শিক্ষা সামগ্রীর দাম চড়া, ব্যয় সমন্বয়ে অভিভাবকদের কাটছাট

শিক্ষা উপকরণ
শিক্ষা উপকরণ  © সংগৃহীত

মুদ্রাস্ফীতির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশসহ এর প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশে। যার ফলস্বরুপ শতভাগ বা কোন কোন ক্ষেত্রে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে দ্রব্যমূল্যের দাম। জ্বালানি থেকে শুরু করে সব ধরণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের জন্য জনগণ অতিরিক্ত দাম দিতে হচ্ছে। এ তালিকা থেকে বাদ যায়নি শিক্ষার্থীদের জন্য অপরিহার্য বই-খাতা, কলমসহ অন্য সামগ্রীগুলো। আর এসবের অতিরিক্ত দাম সমন্বয়ে অভিভাবকরা খরচের কাটছাট করছে। 

সম্প্রতি বিশ্বে জ্বালানি সংকট দেখা দেয়ায় জ্বালানি সাশ্রয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এর পাশাপাশি বৃদ্ধি করা হয়েছে জ্বালানির দাম। তবে এই দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে। আর তাই খরচ মেলাতে ব্যয় সংকোচন করছেন সকল অভিভাবকরা। আর তাই গৃহশিক্ষক ছেড়ে দিচ্ছেন অনেকেই। আবার কেউ কোচিং সেন্টারে আর পড়াচ্ছে না।

এমনি একজন অভিভাবকের সাথে কথা বললে তিনি জানান, শিক্ষার বিভিন্ন সামগ্রীর দাম বেড়েছে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ। আগে যে খাতা ২০ টাকা করে কেনা হত তা এখন ৪০, ৮০ টাকা, জ্যামিতি বক্স ১৩০টাকা, ২২০ টাকার সাদা কাগজ এখন ৪৮০ টাকা। এমনকি কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টিউশন ফি, ভর্তিসহ অন্যান্য খরচও বাড়ানো হয়েছে। সকল খরচ সমন্বয় করতে না পারায় সন্তানদের দুইটার বদলে এখন একটি টিউশন দিচ্ছেন তারা।

অন্য আরেক অভিভাবক বলেন, টিউটর বাদ না দিয়ে উপায় নেই। রাবার, পেন্সিল, খাতা, কলম সবকিছুর দাম বেড়েছে। আগে যেখানে রিক্সা ভাড়া ১৫ টাকা ছিল এখন তা ৩০-৪০ টাকা। এগুলো যেহেতু কমাতে পারবো না তাই টিউটর ছেড়ে দিয়েছি আর যেখানে সন্তানকে রিক্সায় করে স্কুলে নিয়ে আসতাম সেখানে হাঁটিয়ে নিয়ে আসছি। 

তবে যারা টিউটর তারাও সাধারাণত শিক্ষার্থীই। নিজেদের পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি দুই তিনটি টিউশন করান অনেকেই। অনেকে আবার বেশিও করান। তবে অভিভাবকরা গৃহশিক্ষক নিতে আগ্রহী না হওয়ায় সেসব শিক্ষার্থীরাও কিন্তু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

আরও পড়ুন: জাবির ‘সি’ ইউনিটের দ্বিতীয় মেধাতালিকা প্রকাশ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনিন্দিতা রায় জানান, তার ক্লাস শেষে তিনি দুটি টিউশন করাতেন যা থেকে মাসে তার নয় হাজার টাকা আয় হতো। আর তা দিয়ে তার পড়াশোনার খরচের পাশাপাশি নিজের খরচও চলতো। তবে গত মাসে তার একটি টিউশনি বন্ধ হয়ে গেছে কারণ খরচ সামলাতে হিমশিম খাওয়ায় গৃহশিক্ষক ছেড়ে দিচ্ছেন অভিভাবক।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ ড. সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির কারণে দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক তবে সেটা সহনীয় মাত্রায়। তবে সাধারণ জিনিসের মত শিক্ষা সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি কাম্য নয়। শতভাগ বা দ্বিগুণ দাম বৃদ্ধি করা চরম অপরাধ এ ধরণের অসাধু ব্যবসায়ীদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত।

শিক্ষা সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষা সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির ফলে অল্প আয়ের পরিবারের সন্তানদের পড়াশোনার খরচ বহন করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকার মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের উপবৃত্তির ব্যবস্থা করতে পারে। পাশাপাশি শিক্ষা উপকরণের উপর আরোপিত সকল প্রকারের ভ্যাট এক বছরের জন্য প্রত্যাহার করলে দাম অনেকটাই কমবে। 


সর্বশেষ সংবাদ