“চাকরির অপেক্ষায় সন্তান নিতে পারছেন না আড়াই হাজার নারী”

  © ফাইল ফটো

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) নিয়োগের অন্যতম শর্ত হলো চাকরিতে যোগদানের সময় কেউ গর্ভবতী থাকতে পারবেন না এবং কারও সন্তানের বয়স তিন বছরের কম হতে পারবে না। আর এই কারণে প্রায় আড়াই হাজার চাকরি প্রত্যাশি নারী গত কয়েক বছর ধরে সন্তান নিতে পারছেন না।

চাকরির জন্য নির্বাচিত বিবাহিত নারীরা জানিয়েছেন, যেকোনো সময় নিয়োগ দেওয়া হতে পারে সেজন্য তারা সন্তান ধারণ করতে পারছেন না। মূলত নিয়োগপত্রের ফাঁদে আটকা পড়ে গেছে তাদের মাতৃত্বের স্বপ্ন। বিষয়টি অমানবিক বলেও জানিয়েছেন তারা।

অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ২২৪ জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) পদে প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়নের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। পরে পদের সংখ্যা বাড়িয়ে ৭৯৭টি করা হয়। আবেদনের শেষ তারিখ ছিল ২২ অক্টোবর, ২০১৭। নূন্যতম মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী দুই লাখ ৫৪ হাজার ৫০৩ নারী আবেদন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে তাদের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। একটি পদের বিপরীতে তিনজনকে মনোনীত রাখার হিসাবে সর্বোচ্চ নম্বরধারীদের মধ্য থেকে দুই হাজার ৫১০ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ২০১৯ সালের ৫ মে থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষাও নেওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ ৭৯৭ জনের তালিকা প্রকাশ করেনি অধিদপ্তর।

এ বিষয়ে এফডব্লিউভি পদে নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (পার্সোনেল) ইফতেখার রহমান বলেন, নিয়োগটা আগেই শেষ করার কথা ছিল; কিন্তু নানা কারণে হয়নি। সর্বশেষ দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর আগেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে কভিড-১৯ চলে এলো। এ জন্য নিয়োগপত্র ইস্যুর বিষয়টি আবার থেমে গেছে। তবে শিগগিরই এটা সম্পন্ন হতে পারে।

ভুক্তভোগী নারীরা জানিয়েছেন, সব পরীক্ষা সম্পন্নকারীদের মধ্যে বর্তমানে কারও বয়স ২২ বছরের কম নয়। দু-একজন ছাড়া প্র্রায় সবাই বিবাহিত। দু-একজন হয়তো আগেই সন্তান নিতে পেরেছিলেন। কিন্তু বেশিরভাগই চাকরির শর্তের কারণে আর সন্তান নিতে পারছেন না। কারণ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ১২ নম্বর শর্তে উল্লেখ রয়েছে, এই চাকরিতে যোগদানের সময় কেউ গর্ভবতী থাকতে পারবেন না। তাহলে তার মনোনয়ন বাতিল বলে গণ্য হবে। আর তিন বছরের কম বয়সী কোনো সন্তানও থাকতে পারবে না। যোগদানের পূর্বে সিভিল সার্জন কর্তৃক এ-সংক্রান্ত সনদপত্র দাখিল করতে হবে।

মৌখিক পরীক্ষা দেওয়া একাধিক নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রত্যেকেই ধারণা করছেন তিনি চূড়ান্তভাবে মনোনীত হবেন। আর মনোনীত হলে যে কোনো মুহূর্তে তাকে চাকরিতে যোগদান করতে হবে। যোগদানের পরপরই তাকে ১৮ মাসের প্রশিক্ষণে যেতে হবে। এ জন্য তারা সন্তান ধারণ করতে পারছেন না। মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রায় সবাই এ রকম সংকটে আছেন।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সচিব আলী নূর গণমাধ্যমকে বলেন, শর্ত মেনেই সবাই আবেদন করেছিলেন। এই চাকরির ক্ষেত্রে এরকম শর্ত থাকা খুবই প্রয়োজন। সময়মতো নিয়োগ হয়ে গেলে সমস্যা ছিল না। কিন্তু পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর কেন বারবার সময়টা পেছাচ্ছে, তা তিনি বুঝতে পারছেন না। দ্রুতই যাতে নিয়োগ সম্পন্ন হয়, সে ব্যাপারে তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।


সর্বশেষ সংবাদ