বিএনপির ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রাম: বর্তমান অবস্থা

সাইদুর রহমান
সাইদুর রহমান  © টিডিসি সম্পাদিত

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি অবৈধভাবে ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দীনের সরকারের ক্ষমতা দখলের পর থেকে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত নিপীড়িত রাজনৈতিক দলটি ছিলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। সীমাহীন নির্যাতন, আর অসহনীয় অত্যাচারের শিকার হয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। দলের সংকট মুহূর্তে বিগত সেনাসমর্থিত সরকার বিএনপিকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করতে চেয়েছিলো কিন্তু নিবেদিত নেতাকর্মীদের কারণে তা পারেনি। ফলে অতীতে আপনি নির্যাতিত হয়েছেন এই অজুহাতে অন্যকে কখনোই নির্যাতন করবেন না। বর্তমানে বিএনপির নাম জড়িয়ে যখন কোন খারাপ নিউজ হয়, তখন ত্যাগের স্মৃতিগুলো ম্লান হতে থাকে।

বিএনপির মনে থাকার কথা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে সেনাপ্রত্যাহারের মিথ্যা চিঠির ভিত্তিতে জোরপূর্বক রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে ক্ষমতা দখল করা হয়। বিএনপি না থাকলেও ড: ফখরুদ্দিন আহমেদের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামীলীগ নেত্রী শেখ হাসিনা এবং এইচএম এরশাদসহ মহাজোটের নেতারা। তৎকালীন সরকার আওয়ামীলীগের আন্দোলনের ফসল বলে উল্লেখ করেছিলেন শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের পাতানো 'সুষ্ঠু' নির্বাচনে সেটি আরো স্পষ্ট হয়েছিলো।

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির মধ্যেই ২৬ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে দেশে সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেন। স্বাধীন বাংলাদেশে তখন এমন এক পরিস্থিতি বিরাজ করছিল যে কারো টুঁ শব্দটি করার সুযোগ পর্যন্ত ছিল না। দুর্নীতির অভিযোগে মিথ্যা অভিযোগে বিএনপির বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন শুরু হয়। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জনপ্রতিনিধি থেকে বিএনপির শীর্ষপদে থাকা প্রত্যেকে গ্রেফতার করা হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রায় শতাধিক শীর্ষনেতাকে দুর্নীতির অভিযোগে আটক করে। এমনকি বাদ যাননি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া এবং তাদের পরিবারের বিভিন্ন সদস্য। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা এবং তার দলের নেতাকর্মীরাও।

জরুরি অবস্থা ভেঙ্গে আন্দোলন: ২০০৭ সালের ৭ই মার্চ জনাব তারেক রহমানকে গ্রেফতার করা হলে জরুরি অবস্থা ভেঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছিলো জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। শোষকের রক্তচক্ষু ও তীব্র দমন-পীড়নকে উপেক্ষা করে দৈনিক দিনকালের বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হিসেবে সেই ঐতিহাসিক বিক্ষোভের সাক্ষী ছিলাম। ৪০ থেকে ৫০ জনের সেই মিছিলটি কলাভবন প্রদক্ষিণ করেছিলো আর পেছনে ছুটেছিলাম। পরে জরুরি অবস্থা ভঙ্গের অভিযোগে শাহবাগ থানায় মামলা। তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজের নির্দেশে শাহবাগ থানা থেকে মোর্শেদ দারোগার কাছ মামলার কপিও আমাকে সংগ্রহ করতে হয়েছিলো। সেই যে রাজপথে যাত্রা শুরু তা আজ অব্দি অব্যাহত রয়েছে। দীর্ঘ ১৮ বছরে বিএনপির উপর ঘটে যাওয়া রাষ্ট্র কর্তৃক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেছি। একটি রাজনৈতিক দলকে নি:শ্বেষ করার সব চেষ্টা করা হয়।

