হজ শেষে হাজীদের করণীয়

  © সংগৃহীত

ইসলাম উদযাপন-কেন্দ্রিক ও অনুষ্ঠানসর্বস্ব ধর্ম নয়। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ও কোরবানিসহ ইসলামের প্রতিটি ইবাদতের বাহ্যিক নিয়ম-বিধান ও আচরণ-শৈলী রয়েছে।

পাশাপাশি প্রতিটি ইবাদত ও আমলেন অন্তর্নিহিত দর্শনও রয়েছে। বিত্তবান, সচ্ছল ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের জন্য জীবনে একবার হজ করা ফরজ।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও প্রান্ত থেকে প্রতি বছর প্রায় ২৫ লাখ মানুষ হজ পালন করেন। তাদের এই আমল—যাত্রা কিংবা ভ্রমণেই শেষ হয়ে যায় না। 

পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, হজের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো আখিরাতের পাথেয় সঞ্চয় করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নির্দিষ্ট মাসে (শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজে) হজ অনুষ্ঠিত হয়।

অতএব, এই মাসগুলোতে যার ওপর হজ ফরজ হয়, সে যেন (হজে গিয়ে) স্ত্রী সম্ভোগ, অনাচার ও ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত না হয়। তোমরা যেসব সৎ কাজ করো, আল্লাহ তা জানেন। আর (পরকালের) পাথেয় সংগ্রহ করো, নিশ্চয়ই তাকওয়া বা আল্লাহভীতি-ই হলো শ্রেষ্ঠ পাথেয়। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৯৭)

হাজিরা হজের মাধ্যমে তাওহিদ তথা আল্লাহর নিরঙ্কুশ একত্ববাদের স্বীকৃতি দেয়। এবং এরই আলোকে জীবন প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হয়। কাজেই হজ থেকে তাওহিদের দীক্ষা নিয়ে ফেরাটা গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ও তার রাসুলের পক্ষ থেকে মহান হজের দিনে মানুষের প্রতি (বিশেষ) বার্তা হলো, আল্লাহর সঙ্গে অংশীবাদীদের কোনো সম্পর্ক নেই এবং তার রাসুলের সঙ্গেও নেই। ’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ৩)

হজ থেকে ফিরে এসে নিকটস্থ মসজিদে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নাত। হজরত কাব বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কোনো সফর থেকে ফিরে আসতেন, তখন মসজিদে (নফল) নামাজ আদায় করতেন। ’ (বুখারি শরিফ) হজ থেকে ফিরে শুকরিয়াস্বরূপ গরিব-মিসকিন ও আত্মীয়স্বজনকে খাবারের দাওয়াত দেওয়া বৈধ। ইসলামী ফিকহের পরিভাষায় সে খাবারকে ‘নকিয়াহ’ বলা হয়।

জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘রাসুল (সা.) যখন মদিনায় এসেছেন, তখন একটি গরু জবাইয়ের নির্দেশ দেন। জবাইয়ের পর সাহাবিরা তা থেকে আহার করেছেন। ’ (বুখারি) তবে অহংকার, লোকদেখানো ও বিশেষ উদ্দেশ্য সামনে রেখে এমন দাওয়াতের ব্যবস্থা করা ইসলাম অনুমোদন করে না। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া, খণ্ড: ৭, পৃষ্ঠা: ১৮৫)

হজ থেকে দেশে ফেরার পর ঘরে পৌঁছে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যখন তুমি ঘর থেকে বের হবে, তখন দুই রাকাত নামাজ পড়বে। সেই নামাজ তোমাকে ঘরের বাইরের বিপদাপদ থেকে হেফাজত করবে। আর যখন ঘরে ফিরবে, তখনো দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে। সেই নামাজ তোমাকে ঘরের অভ্যন্তরীণ বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করবে। ’ (মুসনাদে বাজ্জার)

যারা হজ করে আসছেন, তাদের অভ্যর্থনা ও শুভেচ্ছা জানানো, তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, মুসাফাহ ও কোলাকুলি করা এবং তাদের দিয়ে দোয়া করানো মুস্তাহাব। কিন্তু ফুলের মালা দেওয়া, তাদের সম্মানার্থে স্লোগান ইত্যাদি দেওয়া সীমা লঙ্ঘনের অন্তর্ভুক্ত। এসব কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। (আপকে মাসায়েল আওর ইনকি হল, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ১৬২)


সর্বশেষ সংবাদ