যারা নির্বাচন বিলম্বের পক্ষে ছিল তারা গণতন্ত্রের বিপক্ষের শিবির: সালাহ উদ্দিন আহমদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ  © টিডিসি ফোটো

'যারা নির্বাচন বিলম্বের পক্ষে ছিলো তারা গণতন্ত্রের বিপক্ষের শিবির’ বলে মন্তব্য করেছেন  বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বিএনপির উদ্যোগে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে তিনি এই মন্তব্য করেন। ফার্মগেট কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ৭দিনব্যাপী এ কর্মসূচিতে সারাদেশ থেকে ছাত্রদলের নেতারা অংশ নিচ্ছেন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ  বলেন, গণতান্ত্রিক উত্তরণের একটি সফল ঘোষণা গতকালকে হয়েছে। যেটাকে আমরা নির্বাচনী তফসিল বলছি। এই তফসিল ঘোষণায় অনেককে ভারাক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু স্বাগত জানাতে বাধ্য হয়েছে। আমরা স্বাগত জানিয়েছি, সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছি। আমরা বলেছি, এজন্যই গণঅভ্যুত্থানের যত প্রত্যাশা তার মধ্যে প্রধান ও প্রাথমিক প্রত্যাশা ছিল জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, ভোটাধিকার প্রয়োগ করা, এই তফসিল ঘোষণা করা।কেউ কেউ বলেছে নো পিআর, নো ইলেকশন, কেউ কেউ বলেছে আগে স্থানীয় সরকার ইলেকশন না হলে নো ইলেকশন। আর কেউ কেউ বলেছে একই দিনে গণভোট আর সংসদ নির্বাচন হলে আমরা মানি না।  কেউ কেউ বলেছে  ২০২৯ সালের দিকে নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করেন। এরা সবাই ….আমি কারো নাম নিতে চাই না…গণতন্ত্রের বিপক্ষের শিবির। তারা নিজেদের মত করে গণতন্ত্র চায়, তাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞা আলাদা।

সালাহউদ্দিন বলেন, আমাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞা, বিএনপির গণতন্ত্রের সংজ্ঞা হচ্ছে গণমানুষের গণতান্ত্রিক সংজ্ঞা।শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সকল মানুষকে নিয়ে বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদের পরিচয়ে, এদেশের সকল শ্রেণী, পেশা, ধর্ম, বর্ণ, সংস্কৃতি, ভাষা সব মানুষের সমন্বয়ে…. বিএনপি একটা সমন্বয়ের রাজনীতির পাঠশালা। বিএনপি একমাত্র দল সকল মানুষ এই বিএনপির পতাকাতলে স্থান নিতে পারবে, আশ্রয় নিতে পারবে। এই সমন্বয়ের রাজনীতি আমাদেরকে করতে হবে। আমরা কখনো ধর্মের নামে রাজনীতিতে বিভক্তি আনতে চাই না, করবো না।আমরা ধর্ম, বর্ণ এবং বিভিন্ন ভাষা বা সে সংস্কৃতির নামে আমরা কখনো বিভাজন জাতিতে সৃষ্টি করতে চাই না। সকল মানুষেরই সাংবিধানিক পরিচয় হচ্ছে নাগরিক বা সিটিজেন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে পরিচিত হইবে।

সালাহ উদ্দিন বলেন, আমরা এই সুখের দিনে একটি বিষয় প্রায়ই ভুলে যাচ্ছি অতীতের বেদনাবিদুর গণতান্ত্রিক সংগ্রামের কথা। আমরা ইদানিং ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের কুকীর্তির কোন কথাই আমাদের বক্তব্য বিবৃতিতে বলছি না। একটি দল আওয়ামী লীগের ভোট প্রাপ্তির জন্য আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করে না। আমাদের গ্রামের ভাষায় কথা বলে যে, ‘ভাসুরের নাম মুখে নেয়া যায় না’। এখন সেই দলটি আওয়ামী লীগের ভোট টানার জন্য তাদের যে ভূমিকা সেটা জনগণের সামনে উন্মোচন করেছে।