সেই সময়ে বিএনপির বড় বড় সংস্কারপন্থীদের আবির্ভাব দেখেছি। মান্নান ভুঁইয়া, সাইফুর রহমান, মেজর হাফিজ, আশরাফসহ আরো অসংখ্য নেতাকে ঈমান হারিয়ে তৎকালীন সরকারের সাথে আঁতাত করতেও দেখা গেছে। তবে খন্দকার দেলোয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হান্নান শাহ, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির সিনিয়র কিছু নেতা, আর তৃণমূলের ত্যাগী-পরিশ্রমী এবং জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল মাটি কামড়িয়ে পড়েছিলো রাজপথে। শুরু থেকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনটি ছিলো অত্যন্ত কঠিন এবং চ্যালেঞ্জের। এই সংগ্রাম চললাকালে বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলের অনেক দাপুটে নেতারা আত্মসমর্পণ করেন।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। বিএনপির উপর বহুগুণ বেড়ে যায় নির্যাতন। মুক্তিযুদ্ধকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে অপশাসনের রাজ্যে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। তবে বিএনপি সেই অপশাসনের প্রতিবাদে মাঠ সরগরম করে রাখে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল দাবিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। বাংলাদেশের ইতিহাসে তীব্র আন্দোলন হয়। গ্রামে-গঞ্জে সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। বালুর ট্রাক দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাসভবন আটকানো হয়। সেই পরিস্থিতিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা ভোট সম্পন্ন করে ফেলে আওয়ামী লীগ। ভোটারবিহীন সেই নির্বাচনে খাতা-কলমে বিপুল উপস্থিতি দেখানো হয়। চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশ প্রবেশ করে ফ্যাসিস্ট শাসনে। সেই ফ্যাসিস্ট শাসনকে তৃণমূলে  ছড়িয়ে দিতে স্থানীয় সরকার ভোটে ২০১৫ সালে চালু করা হয় দলীয় প্রতীক। এরপর থেকে বেপরোয়া শাসনের যুগে আবির্ভাব হয় বাংলাদেশে। জাতীয় এবং স্থানীয় ভোটকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়। গুম, খুন, হত্যা করা হয় হাজার হাজার নেতাকর্মীকে। ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা দেয়া হয়। দীর্ঘ সংগ্রামে ২০ হাজার নেতাকর্মীকে হারিয়েছে বিএনপি।

তারেক রহমানের দীর্ঘ সংগ্রাম: দীর্ঘ ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে জনাব তারেক রহমানের উপর অমানসিক নির্যাতন হয়। ২০০৭ সালের ৭ মার্চ বিনা অভিযোগে তারেক রহমানকে ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মঈনুল রোডের বাড়ি থেকে গ্রেফতারের সময় বলেছিলেন, ওরা আমাকে নিতে এসেছে। আমি কোনো অপরাধ করিনি, আমার জন্যে দোয়া করবেন।’ এরপর দু’রাকাত নফল নামাজ পড়লেন। মা বেগম জিয়ার অঝোর কান্না আর প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে তারেক রহমানকে ওরা নিয়ে যায়। সবগুলো মিথ্যা মামলায় জামিন পাওয়ার পর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি মুক্তি পান। সুচিকিৎসার জন্য সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান। সাবেক সেনা প্রধান মইনউদ্দিন গুনে গুনে ১৩টি মামলা দিয়েছিল। কোনোটাতেই তারেক রহমান সরাসরি আসামি নন। আসামিদের আগে ধরে তাদের বানানো স্বীকারোক্তি ছিল তারেক রহমানকে ফাঁসানোর অস্ত্র। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তারেক রহমান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। উক্ত কাউন্সিলে তারেক রহমানের একটি ধারণকৃত বক্তব্য উপস্থিত জনসমাবেশের উদ্দেশ্যে প্রচার করা হয়। বক্তব্যটিতে তারেক রহমান জানুয়ারি ২০০৭-এ ক্ষমতায় আসা অগণতান্ত্রিক সরকারের হাতে তার অন্যায় গ্রেপ্তার ও বন্দি অবস্থায় নির্যাতনের বর্ণনা দেন। তিনি নিশ্চিত করেন যে আপাতদৃষ্টিতে মনে হওয়া বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থার আড়ালে তাকে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। তারেক রহমান তার শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দেন ও জানান তার চিকিৎসা সম্পন্ন হতে আরও সময় প্রয়োজন। এই বক্তব্য প্রচারিত হওয়ার সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর অবৈধভাবে অর্থের লেনদেনের (মানি লন্ডারিং) অভিযোগে করা মামলায় খালাস পান বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এর বিচারক মো. মোতাহার হোসেন তারেক রহমানকে মামলায় খালাস ঘোষণার পর দেশত্যাগে বাধ্য করে সরকার। তারেক রহমানকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে ভোটারবিহীন ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্টের মাধ্যমে বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কোন বক্তব্য বিবৃতি প্রচার বা প্রকাশ নিষিদ্ধ করতে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। এরপর তিনি স্কাইপি, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দলীয় কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। তারেক রহমাননের পাশাপাশি বিএনপিকে ধ্বংসের মিশনে নামে আওয়ামী লীগ। বিএনপি শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন। হামলা, মামলা, নির্যাতন, গুম, হত্যাধযজ্ঞ চালানো হয়েছিলো। বারবার বিএনপিকে ভাঙ্গতে চেয়েছিলেন। প্রতিবেশী দেশের সহযোগিতায় বাংলাদেশের জনগণের সব অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। আর আজ আপনাদের দুর্দশা দেখুন। বিএনপির চেয়ে চরম করুণ অবস্থায় পতিত হয়েছে আওয়ামী লীগ।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মিথ্যা কথিত মামলায় দণ্ড নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ায় চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দায়িত্বপ্রাপ্ত হন জনাব তারেক রহমান। পেটুয়া হাসিনা সরকার হটাতে বাংলাদেশের বেশিরভাগ বিরোধী দলকে একমঞ্চে নিয়ে আসেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। বিশ্বের দরবারে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ভোট ডাকাতির নির্বাচন প্রমাণ করতে সক্ষম হন তিনি। এরপর থেকেই বাংলাদেশে বিরোধী দল বিএনপির আন্দোলন সংগ্রাম ও সাংগঠনিক সকল কার্যক্রম দক্ষভাবে পরিচালনা করে আসেন তিনি। বিএনপি পরিচালনার পাশাপাশি তিনি শেখ হাসিনাকে ভোট ডাকাত প্রমাণ করতে সক্ষম হন। বিগত সময়ের আন্দোলনে তারেক রহমান বিশ্বের গণতন্ত্রকামী রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন আদায় করেন।

