সবখানে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

  © টিডিসি ফটো

‘‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।’’

১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ মজুরি-বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্ধারণ এবং কর্মক্ষেত্রে বৈরী পরিবেশের প্রতিবাদ করেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সুতা কারখানার একদল শ্রমজীবী নারী। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁদের ওপর দমন-পীড়ন চালায় মালিকপক্ষ।মূলত এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘ দিবসটিকে আন্তজার্তিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এর পর থেকে বিভিন্ন দেশে পালিত হয় এই দিবসটি।

আজ ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিনটি নানা আনুষ্ঠানিকতায় উদ্‌যাপিত হচ্ছে। জাতিসংঘ এ বছর নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে, ‘আমি প্রজন্মের সমতা: নারী অধিকারের প্রতি সচেতনতা’। আর বাংলাদেশে সরকারের পক্ষ থেকে দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘প্রজন্ম হোক সমতার, সকল নারীর অধিকার’।

তবে এখনো নারীদের জন্য উপযুক্ত কর্ম পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি।পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে বঞ্চনার শিকার হতে হয় নারীকে। আমাদের রক্ষণশীল সমাজে একজন মেয়ের বাহিরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে নানান প্রতিবন্ধকতা। সন্ধ্যার পর বের হওয়া যাবে না এটা করা যাবে না, ঐখানে যাওয়া যাবে না এসব করে মূলত তার বিভিন্ন অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়।

কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতেও পোহাতে হয় বিভিন্ন ঝামেলা আর কর্মক্ষেত্রে সহকর্মী থেকে শুরু মালিক পক্ষেরও অনেক ধরনের মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়। গার্মেন্টস কর্মীদের মধ্যে অধিকাংশ হলো নারী অথচ তাদের মাঝে রয়েছে বেতন বৈষম্য। আর কর্মক্ষেত্রে আসতে ও যেতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় প্রায়ই শোনা যায় গার্মেন্টস কর্মী ধর্ষণ। চা শ্রমিকদের বেশির ভাগই হলো নারী অথচ ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের মজুরি ১০২ টাকা অনেক ক্ষেত্রে তারও কম। এই মজুরির টাকায় তাদের ৪-৫ জন সদস্যের সংসার চালানো কঠিন। পাহাড়ের এই জনগোষ্ঠী বঞ্চিত সমাজের আধুনিক সুবিধা থেকে।

তবে আশার আলো হলো যে এখন নারীরাও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের প্রধান,স্পিকারও নারী।
এদিকে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদেও নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। এসবের মাঝেও বাড়ছে ধর্ষনের হার।শিশুরা রেহাই পাচ্ছে না হায়েনাদের হাত থেকে।

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে পাঁচ সন্তানের জননী ধর্ষন, সাভারে চলন্ত বাসে গার্মেন্টস কর্মী ধর্ষণ, কিছু দিন আগে কুড়িল বিশ্বরোডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ যা নিয়ে সমালোচনা হয় সমাজের সর্বস্তরে।এছাড়াও স্কুল কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েদের প্রায়ই হেনেস্তা হতে হয় বখাটেদের হাতে।

এসবের হাত থেকে রক্ষার জন্য আইনের প্রয়োগ,মানুষের মাঝে সামাজিক ভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।পাশাপাশি পারিবারিক শিক্ষার প্রতি জোর দেয়া। আবাস থেকে শুরু করে, কর্মস্থল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তা- ঘাট সর্বত্র নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

নারীদের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, তাদের স্বাধীন ভাবে চলার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে এবং নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই যেনো নিতে পারে সেই সুযোগ করে দিতে হবে। একই সাথে নারী শিক্ষার উপর জোর দিতে হবে। কর্মক্ষেত্রে নারীদের যোগ্যতা অনুযায়ী প্রবেশ করা সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে রাষ্ট্রকে।


লেখক: যুগ্ম আহ্বায়ক, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ


সর্বশেষ সংবাদ