তিনি বলেন, আমরা এই দেশের রক্তাত ইতিহাসের কথা কখনো যেন ভুলে না যাই, আওয়ামী লীগের দুর্নীতি দেশকে বিক্রি করে দেয়ার অর্থপাচারের কথা যেন আমরা ভুলে না যাই, এদেশ থেকে গণতন্ত্র বিলুপ্ত করে দেয়ার ইতিহাসকে যেন আমরা ভুলে না যাই। যারা নিজের দেশের নাগরিককে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যা করেছে, নারী পশুর শিশু নির্বিশেষে শত সহস্র হত্যা করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে… এই ইতিহাস যেন আমরা ভুলে না যাই।

যারা গাড়ির চাকায় পৃষ্ঠ করে আমার ছাত্র বন্ধু ও আমাদের গণ মানুষকে পৃষ্ঠ করেছে সেই কথা যেন আমরা কখনো ভুলে না যাই। আমরা যদি গণতান্ত্রিক সংগ্রামের কথা ভুলে যাই আওয়ামী লীগের গুম, খুন, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন, মামলা, হামলার কথা ভুলে যাই তাহলে গণতন্ত্র  আহত হবে।

সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, অধ্যাপক দেবপ্রিয় ভট্টাচারযের ‘হোয়াইট পেপারস অন স্টেট অফ দি বাংলাদেশ ইকোনমি’  রিপোর্ট জনগণের সামনে সহজ ভাষায় উপস্থাপন করতে হবে। সেখানে বলছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যে, পাবলিক ফিনান্সের মিস ইউজ হয়েছে, কোথাও ট্যাক্স এক্সামশন দিয়ে, কোথাও অন্য সুযোগ সুযোগ সুবিধা দিয়ে যে একটা পুউর অর্থনৈতিক পরিক্রমা আওমী লীগ চালিয়েছে তার মধ্য দিয়ে যেই তসরুপ হয়েছে অপচয় হয়েছে সেটা দিয়ে বাংলাদেশের দুইটা শিক্ষা বাজেট করা যায়, তিনটা স্বাস্থ্য বাজেট করা যায়।  এটা খুব সহজ কথায় বলতে পারবে। রিপোর্টে বলেছে ব্যাংকিং এবং নন ব্যাংকিং ফিনান্সিয়াল সেক্টর থেকে যে লুটপাট হয়েছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় যে ঋণ দেয়া হয়েছে, যেটা তসরুপ হয়েছে, সেটা দিয়ে ২৪টা পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত এবং এই মেট্রো রেলের মত ১৪  টা মেট্রো সিস্টেম নির্মাণ করা যেত। যে পরিমাণ বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার হয়েছে ব্যাংকিং লুটপাটের মধ্য দিয়ে। সেটা বিলিয়ন ডলারে না বলে অংকে ২৯  লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকা শুধু বিদেশে পাঁচার হয়েছে…. একথাগুলো জনগণকে বলতে হবে। এভাবে একটা দেশকে অর্থনৈতিকভাবে শেষ  করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ, গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছে সাংবিধানিতভাবে।

‘মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে’ সালাহ উদ্দিন বলেন, যাদের ইতিহাস হচ্ছে সবসময় বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে, যাদের ইতিহাস হচ্ছে ১৯৪৭ সাল থেকে ’৭১  পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে তাদের কথাও আমাদেরকে বলতে হবে।  যারা এনিয়ে বিনিয়ে বলছে যে, তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন তা আমরা মাঝে মধ্যে জিজ্ঞেস করি সেই মুক্তিযুদ্ধটা কি পাকিস্তানের পক্ষে ছিল ? কিছুদিন পরে তারা হয়ত বলবে তারাই একমাত্র মুক্তিযুদ্ধ করেছিল আমরা করি নাই। এরকম অনেক বক্তব্য আপনারা ভোটের ময়দানে শুনতে পাবেন।