২০২৩ সালের ২৮ জুলাই বিএনপির ঢাকা মহাসমাবেশে হঠাৎ করেই নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নয়াপল্টনে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হঠাৎ করেই নেতা-কর্মীদের এই চমকের কথা জানান। মির্জা ফখরুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেন, “আপনাদের জন্য চমক অপেক্ষা করছে। আপনাদের প্রাণপ্রিয় নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অডিও কলে বক্তব্য রাখবেন।” পরে লন্ডন থেকে প্রায় আট মিনিটের একটি ফোন কলের মাধ্যমে সমাবেশে যোগ দেন তারেক রহমান। তাঁর বক্তব্য মাইকে প্রচারিত হতে থাকে। তারেক রহমান যখন সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন, তখন হাজার হাজার নেতা-কর্মী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। সেইদিন প্রিয় বাংলাদেশ, প্রিয় বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনতা"  ইতিহাসের সেরা উদ্দীপিত সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিয়ে দেশের জনগণকে জাগ্রত করেন চলমান অহিংস আন্দোলনের রূপকার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান। লক্ষ লক্ষ জনতার উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময় বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এই বাংলাদেশ ব্যর্থ হতে পারে না। বাংলাদেশের জনগণ ব্যর্থ হতে পারে না। কারণ জনগণ রক্ত দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। বিএনপির বিশ্বাস, শক্তি এবং ঐক্য হলো জনগণ। অধিকার বঞ্চিত জনগণ জেগে উঠেছে। জনগণকে সাথে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে জনগণের দাবি পুনঃ: প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন তিনি। “প্রিয় বাংলাদেশ, আপনাদের সাথে স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে আমার দেখা হবে ইনশাআল্লাহ,” এই বলে প্রায় আট মিনিটের বক্তব্য শেষ করেন তারেক রহমান।

২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর নয়ায়াপল্টনে ঐতিহাসিক শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে হামলা চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় হাসিনা বাহিনী। এরপরের সংগ্রামগুলো ছিলো আরো কঠিন। নির্বাচন বর্জনের প্রতিবাদে মাঠেঘাটে মিছিল করে গেছে ত্যাগীরা। বিএনপির নেতৃত্বেই ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচন বর্জন করা হয়। ভোটের পরও ধারাবাহিক আন্দোলন অব্যাহত রাখে বিএনপি। জুনে কোটা আন্দোলনের শুরু থেকে কৌশলী ভূমিকায় আন্দোলনকে চূড়ান্তরুপ দেন জনাব তারেক রহমান। হাজারো মানুষের ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ কর্তৃত্ববাদের কবল থেকে মুক্ত হয়ে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। এই ত্যাগের পেছনে জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতার রক্তের সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিরও দীর্ঘ সংগ্রাম, জেল-জুলুমের অবদান রয়েছে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, লাখো মামলার শিকার হয়েছেন। নিশ্চয়ই আরেকটি কর্তৃত্ববাদী ও গণতন্ত্রহীন শাসনব্যবস্থার জন্য এই ত্যাগ কেউ করেনি। আন্দোলন সংগ্রামের পাশাপাশি ২০১৬ সাল থেকেই বিএনপি রাষ্ট্রকাঠামোতে সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে আসছে। দলটির ৩১ দফায় দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও পরপর দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

