ডিজিটাল আইন বাতিল ও সাংবাদিকের মুক্তি দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮ শিক্ষকের
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৫৫ AM , আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৫৫ AM
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও সাংবাদিকের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮ জন শিক্ষক। সোমবার (৩ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়েছে। এতে তিন দফা দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকেরা।
বিবৃতিতে শিক্ষকেরা বলেছেন, সম্প্রতি দেশে মানবাধিকার এবং মতপ্রকাশের পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক এই বিবৃতি প্রকাশ করছে। নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেছেন সুলতানা জেসমিন। র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধগুলো এখন বিশ্ববাসী জানে এবং একটি পশ্চিমা দেশ এ সংস্থাটির সাবেক ও বর্তমান কর্তাব্যক্তিদের ওপর একটি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এরপরও র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা থেমে থাকছে না। নাগরিকদের বিচারবহির্ভূতভাবে নিপীড়ন চলছেই।
আরো বলা হয়েছে, নিপীড়নমূলক কার্যক্রমে পিছিয়ে নেই আইনপ্রয়োগকারী অন্যান্য সংস্থাও। স্বাধীনতা দিবসে দৈনিক প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনকে ঘিরে রাতের আঁধারে সাদা পোশাকধারী পুলিশেরা ধরে নিয়ে গেছে প্রতিবেদককে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা হয়েছে তার ও পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে। একই আইনে মামলা দেয়া হয়েছে চট্টগ্রামে দৈনিক যুগান্তরের এক সাংবাদিককেও। এ আইন যখন প্রবর্তন করা হয় এবং পরেও সরকারের মুখপাত্ররা বারবার বলেছে, যে এটি সাংবাদিকদের ওপর প্রয়োগ করা হবে না।
কিন্তু এটি সবচেয়ে বেশি যে পেশার মানুষের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে সাংবাদিকতা অন্যতম জানিয়ে তারা বলেন, সাধারণ সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহারকারীদের ওপরও এটি ব্যাপকভাবে প্রয়োগ হয়েছে।সরকার এ আইন প্রবর্তন করেছে জনমানসে ভয় সৃষ্টির জন্য। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসেব অনুযায়ী এ বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ, এ তিন মাসে ৫৬ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন।
শিক্ষকেরা আরও বলেন, বৈশ্বিক প্রেস ফ্রিডম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬২তম। এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সূচকে অবস্থান কেবলই পিছিয়েছে, কখনো এগোয়নি। নিপীড়নমূলক যন্ত্রাদির পাশাপাশি প্রপাগান্ডা মেশিনের অনুষঙ্গগুলোও বরাবরের মতো ব্যবহার করছে। বিশেষত যখন সরকার কিছুটা বিপদে পড়ে, তখন শিক্ষক, সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশাজীবী সমিতি ও সংগঠনগুলো মাঠে নামে পূর্ণ আনুগত্যের সমর্থন নিয়ে। তাদের আনুগত্যের বহর দেখে জনমানসে ওই পেশায় অধিষ্ঠিত সবার ব্যাপারে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরী হচ্ছে।
এ বিষয়ে উদাহরণ দিয়ে শিক্ষকেরা বলেন, একজনের মন্তব্য ও আরেকজনের ছবি দিয়ে যে ফটোকার্ড ছেপেছিল প্রথম আলো, তা সাংবাদিকতার মান ও চর্চা অনুসারে ভুল না হওয়া সত্ত্বেও সাধারণ পাঠকের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে বিবেচনায় কিছুক্ষণের মধ্যেই ফটোকার্ড সরিয়ে নেয় এবং সংশোধিত রিপোর্ট ছাপে। বিক্ষুব্ধ পক্ষ প্রেস কাউন্সিলে না গিয়ে যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছে, তা চরম অগণতান্ত্রিক মানসিকতারেই বহিঃপ্রকাশ।
এরপর এডিটর গিল্ডস, সম্পাদক ফোরাম ইত্যাদি সাংবাদিকদের সংগঠন সরকারের নিবর্তনকে চিহ্নিত না করে, পত্রিকাকেই দায়ী করে। একটি টিভি চ্যানেল অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার নামে পুরো ঘটনাকে বিকৃত করে নতুন করে রিপোর্ট করে, যাকে সাক্ষী মানা হয় মামলার এজাহারে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের এ রকম পদক্ষেপ বিরল এক ঘটনা। এর নিন্দা জানিয়েছেন নেটওয়ার্কের শিক্ষকেরা।
তারা বলেন, এ দলে যোগ দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। নেতৃবৃন্দ তাঁদের বিবৃতিতে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে বেআইনিভাবে একজন সাংবাদিককে গ্রেফতারের বিরুদ্ধে একটা শব্দও উচ্চারণ না করে সরকারের কাণ্ডের পক্ষে নির্জলা তোষামোদী বক্তব্য হাজির করেছে, যা আমাদের চরমভাবে লজ্জিত ও মর্মাহত করেছে। শিক্ষকদের অধিকার আদায় ও নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত হলেও, শিক্ষকদের দাবি-দাওয়ায় তাদের মনোযোগ নেই। কোনো শিক্ষক কোনো হুমকি বা নিপীড়নের শিকার হলেও এই সংগঠনের নেতৃবৃন্দের কোনও সক্রিয়তা দেখা যায় না।
শিক্ষকেরা বলেন, ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নির্যাতন একটা প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা নিয়েছে। কিন্তু সে বিষয়েও শিক্ষক সমিতির কোনো বক্তব্য নেই। শিক্ষক সমিতি কিছু শিক্ষকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গঠনের একটা মাধ্যমে পর্যবসিত হয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি শর্তহীন আনুগত্য প্রকাশের মাধ্যমে তারা নিজের রাজনৈতিক এবং পেশাগত উচ্চাশা পূরণের পথ সুগম করতে চেষ্টা করেন। বিনিময়ে তারা সমাজের কাছে পুরো শিক্ষকতা পেশার মান-মর্যাদাকে ধুলোয় লুটিয়ে দিতে কার্পণ্য করছেন না।
