শৈশবের ঈদ কেটেছে হাসি-আনন্দে

সাজ্জাদ হোসাইন 
সাজ্জাদ হোসাইন   © টিডিসি ফটো

স্মৃতিচারণ করছি ২০০৭-০৮ সালের কথা। যখন আমাদের হাতে না ছিলো দ্রুত গতির ইন্টারনেট কিংবা হাতে হাতে স্মার্টফোন। আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা গারো পাহাড়ের পাদদেশের ছোট্ট জেলা শহর শেরপুরে। ছোটোবেলায় আমাদের ঈদের আমেজ শুরু হতো বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই ঈদের নতুন কাপড় কেনার মাধ্যমে।

ঈদের ২-৪ দিন আগে থেকেই আমরা দাদুবাড়ি চলে যেতাম যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ কিংবা পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকা আত্মীয়স্বজন, চাচাতো-ফুপাতো ভাই বোনেরা আসা শুরু করতো। দাদুবাড়ির ছোট্ট ঘরের এক খাটে জায়গা না হওয়ায় আমরা মাটিতে খড় বিছিয়ে তার উপর চাদর দিয়ে বিছানা বানাতাম, বালিশ হতো ধানের আঁটি।

ঈদের ২-৩ দিন এভাবেই ১৫-১৬ জনের ঘুমানোর ব্যবস্থা হতো। চাঁদরাতে মেয়েদের মধ্যে চলতো মেহেদি দেয়ার আমেজ আর আমরা ছেলেরা দলবেঁধে হাঁটা দিতাম ২ কি.মি দূরে গ্রামের বাজারের উদ্দ্যেশ্যে। হয় বায়োস্কোপ দেখতে নয়তো মুড়ি-মুরকি-বাতাসা খেতে।

আমাদের ঈদের দিন শুরু হতো ভোর সকালে সারিবেঁধে চাপ কলের পানিতে গোসল দিয়ে। তারপর নতুন জামা পরে বের হয়ে যেতাম সালামির খোঁজে। কারো কাছে পেতাম চকচকে দশ টাকার নোট কিংবা ভাগ্য সুগম হলে বিশ-পঞ্চাশ টাকার সালামিও জুটে যেতো কপালে।

তারপর সেমাই, আওলা কিশি পিঠা আর নুডলস খেয়ে জায়নামাজ কাঁধে চলে যেতাম গ্রামের ঈদগাহ মাঠে। নামাজ শেষে আবার বন্ধু আর সমবয়সী ভাই-বোনদের সাথে সারাদিন চলতো ঘুরাঘুরি, খুনসুটি কিংবা বিকেলের দিকে বৌছি, গোল্লাছুট বা বরফ পানি খেলা।

ঈদের দিন সন্ধ্যা হলেই আমরা সবাই জমায়েত হতাম সেই ঘরে, যেখানে পুরোনো আমলের টিভিসেট আছে। উদ্দ্যেশ্য এখন 'ইত্যাদি'র ঈদ আয়োজন দেখা। হানিফ সংকেতের সংলাপ শুনতাম মুগ্ধের মতো কিংবা নানা-নাতির কান্ড দেখে হেসে গড়াগড়ি খেতাম।

এভাবেই আমাদের শৈশবের ঈদ কেটেছে হাসি, আনন্দে, হুল্লোড়ে। যেখানে ছিলো না কোনো অনলাইন দুনিয়ার ভ্রুক্ষেপ কিংবা ফোনের মাঝে মুখ গুঁজে সময় পার। সেদিনের কথা স্বরণ করলে এখনকার ঈদের আমেজ অনেকটাই মলীন হয়ে যায়।

ফেসবুক-ইউটিউবের মাঝখানে ঢুকে আমরা হয়তো ভুলেই যাচ্ছি ঈদের আনন্দ একা ঘরে থাকার মাঝে না, বরং সবার সাথে ঘুরে ফিরে আনন্দ বন্টনের মাঝে। আশাকরি সেই সুদিন আবার ফিরবে আর বর্তমান প্রজন্ম বিরক্ত হয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিবে না, "এবারের ঈদে সারাদিন ঘুমাবো"।

লেখক: ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়।

 

সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence