একুশের চেতনা: ভাষা, সংস্কৃতি, এবং স্বাধীনতার স্পৃহা
- আকাইদ আরিফুল
- প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:২১ AM , আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:২১ AM

১৯৫২ সাল। বাংলার ইতিহাসে রক্তাক্ষরে লেখা এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। এই বছরটি বাঙালির আত্মপরিচয়, সংগ্রাম এবং স্বাধীনতার স্পৃহার প্রতীক হয়ে আছে। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের শেখায় ভাষা শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, ভাষা আমাদের অস্তিত্ব, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের গর্ব। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা বঞ্চনার শিকার হতে থাকে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে দমন করার চেষ্টা করে। তারা উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু বাঙালি জাতি, যারা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নিজেদের ভাষা-সংস্কৃতিকে আগলে রেখেছে, তারা কি মাতৃভাষা হারাতে রাজি হবে?
না, রাজি হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা, তরুণ প্রজন্ম, রাজপথে নেমে এসেছিল। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ এই স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছিল গোটা দেশ। শাসকগোষ্ঠীর নির্মম অত্যাচারে রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারের মতো তরুণেরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল মাতৃভাষার জন্য। একুশে ফেব্রুয়ারি, সেদিন বাংলার আকাশ রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল। একুশের চেতনা শুধু ভাষার জন্য সংগ্রামের চেতনা নয়, এটি আত্মপরিচয়, স্বাধীনতা, আর ন্যায়বিচারের চেতনা। একুশ আমাদের শেখায় যে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে, নিজের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করতে হবে। একুশ আমাদের শেখায় যে, আমাদের ভাষা আমাদের অস্তিত্বের প্রমাণ, আমাদের সংস্কৃতির বাহক, আমাদের ঐতিহ্যের ধারক।
ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম পদক্ষেপ। একুশের চেতনা বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল, স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে শিখেয়েছিল। একুশের চেতনা আমাদের শেখায় যে, কোনো জাতির জন্য তার ভাষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ভাষা শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, ভাষা একটি জাতির আত্মা, একটি জাতির পরিচয়।
এখন আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। বাংলা আমাদের রাষ্ট্রভাষা। কিন্তু একুশের চেতনা আজও আমাদের পথ নির্দেশ করে। আমাদের শেখায় যে, ভাষা শুধু কথাবার্তার মাধ্যম নয়, ভাষা আমাদের চিন্তা, আমাদের ভাবনা, আমাদের স্বপ্নের ভাষা। ভাষা আমাদের সৃজনশীলতার উৎস, আমাদের প্রতিভার প্রকাশ।
তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে একুশের চেতনাকে বুকে ধারণ করি। আসুন, আমরা বাংলা ভাষাকে লালন করি, সমৃদ্ধ করি। আসুন, আমরা একুশের শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং তাদের আদর্শকে আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করি। আসুন, আমরা বাংলা ভাষার প্রচার ও প্রসারে কাজ করি। আসুন, আমরা বাংলা ভাষাকে বিশ্বের দরবারে উজ্জ্বল করে তুলি। কারণ, একুশের চেতনা শুধু অতীতের কথা নয়, এটি আমাদের বর্তমান আর ভবিষ্যতের পথ নির্দেশক। একুশের চেতনা আমাদের অনুপ্রেরণা দেয় একটি সুন্দর, সমৃদ্ধ, এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য। একটি বাংলাদেশ যেখানে সকল মানুষ তাদের মাতৃভাষায় কথা বলতে পারবে, শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে এবং নিজেদের সংস্কৃতিকে আগলে রাখতে পারবে।
বাংলা ভাষা ছড়িয়ে পড়ুক সারা দুনিয়ায়, ফেব্রুয়ারি হোক অমর!
লেখা: এমবিএ (হিসাব বিজ্ঞান), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।