হতাশার চোরাবালিতেই কি ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডার?

বিসিএস
বিসিএস  © ফাইল ছবি

বহুকাল আগ থেকেই এদেশে প্রবাদের মত প্রচলিত বানী হলো- ‘সরকারি চাকরি হলো সোনার হরিণ’। আর এই সোনার হরিণের পেছনেই রাতদিন দৌঁড়ে বেড়ায় এদেশের মেধাবীদের সবচেয়ে বড় অংশ। সময়ের সাথে সোনার হরিণ যেন রুপ নিয়েছে প্লাটিনাম বা ডায়মন্ডের মূল্যমানে। ফলে, এদেশের চাকরির বাজারে সবার লক্ষই একটি সরকারি চাকরি। আর এই সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে চাকরিপ্রার্থী মেধাবীদের প্রথম পছন্দ থাকে বিসিএস ক্যাডার।

এই বিসিএস ক্যাডারের জন্য প্রাথমিক বাছাই থেকে সুপারিশ পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া করে থাকে বিপিএসসি তথা বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন। এছাড়াও দেশের সর্বোচ্চ মানের যে সরকারি চাকরি রয়েছে তার সিংহভাগই সুপারিশ করে থাকে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন।

আমাদের মহান সংবিধানের ১৩৭ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এটি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং এখন পর্যন্ত সকল চাকরিপ্রার্থীর মূল আস্থা এই পাবলিক সার্ভিস কমিশনের উপর। আর প্রতিষ্ঠানটিও নিরবচ্ছিন্নভাবে স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে সবচেয়ে লোভনীয় এই চাকরির জন্য পার্থী বাছাই ও সুপারিশ প্রক্রিয়ার যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে থাকে। কমিশনের সাথে যারা নানাভাবে যুক্ত তারাও তুলনামূলক ভাবে অধিক স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে প্রার্থী বাছাইয়ে মেধাবীদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।

বিভিন্ন পেশা ভিত্তিক এই বিসিএস ক্যাডাররাই মূলত এদেশের আমলাতন্ত্র ও প্রশাসনকে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে; তাই সকল চাকরিপ্রার্থীর প্রথম পছন্দই থাকে বিসিএস ক্যাডার হওয়া। এই চাহিদা শুধু প্রার্থীরই নয় বরং তার পরিবার, আত্মীয় স্বজন, সামাজিক মর্যাদা, এমনকি বিয়ের বাজারেও এর চাহিদা অনন্য। ফলে উচ্চতর তথা স্নাতক পর্যায় থেকেই সবার জোর প্রস্তুতি থাকে বিসিএস ক্যাডার হয়ে নিজের, পরিবার ও দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে দেশ সেবার সুযোগ গ্রহণ করা।

একদিকে শিক্ষার হার বৃদ্ধি অন্যদিকে যেহেতু মেধাবীদের প্রথম পছন্দ বিসিএস ক্যাডার সেহেতু এই চাকরির পাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতাই লক্ষণীয়। নির্মম বাস্তবতা হলো দেশের চাহিদা ও পদ স্বল্পতার কারণে খুব অল্প পরিমাণ প্রার্থীই তারা তাদের স্বপ্ন পূরণে সক্ষম হন। একদিকে এই চাকরি পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর মেধাবীরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে অধিকতর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে তাদের মেধাকে শাণিত করে; অন্যদিকে সর্বশেষ চূড়ান্ত তালিকায় নিজের স্থান অর্জন করতে না পাড়লে ঠিক ততোটাই কষ্ট সহ্য করে স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিতে দেখা যায়।

গত কয়েকটি বিসিএস পরীক্ষায় আবেদন কারীর সংখ্যা ছিল প্রায় চার লক্ষের অধিক, ধীরে ধীরে এই সংখ্যা আগের বছরের রেকর্ড ভাঙছে প্রতিনিয়ত নতুন বিসিএসে। কিন্ত এই চার লক্ষাধিক আবেদনকারীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি বাছাই প্রক্রিয়ায় প্রথমেই ২০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পর্বেই ঝরে যান প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ কারীদের একটি বড় অংশ। ২০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি বাছাইয়ের পর টিকে থাকেন পনেরো থেকে বিশ হাজার মাত্র।

আরও পড়ুন: ৪০তম বিসিএস: প্রথম হওয়া চার প্রকৌশলীর গল্প

বাকিরা আবার নতুন করে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেন পরবর্তী বিসিএসের জন্য। এই প্রিলিমিনারি উত্তীর্ণ পনেরো থেকে বিশ হাজার প্রার্থী সাধারণত পরীক্ষিত মেধাবী হিসেবে স্বীকৃতি পান। এই উত্তীর্ণদের আবার অংশগ্রহণ কর‍তে হয় সাধারণ ও বিষয় ভিত্তিক যথাক্রমে ৯০০ এবং ১১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায়। অর্থাৎ পরীক্ষিত মেধাবীরা এবার নিজেদের মধ্যেই আবার প্রতিযোগিতা করেন। লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫০-৬০ শতাংশ মাত্র উত্তীর্ণ হতে পারেন এবং তারা চূড়ান্ত ভাবে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেন স্বপ্ন পূরণে।

তবে এখানেই তাদের মেধার যুদ্ধ শেষ নয় বরং চূড়ান্ত বাছাইয়ের পথের কাছাকাছি অবস্থান করছেন তারা। এবার লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ২০০ নম্বরের ভাইভা পরীক্ষায় ডাকা হয়। ভাইভা পরীক্ষায় উপস্থিত বুদ্ধি,কথা বলার ধরন, পোশাক-পরিচ্ছদ, রুচি ও মানসিক দৃঢ়তাসহ নানাদিক যাচাই-বাছাই করা হয়। এই যাচাই-বাছাই শেষে ভাইভাতে যারা পাশ করেন তারাই বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বলে গণ্য হন। এত যাচাই-বাছাইয়ের পর এই বিসিএস উত্তীর্ণদের ২০-২৫ শতাংশই কেবল ক্যাডার পদ পেয়ে থাকেন অর্থাৎ ১০০০০ প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় চূড়ান্ত ভাবে উত্তীর্ণ হলেও ক্যাডার পদ পেয়ে থাকেন মাত্র ২০০০ এর কিছু কম বেশি।

ব্যতিক্রম ছাড়া এটাই হয়ে আসছে গত কয়েকটি বিসিএসে।বাকী ৭৫ -৮০ শতাংশই হলো বিসিএস নন-ক্যাডার যারা সাধারণত খালি হাতে ফিরতেন। তাই যারা বিসিএস পরীক্ষার কঠিন ধাপগুলো সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েও পদ স্বল্পতার কারণে চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন না তাদের জন্য সরকার কর্তৃক নন-ক্যাডার বিশেষ নীতিমালা প্রণীত হয়। সরকার কর্তৃক জারিকৃত নন-ক্যাডার পদের নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা-২০১০ এবং সংশোধিত বিধিমালা-২০১৪ অনুযায়ী সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে শূন্য পদের চাহিদা পাওয়া সাপেক্ষে পিএসসি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে চূড়ান্ত সুপারিশ করে। ৩১তম বিসিএস থেকে নন-ক্যাডারে নিয়োগ শুরু হয় এবং উল্লেখযোগ্য হারে শুরু হয় ৩৪তম বিসিএস থেকে।

কিন্ত বিসিএস উত্তীর্ণ হলেও তাদের ভাগ্যে আদৌ চাকরি আছে কি না তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এত গুলো ধাপ পর্যন্ত প্রতিটি বিসিএস শেষ করতে কমিশনের সময় লেগে যায় প্রায় ৪ থেকে ৫ বছর। সম্প্রতি ৩০ মার্চ ২০২২ সালের ফলাফল পাওয়া ৪০তম বিসিএসের ক্যাডারদের নিয়োগ  প্রক্রিয়া এখনও চলমান এবং পঞ্চম বছরেও প্রকাশিত হয়নি এই বিসিএসের কোনো নন-ক্যাডারের সুপারিশ তালিকা। ৪০ তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর।

