হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর যত অভিযোগ, গুলতেকিনের আক্রমণ কি ন্যায্য?

দেবব্রত মুখোপাধ্যায়
দেবব্রত মুখোপাধ্যায়  © টিডিসি সম্পাদিত

গুলতেকিন খান বা জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের পারিবারিক বিষয়ে আমার কখনোই কথা বলতে ইচ্ছে হয়নি। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ঈশ্বরেরও ব্যক্তিগত জীবন আছে। সেই জীবনে কেউ ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির হবেন, কেউ দেবরাজ ইন্দ্রের মতো স্খলিত চরিত্রের হবেন। আমি জানি না, হুমায়ুন কী ছিলেন। তাই এ নিয়ে ভাবিওনি কখনো। 

তবে দেখলাম অনেকে লিখছেন—এই রকম একটা খারাপ মানুষের (হুমায়ূন আহমেদ) বই পড়তাম! মানে, বাঙালির সারল্য বা ভোদাইগিরি দেখলে মাঝেমাঝে ঝাড়ু নিয়ে বের হতে ইচ্ছে করে। টলস্টয় পড়ার সময় তার যৌনজীবন কী ছিলে, ভেবে তারপর পড়েন? কুরাসাওয়ার ছবি দেখার সময় তার হিস্ট্রি খোঁজেন? কিশোর কুমারের গান শোনার সময় তার পরিবার ভাবেন? যদি ভাবেন, তাই আর্ট-কালচার কনজিউম করা বাদ দেন। শিল্পীর জীবন দিয়ে শিল্প বিচারের মতো মূর্খের আসলে এসব কনজিউম না করাই ভালো। 

এবার একটু গুলতেকিন খান সম্পর্কে বলি। হুমায়ুন আহমেদের সাথে গুলতেকিনের ছাড়াছাড়ির পরও তো প্রায় বছর দশেক হুমায়ুন বেঁচে ছিলেন। তিনি নারী নির্যাতনকারী, মিথ্যে আত্মজীবনী লেখক, প্রতারক হলে; সে সময় তিনি কিছু প্রকাশ করেননি কেন? উচিত ছিলে আইনের আশ্রয় নেওয়ার। তাতে তিনি পারলে আত্মপক্ষ সমর্থন করতেন, না পারলে জেলে যেতেন। হুমায়ুন বেঁচে থাকতে গুলতেকিন কখনো অভিযোগ করেননি। আজ যখন লোকটার আত্মপক্ষ সমর্থন করার উপায় নেই, তখন ধারাবাহিক এই অভিযোগের পসরা খুলে বসাটা শুধু নোংরামি না; ক্রাইম। 

হুমায়ূন আহমেদের নামে এখন আপনারা যা খুশি বলতে পারেন; উনি তো মিথ্যে প্রমাণ করার অবস্থায় নেই। হুমায়ূন আহমেদ জীবনে এমন দুটি ভাই রেখে গেছেন, যারা কখনোই স্পষ্ট সাক্ষ্য কোনো বিষয়ে দিতে রাজি হলেন না। বাবার শহীদ হওয়া নিয়ে পর্যন্ত সাক্ষ্য দিতে চান নাই। সুশীলতার ট্যাবলেট খেয়ে বসে আছেন তারা।

হুমায়ুন আহমেদ এখন কলাগাছ। কলাগাছে ছুরি মারাটা ন্যাচারাল ক্রাইম; কারণ সে ছুরির আঘাত ঠেকাতে পারে না। সংসদে পর্যন্ত অনুপস্থিত ব্যক্তি সমালোচনা করার নিয়ম নেই। কারণ, যে কেউ সংসদে গিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারেন না। মহান আদালত অবদি খুনের আসামীরও কথা শোনেন। আর আপনারা লোকটা মরার পরই সব অভিযোগ শুরু করলেন। খুব ইচ্ছে করে যে, জেন জির মতো বলি— এতকাল কোথায় ছিলেন?

দেবব্রত মুখোপাধ্যায়: লেখক ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক


সর্বশেষ সংবাদ