‘পদত্যাগ করবেন কিনা’—যা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।  © টিডিসি ফটো

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিতর্কের মুখে পড়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী মনে করলে দায়িত্ব থেকে সরে যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। শনিবার (৩ আগস্ট) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমনটা জানান।

সম্প্রতি তারা (আন্দোলনকারীরা) আপনিসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেছেন। পরিস্থিতি যে পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে তাতে করে আপনারা চিন্তিত, জনগণও চিন্তিত। যে জায়গায় পরিস্থিতি পৌঁছেছে তাতে করে আপনিসহ অন্যদের সেই সেক্রিফাইস করার সময় আছে কি না যে, মন্ত্রিত্ব থেকে আপনারা সরে দাঁড়াবেন– একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রয়োজন হলে যদি এরকম কোনো সিচুয়েশন আসে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন... আমরা সবসময় দেশের জন্য কাজ করি, আমরা সেটা (পদত্যাগ) করব যদি প্রধানমন্ত্রী মনে করেন।’

এসময় ঢাকা জেলা ও মহানগর, গাজীপুর ও নরসিংদীতে কারফিউ অব্যাহত থাকবে বলে জানান আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলাম ও বিএনপি সবসময় ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত ছিল। শুরু থেকেই তারা দেশকে অকার্যকর করতে চেয়েছিল। যে কারণে ছাত্রদের কাছে আহ্বান, তারা যাতে লেখাপড়ায় ফিরে যান। কারণ তাদের সব দাবি পূরণ করা হয়েছে। এরপরও যদি তাদের কোনো দাবি থাকে তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দরজা সবসময় খোলা আছে।

আরও পড়ুন: আনুষ্ঠানিকভাবে এক দফা দাবি ঘোষণা

মন্ত্রী বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলে দিই, আমাদের শোকের মাস চলছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাস। মাসটিকে শোকের মাস হিসেবে পালন করি। বঙ্গবন্ধু শাহাদতবরণ করার পর থেকে এটা চলছে।

তার দাবি, যেহেতু শিক্ষার্থীদের সব দাবি পূরণ হয়েছে, তাদের এই অসহযোগ আন্দোলনের দাবি তুলে নেওয়া উচিত। তার মতে, দেশবিরোধী বিএনপি ও জামায়াতের ফাঁদে পা দিয়ে আন্দোলনকারীরা এখন আন্দোলনকে অন্য জায়াগায় নিয়ে যাচ্ছেন।

এ অবস্থায় আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দরজা আন্দোলনকারীদের জন্য খোলা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আরও কোনো দাবি থাকলে সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আন্দোলনকারীরা আলোচনা করতে পারেন।

এর আগে বিকেলে শহীদ মিনার থেকে ছাত্র-জনতার গণমিছিল থেকে এক দফা ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা।  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগ।

আরও পড়ুন: গণজোয়ারে উত্তাল শহীদ মিনার, তিল ধারণের ঠাঁই নেই

এরপর এক দফা নিয়ে একটি ভিডিও বার্তা প্রদান করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার যে গণ বিস্ফোরণে মানুষ এক দফার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। 

যতদিন পর্যন্ত আমাদের এই এক দফা বাস্তবায়ন না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত আপনারা যেসব জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো পালন করবেন। বিজয় নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে—যুক্ত করেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশে এখন পর্যন্ত ২১৬ জনেরও বেশি আন্দোলনকারী এবং শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের দাবি—এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনকারী ও সাধারণ মানুষ আহত হয়েছে।

আরও পড়ুন: সেনাবাহিনী জনগণের পাশে আছে ও থাকবে: সেনাপ্রধান

পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্য ও সরকার সমর্থক ছাত্রলীগ এবং তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের হামলায় এসব আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলেও দাবি আন্দোলনকারীদের।

এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথার বাতিল চেয়ে আন্দোলনে নামে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর আন্দোলন তীব্র হতে থাকলে মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকার সমর্থকরা। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং সহিংসতার ঘটনা ঘটে। 

পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে মামলা হয়। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে।


সর্বশেষ সংবাদ