এই বিসিএসের  প্রিলিমিনারি,লিখিত পরীক্ষা শেষে করোনা ভাইরাস ও অন্যান্য কারণে দুই দফা ভাইভা স্থগিত করা হয়েছে। দেশের মহামারী লাগবে এই বিসিএসের ভাইভা পরীক্ষা স্থগিত করে সম্পন্ন করা হয়েছে পরবর্তী ৪২তম বিসিএসের ডাক্তার নিয়োগের কার্যক্রম। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া ভাইভা শেষ হয় এবছর তথা ২০২২ সালের মার্চে। সুদীর্ঘ এক বছরের অধিক সময় নিয়ে ভাইভার পর চূড়ান্তভাবে ১৯৬৩ জন ক্যাডার পদে মনোনীত করে ফল প্রকাশিত হয়েছে এ বছরের ৩০ মার্চ। ক্যাডার সুপারিশ বঞ্চিত  ৮০০০ এর অধিক প্রার্থী চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও শূন্য হাতে অনিশ্চয়তায় প্রহর গুনছেন।

সবচেয়ে অমানবিক বিষয় হলো, যারা প্রথমে ২০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি, ৯০০/১১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আবারও ২০০ নম্বরের ভাইভা উত্তীর্ণ অর্থাৎ মোট ১৫০০ নম্বরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ  হয়েও পদ স্বল্পতায় ক্যাডার পেলেন না তারা ঝুলে থাকবেন ভাগ্যের উপর। তাকে পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ করতে দিতে হয়েছে জীবনের মহামূল্যবান ৪ থেকে ৫টি বছর কিন্তু তারপরও তাকে নন-ক্যাডার সান্ত্বনা নিয়ে চলে যেতে হতে পারে একেবারেই শূন্য হাতে।

সম্প্রতি দেশ রুপান্তর পত্রিকার এক প্রতিবেদন পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে ২৮তম বিসিএস থেকে ৩৮তম বিসিএস পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজারের অধিক বিসিএস উত্তীর্ণ প্রার্থী কোন চাকরিই পাননি। যে মেধাবীরা ১৫০০ নম্বরের একই সাথে চাকরির পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি নম্বরের প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তাকেও দিন শেষে খালি হাতে ফির‍তে হয়েছে। কিন্ত তারপরও সান্ত্বনা ও আশার আলো জ্বালিয়ে বর্তমান সময়ে বিসিএস নন ক্যাডার থেকে উল্লেখযোগ্য হারে নিয়োগও হচ্ছে। ভাইভা উত্তীর্ণ  সিংহভাগই চাকরির জন্য সুপারিশ পেয়ে আসছিলেন।

একই কারণে ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডারের প্রার্থীরাও আশায় বুক বেধে ছিল গত পাচ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটবে একটি সোনার হরিণ পাওয়ার মধ্য দিয়ে। ফলাফল প্রকাশের পরপরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পদের চাহিদাও জমা দেয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়,বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট সরকারী প্রতিষ্ঠান সমূহ। এত চাহিদা থাকা সত্ত্বেও  ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডার প্রার্থীদের এখনও সুপারিশ করা হয়নি।

অন্যদিকে, এ মাসের ২০ তারিখে বাংলাদেশ কর্মকমিশন নন-ক্যাডার পদের নিয়োগ সংশোধিত (বিশেষ) বিধিমালা-২০২২ এর জন্য  সভা আহবান করে।এতে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তার বরাতে বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত করতে বিসিএস ক্যাডার পদের সাথে নন-ক্যাডার পদেরও সুপারিশ করবে প্রতিষ্ঠানটি। এই নতুন সিদ্ধান্ত ৪৫তম বিসিএস থেকে কার্যকরের কথা রয়েছে। নিসন্দেহে এটি একটি ভাল উদ্যোগ এবং দ্রুত চাকরি প্রার্থীদের অপেক্ষার অবসান ঘটবে।