মনে রাখতে হবে, গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত শক্ত জনসমর্থন ও নেটওয়ার্ক বিএনপির রয়েছে। সে জন্য সমর্থনকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে সুস্থ রাজনীতি ও কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে নাগরিক সমাজ ও বিএনপির একে অপরের সঙ্গে একযোগে কাজ করা উচিত। নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে তারেক রহমানের অবদান অপরিহার্য। বিশেষ করে জুলাই অভ্যুত্থান ও ৫ আগস্ট-পরবর্তী অস্থির সময়ে তারেক রহমান বেশ কিছু সঠিক এবং সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার বক্তব্য ও বিবৃতিতে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার ছাপ স্পষ্ট। বিশেষ করে বহুত্ববাদ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার বিষয়টি বারবার তার বক্তব্যে এসেছে। তিনি বলেছেন, ‘বাঙালি-অবাঙালি, বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী কিংবা সংস্কারবাদী প্রত্যেক নাগরিকের একমাত্র পরিচয়-আমরা বাংলাদেশি।’

কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, দীর্ঘ ১৮ বছরের এই সংগ্রামে ত্যাগীরা যখন মাঠে, কিছু নেতা তখন আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করেছিলো। এসিরুমে বসে বারবার ত্যাগী আর পরিশ্রমীদের বিভ্রান্ত করেছে। পটপরিবর্তনের পর সামনের সারিতে চলে এসেছে বিএনপির তথাকথিত সরকারি নেতারা। সম্পদ রক্ষা করতে আঁতাত এবং আওয়ামী লীগের সাথে ব্যবসা করে আয়েশি জীবন-যাপন করে যাওয়া নেতারা হঠাৎ করে বিপ্লবী। তাদের ত্যাগের ফিরিস্তি শুনতে শুনতে ক্লান্ত ফ্যাসিবাদ বিরোধী সৈনিকরা। কোণঠাসা হচ্ছেন প্রকৃত ত্যাগীরা। ত্যাগী নিষ্ক্রিয় হওয়ায় হতাশ হচ্ছেন তাদের কর্মী এবং সমর্থকরা।

ক্ষমতার দাপটে আমাবশ্যার রাতের নেতা এবং তার সমর্থকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। রাষ্ট্রের সবকিছু নিজেদের মধ্যে ভাগ করছেন। সবকিছুই আমাদের-তোমাদের বলে অগ্রসর হচ্ছেন। এমনকি বিএনপির কিছু বড় বড় রাজনৈতিক নেতৃত্ব আছে যারা নিজের আধিপত্য হ্রাস, জনপ্রিয়তার ভূমিধস, কর্মীদের দূরে সরে যাওয়া অনুধাবন করতে পারেন না। এটি অনুধাবন করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণ তিনি দীর্ঘদিন জনবিচ্ছিন্ন ছিলেন, জনগণ থেকে দূরে ছিলেন। আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন নিষ্ক্রিয়। হঠাৎ ৫ আগস্টে ফ্যাসিবাদ অবসানের পর বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই জমিদারি স্টাইলে শাসন পরিচালনায় মগ্ন হয়েছেন। কথায় কথায় ত্যাগী এবং পরিশ্রমীদের অবজ্ঞা এবং অসম্মান করছেন। শিক্ষিত সমাজকে অপমান করছেন। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দামি গাড়ি উপহার নিচ্ছেন, ফ্যাসিবাদ পুর্নবাসন করছেন, পরিবার দিয়ে আর্থিক বাণিজ্য করছেন।  

এই ধরনের রাজনীতি এবং রাজনীতিকরা নতুন বাংলাদেশে অনুপযুক্ত। ওইসব অযোগ্য নেতৃত্ব বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের বার্তা বুঝতে অক্ষম। তারেক রহমানের প্রতিটি নির্দেশ এবং বার্তা অমান্য এবং উপেক্ষা করে এরা আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হচ্ছেন। বস্তুত তাদের সময় ফুরিয়ে গেছে। এই ফুরিয়ে যাওয়াও তিনি বুঝতে পারেন না। এটি না পারাটাও এক ধরনের অযোগ্যতা এবং অসুস্থতা। আগামীর বাংলাদেশ হোক নতুনদের, ত্যাগীদের, মজলুম জনগণের প্রতিনিধিদের। জনাব তারেক রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত হোক আগামীর বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশে রাজনীতি হোক জনগণের জন্য, দেশের সার্বিক উন্নয়ন এবং মঙ্গলের জন্য। সকলের জন্য।

লেখক: রাজনীতি এবং নির্বাচন বিষয়ক সম্পাদক, দৈনিক ইত্তেফাক।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence