বাংলার সুপার হিরো ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী  © সংগৃহীত

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তি যোদ্ধা, রণাঙ্গনে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে অসংখ্য আহত ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণ বাঁচানোসহ আজকে জাতির যেসব সূর্যসন্তান এই স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়ার নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এবং রাজনীতির বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গনে ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন তাদের শীর্ষেই যার নাম তিনি হলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

বর্তমান বাংলাদেশের ক্রান্তিলগ্নের সুপারহিরো এক নাম, অনন্য কিংবদন্তি ব্যক্তি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর আজ জন্মদিন। ১৯৪১ সালের ২৭ই ডিসেম্বরে জন্ম নেওয়া চট্টগ্রামের কৃতি সন্তানের ৮২তম বছর পূর্ণ হলো।

চট্টগ্রাম জেলার রাউজানে জন্ম নেওয়া এই স্বাস্থ্য হিরোর বাবার শিক্ষক ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেন।পিতামাতার দশজন সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়। ঢাকার বকশীবাজারের নবকুমার স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট উত্তীর্ণের পর তিনি ১৯৬৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং ১৯৬৭ সালে বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস থেকে এফআরসিএস প্রাইমারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। 

আরও পড়ুন: স্থায়ী সনদ ছাড়াই চলছে নর্থ সাউথ-ব্র্যাকসহ ৪৬ বিশ্ববিদ্যালয়

একনজরে এই মহান ব্যক্তিত্বের কৃতিত্ব ও অবদান গুলো দেখে নেওয়া যাক-

মুক্তিযুদ্ধে অবদান:

বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস-এ এফআরসিএস পড়াকালীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি চূড়ান্ত পর্ব শেষ না-করে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার নিমিত্তে আগরতলার মেলাঘরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন এবং এরপরে ডা. এম এ মবিনের সাথে মিলে সেখানেই ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট “বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল” প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন। তিনি সেই স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেক নারীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য জ্ঞান দান করেন যা দিয়ে তারা রোগীদের সেবা করতেন এবং তার এই অভূতপূর্ব সেবা পদ্ধতি পরে বিশ্ববিখ্যাত জার্নাল পেপার “ল্যানসেট”-এ প্রকাশিত হয়।

কিডনি ডায়ালাইসিসে অবদান:

বাংলাদেশে সাধারণ ভাবে একবার কিডনি ডায়ালাইসিসের খরচ ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডাক্তার-ওষুধ মিলিয়ে আরও বেশি পড়ে যায়। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০০ জন কিডনি রোগীর ডায়ালাইসিস করে থাকে। ডা. জাফরুল্লাহ নিজে কিডনির রোগী। ডায়ালাইসিস করেন সপ্তাহে প্রায় তিনবার। সেই দিক থেকে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে চিকিৎসা নিতে আসা এর মধ্যে ১০-১২ শতাংশ দরিদ্র রোগীর ডায়ালাইসিস করা হয় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। 

পুরস্কার ও সম্মাননা:

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি ফিলিপাইন থেকে রামন ম্যাগসাইসাই (১৯৮৫), ১৯৭৪ সালে সুইডিশ ইয়ুথ পিস প্রাইজ লাভ করেন এবং সুইডেন থেকে বিকল্প নোবেল হিসাবে পরিচিত রাইট লাভলিহুড (১৯৯২),  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ইন্টারন্যাশনাল হেলথ হিরো’ (২০০২) এবং মানবতার সেবার জন্য কানাডা থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন। ২০২১ সালে আহমদ শরীফ স্মারক পুরস্কার পান।

বাংলার সুপার হিরো:

স্বাধীন দেশে তিনি হতে পারতেন দেশ সেরা সার্জন। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন চিকিৎসা খাতের প্রধান ব্যবসায়ী। কিন্তু ভিন্ন ধাতুতে গড়া এক লড়াকু মানুষ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। স্বাধীন দেশে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন গণমানুষের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে। সে লক্ষ্যেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন 'গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র' নামক স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান।

স্বাধীনতার পর থেকেই দেশীয় ওষুধ শিল্প গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ। তখন তাকে এই নীতি থেকে সরে এসে দেশের মন্ত্রিত্ব দেয়ার সুযোগ দিলেও তা গ্রহণ করেননি তিনি। পরে তিনি ১৯৮২ সালে প্রবর্তিত বাংলাদেশের ‘জাতীয় ঔষধ নীতি’ প্রবর্তন করে ঔষধ শিল্পের রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে গিয়ে দাড়ান। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনায় এনে স্বল্প মূল্যে বিভিন্ন ঔষধের দাম নির্ধারণ করতে আন্দোলন করেন তিনি।

চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি সাধারণ পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেশের সবচেয়ে কম খরচে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে শিক্ষামূলক সেবার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়সহ গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, গণ প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ইত্যাদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যেখানে বর্তমানে প্রায় প্রতিবছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। 

শুধু চিকিৎসায় নয়, তিনি দেশের ক্রান্তিলগ্নে যেকোনো প্রতিবাদ আন্দোলনে, সে রাজনীতি হোক কিংবা সাধারণ মানুষের অধিকারে অসুস্থ শরীর নিয়েও হুইল চেয়ারে এখনও সামনে থাকছেন সবার সামনে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence