একই ব্যাচে বিসিএস ক্যাডার হয়েছিলেন ইউএনও ওয়াহিদা ও তার স্বামী
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০২:৩১ PM , আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৬:৪৮ PM
ওয়াহিদা খানম। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। আহত এই কর্মকর্তার ওপর হামলার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় থামছে না। প্রশাসন ক্যাডার সংশ্লিস্ট সহকর্মী তো বটেই, স্ট্যাটাস দিচ্ছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অনেকেই। হামলার ঘটনায় ইতোমধ্যেই সন্দেহভাজন দুজনকে আটক করা হয়েছে।
কিন্তু কেন এই হামলা? বিষয়টি খুঁজতে পুলিশ-র্যাবসহ একাধিক সংস্থা তদন্তে নেমেছে। পূর্বশত্রুতা, কারও সঙ্গে বিরোধ, ব্যক্তিগত ইস্যু, স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ষড়যন্ত্র, চুরি-ডাকাতি নাকি অন্য কোনো কারণে এ ঘটনা ঘটেছে- তা বের করতে চলছে নানা তথ্য-উপাত্ত বিশ্নেষণ।
পরিবার ও বন্ধু-মহল সূত্রে জানা গেছে, ছোটবেলা থেকে প্রচণ্ড মেধাবী ছিলেন ওয়াহিদা। প্রত্যাশিত ফলও পেয়েছেন জীবনের সব স্তরে। জানা যায়, উপজেলার সর্বামঙ্গলা হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন ওয়াহিদা। পরবর্তীতে এইচএসসির গণ্ডি পেরিয়ে ২০০২-০৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলা বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ওয়াহিদা।
তথ্যমতে, ৩১তম বিসিএসের মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারভুক্ত হন ওয়াহিদা। তার স্বামী মেজবাউল হোসেনও একই ব্যাচ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে তিনি রংপুরের পীরগঞ্জে দায়িত্ব পালন করছে। তাদের চার বছরের এক ছেলে রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওয়াহিদা খানমের বাবার বাড়ি নওগাঁর মহাদেবপুরে। তবে আদিবাড়ি রাজশাহীর বাঘমারা উপজেলার গণিপুর ইউনিয়নে। বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখ মহাদেবপুর উপজেলা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অফিসে চাকরি করতেন। সে সুবাদে সেখানেই ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন তারা। ওয়াহিদা ছাড়াও ওমর আলী শেখের আরো চার সন্তান রয়েছে; এদের মধ্যে তৃতীয় সন্তান ওয়াহিদা।
ব্যক্তিজীবনে ওয়াহিদা সবার সঙ্গে হাসিমাখা মুখে কথা বলতেন। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা জানা যায়, কারো ক্ষতি দেখতে পারতেন না ওয়াহিদা। যেখানেই অন্যায় দেখেছেন, সাধ্যমতো সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছেন, প্রতিবাদ করেছেন। এমনকি করোনাকালে তার ভূমিকা ছিল সত্যিই প্রশংসনীয়।
জয়নুল আবেদিন নামে একজন লিখেছেন, ‘দিনাজপুরে এডিসি হিসেবে কাজ করেছি। ছোট্ট বোনটার সঙ্গে অনেক স্মৃতি। কোন এক সময় ১৩ জন ইউ এন ও এর মধ্যে একমাত্র লেডি অফিসার ছিল প্রিয় ওয়াহিদা। সাতভাই চম্পার মতো ডিসি স্যারসহ আমরা বলতাম ছোট্ট বোনটাকে তোমরা দেখে রাখো। আমরা দুঃখিত, লজ্জিত তোমাকে দেখে রাখতে পারলাম না। তুমি আমাদের ক্ষমা করো। তার বাসায় বেশ কয়েকবার গিয়েছে, অনেক স্মৃতি। মহান আল্লাহ উত্তম হেফাজতকারী। দয়াময় প্রভু প্রিয় বোনটাকে দ্রুত পুরোপুরি সুস্থতা দান করুন, আমীন।’
ওয়াহিদা খানমের ব্যাচম্যাটরাও ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন। ৩১তম বিসিএস ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আমিনুর রহমান বলেন, আমরা এ ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত। ঘটনায় যারাই জড়িত তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে আর এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ওয়াহিদার দ্রুত সুস্থতাও কামনা করেন তারা।
অবস্থার উন্নতি: এদিকে আহত ওয়াহিদা খানমের অস্ত্রোপচারের পর জ্ঞান ফিরেছে। তিনি কথাও বলেছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। শুক্রবার আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসক জাহেদ হোসেন বলেন, অস্ত্রোপচারের সময় ওয়াহিদা খানমের মাথায় ৯টি আঘাতের ক্ষত দেখা গেছে। যে হাড়টি ভেঙে ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল, তা বের করা হয়েছে। রাত দেড়টার দিকে জ্ঞান ফেরে তাঁর, কথাও বলেন। তবে তাঁর শরীরের ডান পাশ অবশ। এটি ঠিক হতে সময় লাগতে পারে বলে তিনি জানান।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ওয়াহিদা খানমের অস্ত্রোপচার হয়। এতে অংশ নেন ছয়জন চিকিৎসক।