বিবৃতিদাতা শিক্ষকদের তিনদফা দাবির মধ্যে রয়েছে, প্রথম আলো ও যুগান্তরের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে ও প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে; সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর জন্য দায়ী র্যাব সদস্যদের কেবল ’ক্লোজ‘ করার মতো মৃদু শাস্তি দিলে হবে না, তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।
স্বাক্ষরদানকারী শিক্ষক (স্বাক্ষরের সময়ের ক্রমিক অনুযায়ী) :
১
রুশাদ ফরিদী
সহকারী অধ্যাপক
অর্থনীতি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২
কাজী শুসমিন আফসানা
সহযোগী অধ্যাপক
নাট্যকলা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
৩
গাজী মোঃ মাহবুব মুর্শিদ
অধ্যাপক
বাংলা
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
৪
ড. আরিফুজ্জামান রাজীব
সহকারী অধ্যাপক
ইইই
বশেমুরবিপ্রবি
৫
রায়হান রাইন
অধ্যাপক
দর্শন বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৬
আরাফাত রহমান
সহকারী অধ্যাপক
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
৭
প্রিয়াংকা কুন্ডু
প্রভাষক
গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রোফেশনালস
৮
মিম আরাফাত মানব
প্রভাষক
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
৯
কাজলী সেহরীন ইসলাম
সহযোগী অধ্যাপক
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১০
ফাহমিদুল হক
ভিজিটিং অধ্যাপক
সেন্টার ফর এক্সপেরিমেন্টাল হিউম্যানিটিজ
বার্ড কলেজ, যুক্তরাষ্ট্র
১১
মোঃ কামরুল হাসান মামুন
অধ্যাপক
পদার্থবিজ্ঞান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১২
মার্জিয়া রহমান
সহকারী অধ্যাপক
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৩
তাসমিয়াহ তাবাসসুম সাদিয়া
প্রভাষক
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস
১৪
কামাল চৌধুরী
অধ্যাপক
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৫
গীতি আরা নাসরীন
অধ্যাপক
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৬
নির্ণয় ইসলাম
প্রভাষক
স্কুল অব জেনারেল এডুকেশন
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
১৭
আ-আল মামুন
অধ্যাপক
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
১৮
মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান
অধ্যাপক
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৯
আলমগীর হোসেন
সহকারী অধ্যাপক
ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
২০
মোশাহিদা সুলতানা
সহযোগী অধ্যাপক
একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২১
কাজী মারুফুল ইসলাম
অধ্যাপক
উন্নয়ন অধ্যয়ন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২২
নাসির উদ্দিন আহমদ
অধ্যাপক
ইংরেজি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
২৩
পারভীন জলী
অধ্যাপক
ইতিহাস বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
২৪
কাজী মামুন হায়দার
সহযোগী অধ্যাপক
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
২৫
সুবর্ণা মজুমদার
সহকারী অধ্যাপক
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
২৬
মির্জা তাসলিমা সুলতানা
অধ্যাপক
নৃবিজ্ঞান বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
২৭
তাসনীম সিরাজ মাহবুব
সহযোগী অধ্যাপক
ইংরেজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৮
কাজী ফরিদ
অধ্যাপক
গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
২৯
আনু মুহাম্মদ
অধ্যাপক
অর্থনীতি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৩০
রাইসুল সৌরভ
সহকারী অধ্যাপক
আইন
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ)
৩১
মাইদুল ইসলাম
সহযোগী অধ্যাপক
সমাজতত্ত্ব বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
৩২
আসিফ মোহাম্মদ শাহান
সহযোগী অধ্যাপক
উন্নয়ন অধ্যয়ন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩৩
খাদিজা মিতু
অধ্যাপক
নৃবিজ্ঞান বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
৩৪
সামিনা লুৎফা
সহযোগী অধ্যাপক
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩৫
মনিরা শরমিন
সহকারী অধ্যাপক
সাংবাদিকতা এ গণমাধ্যম যোগাযোগ
গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
৩৬
অর্পিতা শামস মিজান
পি এইচ ডি গবেষক
আইন
ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিস্টল ল স্কুল
৩৭
মজিবুর রহমান
সহযোগী অধ্যাপক
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩৮
আর রাজী
সহকারী অধ্যাপক
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
৩৯
সাঈদ ফেরদৌস
অধ্যাপক
নৃবিজ্ঞান
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৪০
স্বপন আদনান
সাবেক প্রফেসরিয়াল রিসার্চ এসোসিয়েট
উন্নয়ন অধ্যয়ন, সোয়াস লন্ডন ইউনিভার্সিটি
৪১
আইনুন নাহার
অধ্যাপক
নৃবিজ্ঞান
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৪২
মাহমুদুল সুমন
অধ্যাপক
নৃবিজ্ঞান
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৪৩
সৌভিক রেজা
অধ্যাপক
বাংলা বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
৪৪
সৌম্য সরকার
সহকারি অধ্যাপক
ইংরেজী
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
৪৫
ড. মো. আমিরুল ইসলাম (কনক)
সহযোগী অধ্যাপক
ফোকলোর
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
৪৬
সুস্মিতা চক্রবর্তী
অধ্যাপক
ফোকলোর
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
৪৭
হাবিব জাকারিয়া
অধ্যাপক
নাট্যকলা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
৪৮
সিউতী সবুর
সহযোগী অধ্যাপক
নৃবিজ্ঞান
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়