একদিন পরপর আম্মুকে জিজ্ঞেস করতাম, ঈদের আর কয়দিন বাকি?

মাহবুবুর রহমান
মাহবুবুর রহমান  © টিডিসি ফটো

ছোটবেলায় ঈদ বলতে বুঝতাম নতুন পোশাক কেনা, ঈদের দিন সকালে সেই নতুন পোশাক পরে আম্মু-আব্বু, ভাই-বোন ও নিকটতম আত্নীয়দের নিকট থেকে সালামি নেওয়া, ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি। ঈদের ১ সপ্তাহ আগে থেকেই অপেক্ষা শুরু হত—কি ধরনের পোশাক কিনবো, কত টাকা কার থেকে সালামি পাব এবং সেই টাকা যে শুধু আমার, একান্তই আমার।

এই টাকাতে অন্য কারো অধিকার নেই। টাকা দিয়ে দোকান থেকে কোন কোন জিনিস কিনে খাব, কোন খেলনাটি কিনব, কোথায় দলবেঁধে ঘুরতে যাব—সেই হিসাব কষে প্রতিটা দিন পার করতাম। একদিন পরপর আম্মুকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতাম, আম্মু ঈদের আর কয়দিন বাকি? আহা, এ যে কি যে আনন্দ, কি এক অনুভূতি!

কোরবানি ঈদের সাথে রয়েছে বিশেষ স্মৃতি। আমার বাবা গ্রামের বাজার মসজিদের ইমাম। সেই সূত্র ধরে কয়েকটি মহল্লার কোরবানির পশু জবাহের দায়িত্ব বাবার উপরে পড়ে। প্রতি কোরবানি ঈদের নামাজ শেষ করে, বাবার বাইসাইকেলে চেপে একেকটা মহল্লার দিকে রওনা দিতাম। মহল্লায় গিয়ে দেখতাম সারি সারি গরু, ছাগল, ভেড়া হাতে নিয়ে লোকেরা দাড়িয়ে আছে।

বাবা একটা একটা করে পশু আল্লাহর নাম নিয়ে জবাই করা শুরু করতে। আর আমি পাশেই এক বালতি পানি নিয়ে অপেক্ষা করতাম। বাবার রক্তমাখা ধারালো ছুরি ও হাত দু’টি পানি দিয়ে ধুয়ে দিতাম। এভাবে এক মহল্লা থেকে আরেক মহল্লায় যেতাম এবং বাবাকে সঙ্গ দিতাম।

তারপর বাড়িতে এসে আরেকটি নতুন জামা পড়ে নিজ মহল্লায় ঢুকে বন্ধুদের সাথে নিয়ে দল বেঁধে কোরবানির মাংস বিতরণ দেখতাম। এভাবেই কেটেছে শৈশবের ঈদ।

উচ্চশিক্ষার জন্য গ্রাম ছেড়ে ঢাকাতে এসেছিলাম ২০১৭ সালে। তারপর থেকেই বাড়ি ফেরা একটা স্বপ্নের নাম হয়ে দাড়িয়েছে। অপেক্ষা করতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ বিশেষ ছুটির জন্য; তবে ঈদের ছুটি ছাড়া বড় কোন ছুটি পাওয়া যায় না। তাই ঈদের ছুটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকি। 

বাড়ি ফেরা, প্রিয় মানুষদের সাথে সময় কাটানো, মায়ের হাতের মজার মজার রান্না খাওয়া, বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়া প্রতিটি মুহূর্ত কল্পনা করলেই মস্তিষ্কে একধরণের উত্তেজনা কাজ করে। 

পরিবারের সাথে ঈদ করা বরাবরই আনন্দের ও পরম সৌভাগ্যের; তবে এবারের কুরবানির ঈদটা আমার কাছে খুবই স্পেশাল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স শেষ করার পরপরই একটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি নিয়েছি। তাই নিজের উপার্জের টাকায় প্রথমবারের মত কুরবানি করার সুযোগ হচ্ছে।

এজন্য আল্লাহর নিকট শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। কোরবানির মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন ও আল্লাহর প্রতি বান্দার ভালবাসার; যে শিক্ষা তিনি দিতে চেয়েছেন তা জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে চাই। মহান রবের সন্তুষ্টির জন্য জান, মাল ও সময়কে উৎসর্গ করতে চাই।

আর এবারের ঈদ পরিকল্পনায় রয়েছে, বাড়িতে সবার জন্য উপহার কিনে দেওয়া, ছোটদের নতুন টাকা দিয়ে সালামি দেওয়া এবং যথাযথভাবে পশু কোরবানির প্রক্রিয়া করা সম্পন্ন করা। কোরবানির গোস্ত গ্রামের অসহায় ও দরিদ্রের মাঝে বিতরণ করা এবং ঈদের আনন্দকে সকলের সাথে ভাগাভাগি করা। 

সারাবছর মেসের পাতলা ডাল ও স্বাদহীন খাবার খেয়ে পার করি। তাই এক ধরনের ফ্যান্টেসি রয়েছে, মায়ের হাতের বাহারি আইটেমের সুস্বাদু ও মজাদার খাবারের প্রতি।

তবে প্রতি ঈদে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যেতাম। কিন্তু সেই ঘুরতে যাওয়াটা এবার হবে না। কারণ এলাকার সব বন্ধুরাই এখন বিবাহিত। তারা তাদের পরিবার ও শশুরবাড়ি নিয়েই ব্যস্ত। তাই বিকালের অবসর সময়টা ঘুমিয়ে পার করার ইচ্ছা আছে। 

ঈদের দু’দিন পরেই আবার ঢাকাতে ফিরতে হবে। সে কথা ভেবে একটু মন খারাপ হচ্ছে। কিন্তু তার থেকেও বেশি আনন্দ হচ্ছে, কারণ একটা লম্বা সময় পর বাড়িতে যাচ্ছি। বাড়িতে গিয়ে আপন মুখগুলো দেখতে পাব, একসাথে সময় কাটাতে পারব; এই তো ঈদ। রবের নিকট প্রার্থনা করি জীবনের প্রতিটি ঈদ যেন পরিবারের সাথে কাটাতে পারি। 

লেখক: শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence