শহীদ তিতুমীরকে স্মরণ করতে এত ‘অনীহা’ কেন?

সাহেদুজ্জামান সাকিব
সাহেদুজ্জামান সাকিব  © টিডিসি ফটো

বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা মীর নিসার আলি তিতুমীরের ১৯২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর তিতুমীর ও তার চল্লিশজন সহচর  ব্রিটিশ সৈন্যদের হাতে শহীদ হন। বাঁশের কেল্লার জন্য বিখ্যাত হয়ে থাকা শহিদ তিতুমীর বাঙালি জাতির জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণা। ইংরেজদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা সাহসী এই বীরের ইতিহাস অজানা কারণে অবহেলিত হয়ে পড়েছে। তাঁর জন্মদিন কিংবা মৃত্যুবার্ষিকীতে দেখা যায় না তেমন কোনো আয়োজন, আলোচিত হয় না তাঁর কোনো বীরত্বগাঁথা।

ইতিহাস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি ভারতের পশ্চিম বঙ্গে তিতুমীরকে সাম্প্রদায়িক হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন কেউ কেউ। কিন্তু বাংলাদেশে সবসময়ই শহীদ তিতুমীরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হতো। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজধানীর জিন্নাহ কলেজের নাম পাল্টিয়ে তিতুমীর কলেজ নাম দিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধারা। তিতুমীর কলেজের নামফলক স্থাপনের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশের বর্তমান বানিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সি। শহীদ তিতুমীরের সাহসিকতা ও বৃটিশবিরোধী আন্দোলনকে স্মরণীয় করে রাখতে জিন্নাহ কলেজের নাম পাল্টিয়ে তিতুমীর কলেজ রেখেছিলেন তাঁরা। মন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে সেসব বিষয়ে স্মৃতিচারণও করে থাকেন। এ থেকেই বুঝা যায় এই দেশের মানুষ সব সময়ই শহীদ তিতুমীরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতো।

কিন্তু কালের বিবর্তনে বাংলাদেশের ইতিহাসে শহীদ তিতুমীরের অবদান নিয়ে আলোচনা কম হওয়ার কারণ কি? বাংলাদেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কথা না হয় বাদ দিলাম স্বয়ং তিতুমীরের নামে বাংলাদেশে একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি তিতুমীর কলেজেও তিতুমীরকে নিয়ে কোনো আয়োজন নেই! আমি তিতুমীর কলেজে ভর্তি হয়েছি ২০১৯ সালে। কিন্তু এখন পর্যন্ত শহীদ তিতুমীরকে নিয়ে আমার কলেজে তেমন কোনো আয়োজন দেখিনি। তিতুমীরের জন্ম-মৃত্যু বার্ষিকী নিয়ে কলেজ প্রশাসনেরও তেমন কোনো আগ্রহ নেই। তিতুমীর কলেজে প্রায় সবগুলো রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠন এবং প্রায় ১৮ টি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন সক্রিয় থাকলেও কখনো কাউকে তিতুমীরের জন্ম-মৃত্যু বার্ষিকী পালন করতে দেখিনি। তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতি অবশ্য তিতুমীরের মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে আসছে।

তিতুমীরকে স্মরণ করতে সবার এত অনীহা কেন এটা নিয়ে অনেকের মতো আমার মনেও প্রশ্ন জাগে। কলেজের একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি পশ্চিমবঙ্গের মতো দেশের অনেকেই শহীদ তিতুমীরকে সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি মনে করে। কলেজের অনেক শিক্ষকের ধারণাও তাই। কলেজ প্রশাসন শহীদ তিতুমীরকে নিয়ে বড় ধরনের কিছু আয়োজন করলে উচ্চ মহলে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হতে পারে এই চিন্তা থেকে বিষয়টি এড়িয়ে যায়।

কিন্তু শহীদ তিতুমীর কি আসলেই সাম্প্রদায়িক ছিল? ইতিহাসবিদরা তিতুমীরকে নিয়ে কী বলে? বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক আব্দুল মোমেন চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে এক সাক্ষাৎকারে জানান তিতুমীর জীবন শুরু করেছিলেন একজন সমাজ ও ধর্মীয় সংস্কারক হিসাবে। তখন মুসলমান সমাজে যেসব বিদআত এবং শিরক ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলোকে দূর করার উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি তাঁর কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু এই ধর্মীয় এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট পরে একটা অর্থনৈতিক এবং ব্রিটিশ বিরোধী প্রেক্ষাপটে পরিণত হয়েছিল।

ইতিহাসবিদরা মনে করেন শহীদ তিতুমীরকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সাম্প্রদায়িক বানানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বাস্তবে সাম্প্রদায়িকতার কোনো ছিটেফোঁটাও তিতুমীরের মধ্যে ছিল না এবং কেউ এটা প্রমাণও করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিতুমীরের সংগ্রামকে পজিটিভভাবেই উল্লেখ করেছেন। তাহলে শহীদ তিতুমীরকে শহীদ তিতুমীরকে স্মরণ করতে আমাদের এত ‘অনীহা’ কেন? সমস্যাটা আসলে কোথায়?

লেখক: সাংগঠনিক সম্পাদক, সরকারি তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতি


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence