পিতা-মাতার শূন্যস্থানে শিশুর একমাত্র সঙ্গী স্মার্টফোন

পিতা-মাতার শূন্যস্থানে শিশুর একমাত্র সঙ্গী স্মার্টফোন
পিতা-মাতার শূন্যস্থানে শিশুর একমাত্র সঙ্গী স্মার্টফোন  © টিডিসি ফটো

শিশুরা পুষ্পের ন্যায় কোমল। তাদের সহজাত প্রবৃত্তির মধ্যে অন্যতম অনুকরণপ্রিয়তা। একবিংশ শতাব্দীতে সবকিছুই তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর। আর এই ডিজিটাল-স্মার্ট যুগে শিশুর হালচাল অনেকটাই নাজেহাল। পরিবারে পিতা-মাতা ও অন্যান্য সদস্যদের নিজের কাজের ব্যস্ততা শিশুকে করেছে সঙ্গহীনতা। ফলে স্মার্টফোনই হয়ে উঠেছে শিশুর একমাত্র সঙ্গী। প্রযুক্তির সঙ্গে এই মাত্রাতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা ও নির্ভরতা শিশুর করেছে নাস্তানাবুদ অবস্থা এবং সামাজিকীকরণে সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা।

অনেক অভিভাবক শিশুর হাতে স্মার্টফোন দিয়ে তাকে খাবার খাওয়ান, কখনো তাকে ব্যস্ত রাখেন। পরবর্তীতে স্মার্টফোনের প্রতি শিশুর দৃঢ় আসক্তির জন্ম হয়-ফোন ছাড়া খাবার খেতে ,পড়তে ও অন্যান্য কাজ করতে চায় না। এমনকি অনেক শিশুকে পড়তে বসতে বললে শর্ত জুড়ে দেয়—ফোন হাতে দিলে পড়তে বসবে,না হলে না। অথচ অভিভাবক হিসেবে আমাদের মনে রাখা দরকার,স্মার্টফোনের কনটেন্ট কিংবা গেমগুলো শিশুকে কেবল অবাস্তব জগতের সঙ্গে পরিচিত করায়।

ফোনের গেমগুলো স্তরে স্তরে ভাগ করা থাকায় সে এক স্তর থেকে অন্য স্তরে পৌঁছাতে মরিয়া হয়ে ওঠে ।সে উত্তেজিত হতে শুরু করে এবং এ কারণে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।এ সময় অভিভাবকের সাথে খারাপ আচরণ করা হয়ে ওঠে তার মামুলি ব্যাপার। এভাবে বেড়ে ওঠা শিশু বাস্তব জীবন থেকে দূরে সরে যায় এবং পিতা-মাতা ও গুরুজনের আনুগত্য তারা ভুলে যায়।

আরও পড়ুন: অ্যান্ড্রয়েড ফোনই সর্বনাশ করছে স্কুল শিক্ষার্থীদের

ফলশ্রুতিতে পিতা-মাতা ও সন্তানের সম্পর্কে ধরে চির। এটা কোনভাবেই নতুন প্রজন্মের জন্য ইতিবাচক বিষয় হতে পরে না। মোদ্দাকথা হলো, স্মার্টফোনে আসক্ত শিশু প্রকৃতির রূপ, রস, গন্ধের সাথে সখ্য করতে না পারায় বাস্তব জগতের সঙ্গেও পরিচিত হতে পারে না। সমাজের মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, বিপদ-আপদ এসব তার অনুভূতিকে নাড়া দেয় না।

সাধারণত সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় শিশু তার চারপাশের সবার গুণাবলি দ্বারা প্রভাবিত হয়। এ প্রক্রিয়ায় শিশু সামাজিক মানুষে রূপান্তরিত হওয়ার বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে পরিচিত হয়। সমবয়সি সঙ্গী, সহপাঠী আর অন্যান্য শিশুর সঙ্গে মেলামেশা ও খেলাধুলা করার ফলে তাদের মধ্যে সহমর্মিতা,বন্ধুত্ব ও মিলেমিশে থাকার মনোভাব তৈরি হয়। কোন খেলার সাথী আঘাত পেলে তার ব্যথা নিরাময়ে সেবা করা, তাকে বাসায় পৌছে দেওয়া—এসবের মধ্য দিয়ে তারা দায়বদ্ধতা ও সহযোগিতা রপ্ত করে।

পূর্বেই উল্লেখ করেছি শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। খেলাধুলা ও সমবয়সিদের সঙ্গে মেলামেশার ফলে তারা বাস্তব জগতের সঙ্গেও পরিচিত হতে শুরু করে। এছাড়াও প্রকৃতির সঙ্গে সখ্যতার কারণে তারা সহজ সরল সামাজিক মানুষে পরিণত হতে উদ্বুদ্ধ হয়। সমাজের মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, বিপদ-আপদ—এসব শিশুর অনুভূতিকে নাড়া দেয়। তখন মানবিক গুণের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সে বিপদাপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তাদের ব্যথায় ব্যথিত হয়। শিশুর সুষ্ঠু সামাজিকীকরণ সম্পন্ন হলে সে পিতা-মাতা ও গুরুজনের প্রতি আনুগত্য থাকে এবং তাদের শ্রদ্ধা করতে শিখে।

বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ইন্টারনেট নির্ভর কনটেন্ট শিশুর মূল্যবোধ গঠনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।দীর্ঘ সময় মোবাইল ফোন ব্যবহারে শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার উপাদানগুলো উপেক্ষিত হয়। দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ফোনের সংস্পর্শে থাকায় শিশুর দেহে নানাবিধ জটিল সমস্যাও সৃষ্টি হয়।শিশু ঠিক কাদামাটির মতো। আমরা তাকে যে ধাঁচে লালন-পালন করব সেই ভাবে সে বড় হতে থাকবে।

আজকের শিশুই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই অভিভাবক হিসাবে শিশুর সুষ্ঠু সামাজিকীকরণ নিশ্চিতে সচেষ্ট হতে হবে। স্মার্টফোন যেন শিশুর আসক্তির কারণ না হয় সেদিকে দৃষ্টি রেখে, প্রত্যেক অভিভাবকেরই শিশুকে সামাজিক মানুষ সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence