘এটা ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের ছাত্রদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে হয়েছে। একটি মটর সাইকেলের ঘটনা নিয়ে এই দ্বন্দ্ব এর সঙ্গে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত নয়।”

অর্ধেক ভাড়া নিয়ে বিআরটিএ এখনো কোনো বক্তব্য দেয়নি। বিআরটিএর চেয়ারম্যানকেও ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানাগেছে শনিবার সড়ক পরিবহণ মন্ত্রণালয় পরিবহণ মালিকদের সঙ্গে একটি বৈঠক ডেকেছে এই বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্যাহ জানান, ‘‘আমরা আমাদের আগের অবস্থানেই আছি। শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়ার কোনো আইন নেই। আমরা আগে এই সুবিধা দিয়েছি। কিন্তু এখন আর সম্ভব নয়। সরকার চাইলে দিতে পারে। বিআরটিসি বাস আরো বাড়াতে হবে।”

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘অর্ধেক ভাড়ার আইন না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এটা আমাদের প্রতি করুণা নয়, এটা আমাদের অধিকার। আর আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলা, নির্যাতন হয়েছে আমরা তারও বিচার চাই।”

শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিভিন্ন গ্রুপ খুলে তাদের আন্দোলন আরো জোরদার করার কাজ করছে। সেখানে তারা অর্ধেক ভাড়া নিয়ে কোথায় কী ঘটছে তাও তুলে ধরছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক মনে করেন, ‘‘শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার এই দাবি যৌক্তিক। আগে বাস, ট্রেন, লঞ্চ এমন কী অভ্যন্তরীণ বিমানেও অর্ধেক ভাড়া ছিলো। এখন বিআরটিসির বাস ছাড়া আর কোথাও নেই। এটা কীভাবে হলো?”

তিনি বলেন, ‘‘তবে এটা করতে হলে শিক্ষার্থীদের পরিচয় নিশ্চিতের ব্যবস্থা থাকতে হবে। আর বেসরকারি গণপরিহণের মালিকদের সাথে সরকারের পক্ষ থেকে বৈঠক করে একটা সমন্বয় করতে হবে যাতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হন। মালিক পক্ষের একটা সামাজিক দায়িত্ব আছে সেটা তাদের বুঝাতে হবে।” [সূত্র: ডয়চে ভেলে বাংলা]


সর্বশেষ সংবাদ