যেভাবে এলো ‘নারী দিবস’

  © সংগৃহীত

আজ বিশ্ব নারী দিবস। নারীদের অধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রতিবছর ৮মার্চ আন্তর্জাতিকভাবে এই দিবসটি উদযাপন করা হয়। মার্চ মাসের এই দিনটির আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস।

মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের রাস্তায় নেমেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন। স্তিমিত হয়ে যায় আন্দোলন। এ ঘটনার ৩ বছর পর ১৮৬০ সালে ওই কারাখানার নিপীড়িত মহিলা শ্রমিকরা ‘মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন’ গঠন করেন এবং সাংগঠনিক ভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। যার ধারাবাহিকতায় ১৯০৭ সালে সর্বপ্রথম কয়েকটি দেশের নারীরা ওই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে 

পরের বছরই ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে বিভিন্ন দেশের ১৫০০ নারী একযোগে নিউইয়র্কে মিছিল করে সারা পৃথিবীর নারীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দেয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নারীদের ভোটাধিকার, মজুরিবৈষম্য দূরীকরণসহ নারীর অধিকার নিশ্চিতে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের উদ্যোগে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথমবারের মত নারী সমাবেশ আয়োজন করা হয়।

আরো পড়ুন: উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও চাকরিতে এখনও পিছিয়ে নারীরা

এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে নারী শ্রমিকদের আন্দোলনকে স্মরণ করে প্রতি বৎসর ৮মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয়ঃ ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। 

১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। বিশেষত জার্মানিতে নারী দিবস ব্যাপক সাড়া ফেলে। শহরের পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রামেও নারীরা একত্রিত হয়ে নারী দিবস উদযাপন শুরু করে। সরব হয়ে ওঠে ভোটাধিকার, সম শ্রমমূ্ল্যসহ ভোটাধিকারের বিষয়ে। অতঃপর ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

এরপর থেকে সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি। নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয়ে বিশ্বের সকল দেশে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বাংলাদেশেও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার লাভের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। 

বর্তমানে, বিশ্বের অনেক দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। তন্মধ্যে  আফগানিস্তান,  আর্মেনিয়া, আজারবাইজান বেলারুশ, বুরকিনা, ,কম্বোডিয়া, কিউবা, জর্জিয়া, গিনি, বিসাউ, মাইরিত্রিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজিস্তান, লাওস, মালদোভা, মঙ্গোলিয়া, মন্টেনিগ্রো, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উগান্ডা, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম এবং জাম্বিয়া। এছাড়া, চীন, মেসিডোনিয়া, মাদাগাস্কার, নেপালে শুধুমাত্র নারীরাই সরকারি ছুটির দিনভোগ করেন।