মৃত্যুদণ্ডের আসামি

৮৭ ভাগ স্কুল পার হতে পারেনি, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাহীন ১৫

প্রতীকী
প্রতীকী  © সংগৃহীত

দেশে গত দুই দশকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান এবং দণ্ড কার্যকরের সংখ্যা বেড়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের বেশির ভাগ দরিদ্র, স্বল্পশিক্ষিত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষ। বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৩৯ জনের মামলা নিয়ে করা গবেষণায় এমন তথ্য এসেছে।

বৃহস্পতিবার গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের উদ্যোগে ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) সহযোগিতায় গবেষণাটি হয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত গত ৩১ বছরে হত্যা ও সন্ত্রাসবিরোধী অপরাধের মামলায় দণ্ডিত ৭৪ শতাংশ বন্দির অপরাধের সময় বয়স ছিল ৩০ বছরের কম। বেশিরভাগ অপরাধীর বয়স ছিল ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে ৮৭ শতাংশ বন্দি স্কুল পার হতে পারেনি এবং ১৫ শতাংশ বন্দির কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না।

এতে বলা হয়েছে, ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত গত ৩১ বছরে হত্যা ও সন্ত্রাসবিরোধী অপরাধের মামলায় দণ্ডিত ১০১ জন আসামির ফাঁসি (মৃত্যুদণ্ড) কার্যকর হয়েছে।

এর মধ্যে ১৯৯১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ১১ জন এবং ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দেশের ৫৭ জন ও ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৩৩ জন বন্দির মৃত্যুদণ্ড দেশের বিভিন্ন কারাগারে কার্যকর হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন কারাগারে আরও এক হাজার ৬৫০ আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় রয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনের ওপর এদিন রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগ এক ভার্চুয়াল সভার আয়োজন করে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি বছর বেশ কয়েকটি ফাঁসি কার্যকর করা হয় এবং শতাব্দীর শুরু থেকেই এ সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এছাড়া এসব অপরাধ সংঘটনের সময় ৫৪ শতাংশ অপরাধী বিবাহিত ছিলেন এবং ৩৩ শতাংশ বন্দির সন্তান ছিল। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি আসামিদের মধ্যে পুরুষ ৯৭ শতাংশ, যা বৈশ্বিক প্রবণতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এর মধ্যে একজন নারী বন্দি আসামি থাকলেও হাইকোর্ট তার শাস্তি নিশ্চিত করেননি। ৯৫ শতাংশ বন্দি হত্যার দায়ে এবং ৫ শতাংশ বন্দির শাস্তি হয়েছিল সন্ত্রাসের দায়ে। বেশিরভাগ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি স্বল্পশিক্ষিত।

গবেষণায় আরও বলা হয়, প্রতিরক্ষা বাহিনী সংক্রান্ত আইন এবং একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য প্রণীত আন্তর্জাতিক অপরাধ সম্পর্কিত আইন ব্যতীত বাংলাদেশে ৩৩ ধরনের অপরাধের শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে যাঁদের সাজা হয়েছে বা কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায় আছে, তাঁদের বেশির ভাগ গরিব ও শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত। তিনি বলেন, শিক্ষার দিকে দৃষ্টি দেওয়ার পাশাপাশি আইনের সংস্কার প্রয়োজন। মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে আরও বেশি গবেষণা, আলোচনা ও পর্যালোচনা হওয়া দরকার।


সর্বশেষ সংবাদ