৩৫ প্রত্যাশীদের বিপদেও বিপরীতমুখী ভিপি নুর

মুজাম্মেল মিয়াজী
মুজাম্মেল মিয়াজী  © ফাইল ফটো

ডাকসু মানে ঢাকা ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল স্টুডেন্টস্ ইউনিয়ন। তাই ডাকসু কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের কথাই ভাববে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আবেগের বসত অনেকে ডাকসুকে জাতীয় স্টুডেন্ট ইউনিয়ন ভাবেন যাহা মোটেও ঠিক নয়। কারণ বরাবরই দেখা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের স্বার্থ ছাড়া অন্য কোন ছাত্রদের যৌক্তিক কোন আন্দোলনে কখনই পারফেক্টলি এগিয়ে আসেনি। হ্যাঁ ঐতিহ্যগতভাবে ডাকসুকে বাংলাদেশের সেকেন্ড পার্লামেন্ট বলা হলেও সেটাও আবেগের বহিঃপ্রকাশ।

কারণ বিগত চার দশকে ডাকসু ছিল অনেকটা অকার্যকর। নুর একজন ডাকসুর ভিপি। নুরতো কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের কথাই ভাববে এটাও স্বাভাবিক। কারণ একটা সিন্ডিকেটের প্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত হলে অন্যদের কথা ভাবার সময় কই। ভাবলেও সেটা আবার বিপরীতমুখীও হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ সাধারণ ছাত্ররা মনে করে ৩৫ হলে ওরা বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ওদের প্রতিযোগী বাড়বে।

তাছাড়া ওরাতো সেশনজটে কখনই পড়েনি যেখানে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে ৩-৪ বছর ধ্বংস করে দিয়েছে। ওরা কিছুতেই চায় না প্রতিযোগিতা বাড়ুক। ওরা চায় না বলেই ৩৫ সহ ৪ দফার মত এমন একটা যৌক্তিক আন্দোলনে তাঁদের সমর্থন নেই। আজ ওদের অনেকের মনে এটা এক ধরনের বড় সংকীর্ণতা। তাছাড়া ওরা যে সেরা মেধাবী সেটাও একটা অহংকারের বিষয়। এটা শুধু কেবল ওদের মনের অবস্থান নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত কিছু সিনিয়র শিক্ষকদের মাঝেও এমনটা প্রকাশ পায়। যা ঢাবি ব্যাতিত অন্য লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর মনকে চরম আঘাত দেয়।

আর কোটা সংস্কার পরিষদের কথা বলছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রথম এবং শেষ পর্যন্ত আমি ছিলাম একজন। লিখিতভাবে কেন্দ্রীয় যুগ্ন আহবায়ক না হলেও মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমে ছিলাম ১০ এর মধ্যে ১জন। এমনকি কঠিন বিপদের মুহূর্তে আমি সহ ন্যাশনাল ইউনির্ভার্সিটি এবং প্রাইভেট ইউনির্ভাসিটির বেশ কয়েকজন সাহসী সহযোদ্ধারা না থাকলে এই আন্দোলন সফল হওয়া অনেকটা অসম্ভব হয়ে যেত।

সেই মুহূর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপস্থিত সংখ্যায় ছিল অনেকটাই নগন্য। তাই এই আন্দোলন সফলতার ক্ষেত্রে আমি যদি মার্ক করি সেটা হবে ৪০+৩০+৩০ (ঢাবিসহ পাবলিক ইউনিভার্সিটি+ন্যাশনাল+প্রাইভেট)। সংখ্যাটা বিবেচনা করলে ঢাবির অবস্থান অনেকটা নড়বড়ে। কিন্তু সেটাও তারা খুব বেশী স্বীকার করবে না। কারণ ঢাবির সিন্ডিকেটেই কোটা সংস্কার পরিষদের আজ জিম্মি। আর তাছাড়া কোটাতো সংস্কার হয়েছে কেবল মাত্র ১র্ম এবং ২য় শ্রেনীর ক্ষেত্রে। যেটা ঢাবির ছাত্ররা মনে করে তাদের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু লক্ষ লক্ষ ন্যাশনাল ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ততটা উপকার হয়নি বললেই চলে। তাহলে বুঝতেই পেরেছেন কার স্বার্থ কোথায়। কেন তারা ৩৫ সহ ৪ দফার মত যৌক্তিক আন্দোলনে এগিয়ে আসবে?