সালাহ উদ্দিন বলেন,  বাংলাদেশের জনগণ অনেক সচেতন। এখন আর ধর্মের বিড়ি বিক্রি করে বাংলাদেশের জনগণের সামনে ভোট চাওয়া যাবে না। তারপরও আমাদেরকে মাঠে-ময়দানে আমাদের পরিকল্পনা নিয়ে যেতে হবে। আমরা জনগণের জন্য কি করতে চাই?  জনগণের কাছে আমরা ভোট চাইবো।  তো জনগণ তো আমাদের কাছে কিছু চাইবে।  আমরা বলব, আপনারা রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবেন, গণতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবেন, ঐক্যবদ্ধ থাকবেন আমরা রাষ্ট্রবিনির্মাণের জন্য, প্রকৃত গণতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য, রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের জন্য, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য এই কর্মসূচিগুলো আমরা এনেছি এগুলো আমাদের জনগণের মুক্তির সনদ হিসেবে আমরা উপস্থাপন করছি ।

‘গণঅভ্যুত্থান ৩৬ দিনের নয়’ মন্তব্য করে সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, শুধুমাত্র  ৩৬ দিনের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফসল নয় ছাত্র গণঅভ্যুত্থান’২৪ । ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই দীর্ঘ স্বৈরাচার বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পথ পরিক্রমায় বহু রক্তের সিঁড়ি আমাদেরকে নির্মাণ করতে হয়েছে, রক্ত দিতে হয়েছে, শত সহস্র জীবন দিতে হয়েছে। এই সিড়িগুলো মাড়িয়ে আমরা ’২৪ সালের ৫ আগস্টের সকাল বেলায় উন্নীত হয়েছিলাম। যেমন কবিতা আছে, মুক্তির মন্দিরে সুপানো তুলে, কত প্রাণ হলো বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে… সেই বন্ধুরা স্বর্গগত। সেখান থেকে তারা শুনে আমাদের এই কন্ঠস্বর যে, স্বর্গ থেকে প্রিয় মাতৃভূমিকে গঠন করতে গেলে শুধুমাত্র অপরিকল্পিত এবং আবেগী ধর্মীয় মিক্সচার মিশ্রিত বড়িকা নিয়ে আমরা নির্বাচনে যাব না। আমরা যাব সুষ্ঠ পরিকল্পনা নিয়ে।

ফ্যামিলি কার্ড,কৃষক কার্ড, স্বাস্থ্য কার্ড, শিক্ষা, বেকার সমস্যা সমাধানসহ ৮টি বিষয়গুলো জনগণের কাছে সহজভাষায় তুলে ধরার জন্য ছাত্র দলের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান সালাহ উদ্দিন আহমেদ।

জনগণের দ্বারগোড়ায় বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে যেতে হবে উল্লেখ করে সালাহ উদ্দিন বলেন, তখন জনগন বুঝবে বাংলাদেশের জনগনের দলের নাম বিএনপি। তখন জনগণ বুঝবে গণতন্ত্রের বিকল্প নাম বিএনপি। বাংলাদেশের মুক্তির সনদ মুক্তির মার্কা  ধানের শীষ। শুধুমাত্র ভোট চাইবেন এই কাগজগুলো সাথে নিয়ে যাবেন এবং মার্কাতেও দিবেন, প্রার্থীর প্রতীকও দিবেন। যখন ক্যাম্পিং এ যাবে তখন তো সেটা যাবেই কিন্তু এটা হচ্ছে বিফোর ক্যাম্পিং। এটা আপনাদের ভালোভাবে করতে হবে।

দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্ব ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খানের সঞ্চালনায় ছাত্র দলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরও বক্তব্য রাখেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence