আমাদের আওয়াজ সংসদেও শোনা যাচ্ছে: আইইউবি শিক্ষক সরোয়ার

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও আইইউবি শিক্ষক অধ্যাপক সরোয়ার হোসেন
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও আইইউবি শিক্ষক অধ্যাপক সরোয়ার হোসেন  © ফাইল ছবি

জাতীয় সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ‘শরীফার গল্প’ থেকে দুটি লাইন প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তার এমন পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন এ ঘটনায় আলোচনায় আসা ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির (আইইউবি) শিক্ষক অধ্যাপক ড. সরোয়ার হোসেন।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য চুন্নুর পদক্ষেপের প্রশংসা করে অধ্যাপক সরোয়ার নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘আলহামদুলিল্লাহ, মাননীয় এমপি সাহেব বেশ ভালোভাবে বিষয়টি তুলে ধরেছেন। বিশ্বে এই মতবাদ নিয়ে যে তোলপাড় হচ্ছে সে বিষয়েও আলোকপাত করেছেন। আশা করি সেই খসড়া আইনও পাস করা ঝুলে যাবে। উনার প্রতি শ্রদ্ধা রইল।’’

এর আগে গতকাল রোববার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ট্রান্সজেন্ডার ধারণাটি ইসলাম ধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের শরীফার গল্পের মাত্র দুটি লাইন প্রত্যাহার করে নিলে আর কোনো বিতর্ক থাকে না।

বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। মাগরিবের নামাজের বিরতির পর অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ চুন্নু বলেন, “ইদানিং একটা বিষয় পত্রপত্রিকা, সোশাল মিডিয়ায় সবখানে আলোচিত হচ্ছে। সে আলোচনায় দেখা যায় অনেক সময় ভুল আলোচনা হয়, মানুষের অনুভূতিতে আঘাত আসছে। তাতে ধূম্রজাল সৃষ্টি হচ্ছে। সেটা হেল সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের একটি গল্প- শরীফার গল্প।”

গল্পটি পড়ে শুনিয়ে ট্রান্সজেন্ডার, তৃতীয় লিঙ্গ এবং হিজড়া- এরমধ্যে পার্থক্য নিজের মত করে তুলে ধরেন এই সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, নিজেকে নিজের জন্মগত লিঙ্গ বাদে অন্য কোনো লিঙ্গ মনে করাটাই ট্রান্সজেন্ডার। এ বিষয়টা পুরোপুরি মেন্টাল। হিজড়া যারা তারা হল থার্ড জেন্ডার, সে বিষয়টা জন্মগত।

তিনি বলেন, ‘‘এটা মানসিক, শারিরীক উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এরাই থার্ড জেন্ডার অথবা তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত। ট্রান্সজেন্ডার একটি শ্রেণির মতবাদ, এটা প্রবর্তিত হয়েছে গতানুগতি, সামাজিক ও ধর্মকে ধারণা অর্থাৎ পরিবার, ধর্মকে ভেঙে সামাজিক একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে।”

বিরোধী দলীয় চিফ হুইপের ভাষ্য, ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ অনুযায়ী একজন ব্যক্তি যে কোনো সময় যে কোনো লিঙ্গ হসেবে পরিচয় দিতে পারবে। আল্লাহ আমাদের কি লিঙ্গ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন সেটা তাদের কাছে কোনো বিষয়ই না। তবে পশ্চিমাদের অনেকেই এ মতবাদের বিরোধী।

“টান্সজেন্ডার ধারণাটি থার্ড জেন্ডার হিসেবে চালিয়ে আমাদের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশ্য কোনোক্রমেই ভালো বলে আমরা মনে করছি না।”

‘শরীফার গল্প’ নামে জনসচেতনতামূলক ওই পাঠ সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে জায়গা পেয়েছে ‘মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা’ বিষয়ে ধারণা দেওয়ার জন্য। বইয়ের ৩৯ ও ৪০ নম্বর পৃষ্ঠায় অন্তর্ভুক্ত ওই পাঠে শিক্ষার্থীরা পড়বে নারী-পুরুষের বাইরে ‘তৃতীয় লিঙ্গের’ মানুষ বা ‘হিজড়াদের’ জীবনের কথা। 

পাঠ্যপুস্তকটির পাঠের এ অংশ নিয়েই গত দুই সপ্তাহ ধরে তুমুল বিতর্ক চলছে দেশজুড়ে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে আগে থেকেই বিভক্তরা এ প্রসঙ্গ ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আরও গরম করে তুলেছেন।

এ বিতর্কের সূচনা করেছেন আসিফ মাহতাব, যিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। রাজধানীতে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে এক আলোচনায় ‘সমকামিতার উসকানির’ অভিযোগ তুলে তিনি পাঠ্যবইয়ের ওই অংশের পাতা ছিঁড়ে ফেলেন। সেই ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

বইটি সম্পাদনার সঙ্গে যুক্তরা বলেছেন, সেখানে ‘হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের’ মানুষদের কথা বলা হয়েছে। আগে সেখানে ট্রান্সজেন্ডার শব্দটি থাকলেও নতুন বইয়ে ওই শব্দটিই নেই, সেখানে আছে থার্ড জেন্ডার। সুতরাং এ পাঠকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে আসিফ মাহতাবের মত চুন্নুও কথা বলছেন ওই ‘ট্রান্সজেন্ডার’ শব্দটিকে ভিত্তি ধরে।


সর্বশেষ সংবাদ