সেশনজটের কথা বাদই দিলাম । জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত ১৬২টি দেশের মধ্যে চাকরিতে আবেদবের বয়সসীমা ৩৫ এবং এর উর্ধ্বে। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের কোথায় কোথায় চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমাই নেই। গড় আয়ু বৃদ্ধির সাথে সাথে আবেদনের বয়সসীমা বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশের গড় আয়ু যখন ৫৭ ছিল তখন ৩০ করা হয়েছিল বর্তমান গড় আয়ু ৭৩। সেইখানে আবেদনের বয়সসীমা কমপক্ষে ৪০ হওয়ার কথা। উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে গেলেও চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ পার হয়ে যায়। চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে অসংখ্য যৌক্তি রয়েছে। আমি মনে করি মেধা কিংবা যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য আবেদনের কোন বয়সসীমাই থাকা উচিৎ নয়। কারণ সকল শিক্ষার্থীরাইতো চায় দেশ ও জাতির সেবা করতে। তবে কেন বয়সের শিকলে বন্ধী হয়ে যাবে তাঁদের ২০-২৫ বছরের অর্জিত সার্টিফিকেট।

আপনারা জানেন যে ৩৫ সহ ৪ দফা দাবি আদায়ের লক্ষে বিগত ডিসেম্বরের পুরো এক মাসে কনকনে শীতের মধ্যে একটিমাস আমরা অনশনে ছিলাম এবং অনেকে মৃত্যুর মুখে হসপিটালাইজও হতে হয়েছে। যা দেশবাসী দেখেছে। কিন্তু ভিপি নুরসহ ডাকসু কিংবা জনপ্রিয় কোটা সংস্কার পরিষদের চোখে একটুও পড়েনি। অনেকেই এগিয়ে এসেছে কিন্তু ওরা আসেনি। কারণ ওরা ৩৫ কে বিপরীতমুখী অবস্থান মনে করে অথবা ৩৫কে ভয় পায়। হ্যাঁ এর কিছুদিন পরেই কোটা সংস্কার পরিষদের ওরা হামলার স্বীকার হয়েছিল তখন আমাদের অনেকেই এগিয়ে গিয়েছে এবং ওদের পাশে দাঁড়িয়েছে। কারণ আমরা মানবিক অমানবিক বুঝি। কখনই কেবল আমাদের স্বার্থের কথা ভাবি না। আমরা ভাবি বৃহৎ এই ছাত্র সমাজের কথা, মেধাবীদের কথা এবং পরবর্তি প্রজন্মের কথা। চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করলে কোটি কোটি মেধাবী এই দেশের এবং জাতীর সেবা করার সুযোগ পাবে। এই প্রজন্মের সাথে সাথে পরবর্তিও প্রজন্ম এর সুফল আরো ভালভাবে অনুধাবন করতে পারবে। আবেদনের বয়স কোন ফ্যাক্ট নয়। ফ্যাক্ট হচ্ছে মেধা এবং যোগ্যতা ।

আলোচনা এবং সমালোচনার পরিশেষে বলতে চাই। আমরা সবাই ভাই ভাই। আমরা সবাই সহযোদ্ধা। আমরা সবাই সাধারণ ছাত্র ও যুবক। আমরা সবাই সাধারণ নাগরিক। স্বার্থকে কিছুটা বিসর্জন দিয়ে জাতীয় স্বার্থে সবাই সবার বিপদে এগিয়ে আসা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। ঐক্যবদ্ধ হলে আমরাই একদিন এই জাতীর এবং গণমানুষের ভাগ্যকে পরির্তন করতে পারব ইনশাআল্লাহ্।

লেখক: প্রধান সমন্বয়ক, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র কল্যাণ পরিষদ


সর্বশেষ সংবাদ