করোনা প্রতিরোধে টাকা পয়সা ছাড়াও করা যায় সাহায্য
- ইমরান ইসলাম মামুন
- প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২০, ০২:৩৩ PM , আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৬:২৪ PM
বর্তমান সময়ে নভেল করোনা ভাইরাস বিশ্ব জুড়েই মহামারি আকার ধারণ করেছে। স্তব্ধ হয়ে গেছে পুরো বিশ্ব ব্যবস্থা। ভেঙ্গে পড়ছে অর্থনীতির সচল চাকা। শেয়ার বাজারের উত্থান পতনেও নেই কারো কোনো মাথা ব্যথা। ওয়াশিংটন ডিসি,নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, রোম থেকে লন্ডন হয়ে আমস্টারডাম এরপর টোকিও বলি আর ইসলামাবাদ হয়ে নয়া দিল্লি শুনসান নিরবতা পালন করে বাধ্য হচ্ছে কভিড-১৯ কে স্যালুট জানাতে! ২০২০ কে বরণ করতে আধিপত্যের প্রতাপে যে শহরগুলো সেজেছিলো রঙিন সাজে তা আজ জনমানবশূন্য। নেই কোনো কর্মব্যস্ততা। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে পারমানবিক বোমা বানিয়ে বিশ্বকে শাসন করার প্রতাপ নিয়ে দাঁড়ানো জাতিগুলো তাদের নাগরিকদের পর্যাপ্ত সুবিধা দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
পুজিবাদ সফল অর্থসামাজিক ব্যবস্থায় নুয়ে পড়েছে আমাদের সামাজিক দায়বদ্বতা। আমরা নিজেদের অবস্থান থেকে ভুলে যাচ্ছি নিজেদের দায়িত্ব। ক্ষুদ্রতর স্বার্থকে বড় করে দেখার ফলশ্রুতিতে বৃহত্তর স্বার্থের ঝুলিতে আজ শুধু রাষ্ট্রের বিকল কলকব্জা। সময় এসেছে দেশ ও জাতির স্বার্থে প্রতিক্ষাবদ্ধ হওয়ার। গড়তে হবে মানবতার দেয়াল। আমাদের হাতে সময় এখন খুবই কম। করোনা প্রতিকারে এগিয়ে আসতে হবে দেশের সর্বস্তরের নাগরিকের।
মনের অন্তরালে অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়ানোর চেষ্টা করলেও অর্থের অভাবে সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু টাকা পয়সা ছাড়াও যে সাহায্যের হাত বাড়ানো যায় তা হয়তো অনেকের অজানা। আমরা সামাজিক সচেতনতার দায়িত্ব পালন করতে পারি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটিতে অনেকেই গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছি। সামাজিকভাবে সমবয়সীরা ছোট ছোট টিম করে করোনা ভাইরাসের প্রতিকার, প্রতিরোধ সমন্ধে জানাতে পারি। এক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। রাষ্ট্রের প্রশাসন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা সাধারণ মানুষদের সচেতন করার দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব। বর্তমান সময়ের এই মহামারী পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সরকারের একার পক্ষে কখনো সম্ভব নয়। সরকার ব্যবস্থাকে সকলে মিলে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে।
প্রতিযোগিতার এই মানবসভ্যতায় টনকে টন কার্বন নিঃসরণ করে মাথা মোটা অর্থনীতির দেশগুলোও আজ হুমখির মুখে পড়ছে। ইউরোপের সব থেকে বড় অর্থনীতির দেশ জার্মানি। করোনাভাইরাসের অর্থননৈতিক পরিণতি নিয়ে জার্মানির হেসে প্রদেশের অর্থমন্ত্রীর আত্মহত্যা স্মরণ করিয়ে দেয় এর ভয়াবহতা। সেখানে আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতির হাল ধরতে এগিয়ে আসতে হবে বৃত্তবানদের। আমাদের আশে পাশে যারা খেটে খাওয়া দিনমজুর আছে অন্তত তাদের কাছে সাহায্যের হাত বাড়াতে পারেন। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে ব্যক্তিগতভাবে বিপদে কেউ নয়। দল-মত, ধর্ম-বর্ণ, নির্বিশেষে লড়তে পারলে হয়তো করোনা যুদ্ধে জয়ী হওয়া সম্ভব।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী সামাজিক দায়িত্ব পালনে আমাদের সর্বচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। নিয়মিত হাত ধোয়া। হাত না ধুয়ে নাক,মুখ,চোখে স্পর্শ না করা। সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখা। প্রয়োজন ব্যতিত ঘর থেকে বের না হওয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখলে এবং নিজ বাড়িতে অবস্থান করলেই করোনা নামক মহামারী থেকে নিজেকে ৫০ শতাংশ নিরাপদ রাখা সম্ভব। ঘরে থাকি, নিরাপদ থাকি। হেরে যাবে করোনা, জিতে যাবে মানবসভ্যতা।
লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়