তাদের এই সিদ্ধান্তে নতুন করে যুক্ত হয় আরেকটি বিষয় আর এটিই মূলত ৪০তমসহ ৪৫ বিসিএসের আগপর্যন্ত পরবর্তী চলমান বিসিএস গুলোর জন্য সংকট তৈরি করে। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে সার্কুলার তারিখের পূর্বে শূন্য হওয়া পদগুলোই কেবল ওই বিসিএসের নন ক্যাডার প্রার্থীরা পাবেন। ফলে, ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডারের জন্য আসা পদও আবার ফেরত পাঠানো হয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরে।

নতুন নিয়মে ফেরত যাওয়া প্রায় সব পদই সংরক্ষণ করা হবে এখনও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না হওয়া পরবর্তী ৪৫তম বিসিএসের জন্য। যেহেতু বিজ্ঞপ্তি তারিখ অনুযায়ী পরবর্তী বিসিএসের নন-ক্যাডার সুপারিশ করা হবে সেহেতু ২০২২ সাল পর্যন্ত বিসিএস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পাওয়া ৪০তম সহ ৪১, ৪৩ এবং ৪৪তম বিসিএসের প্রার্থীরা নামেমাত্র সংখ্যায় সুপারিশ পাবেন।

কারণ, গত ২৯ মার্চ ২০২২-এ প্রকাশিত ৩৮তম নন-ক্যাডারের সর্বশেষ তালিকায় এবছর পর্যন্ত শূন্য পদ সুপারিশ সম্পন্ন হয়ে গেছে।তাছাড়া নিয়ম অনুযায়ী ৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি গত বছর প্রকাশ হওয়ায় এই বিসিএসের প্রার্থীরাও ওই পদে সুপারিশ পাবেন না। বরং এবছরের বাকী পদগুলোও পাবে সম্ভাব্য নভেম্বরে বিজ্ঞপ্তি হতে যাওয়া ৪৫তম বিসিএস। ৪০-৪৪তম পর্যন্ত চলমান বিসিএস নন-ক্যাডার প্রার্থীদের বঞ্চিত হওয়ার বড় কারণ মামলা জটিলতা ছাড়া সিংহভাগ পদ ইতোমধ্যে ৩৭ ও ৩৮ তম থেকে নিয়োগ সুপারিশ করেছে স্বয়ং বাংলাদেশ কর্মকমিশন।

ইতোমধ্যে ফেরত দেয়া হয়েছে ৪০তম বিসিএসের জন্য আসা চাহিদা পত্রও। যদিও গত ২১ জুলাই দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন নিশ্চিত করেছিলেন যে, আগামী নভেম্বরে ৪৫তম বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগ পর্যন্ত সব পদ ৪০তম নন-ক্যাডার প্রার্থীদের থেকে সুপারিশ করা হবে।

মূলত আগের বিসিএস থেকেই এমনটাই হয়ে আসছে যে, পরবর্তী বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত চলমান বিসিএসের নন ক্যাডার সুপারিশ হয়ে থাকে। ফলে, ধরে নেয়া হয় ওই ফল প্রকাশের মধ্য দিয়েই চলমান বিসিএস নন-ক্যাডার সুপারিশের ইতি টানা হয়। অত্যন্ত দুঃখজনক যে পরবর্তী অন্যান্য বিসিএস থেকে ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডারের ক্ষেত্রে হতে যাচ্ছে এটি ব্যতিক্রম।

কারণ, এই বিসিএসের সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী; এমনকি এই বিসিএস চূড়ান্ত ফল প্রকাশ পরবর্তী ননক্যাডার পদের আবেদন প্রক্রিয়াও আগের নিয়মে শুধু আটকে যাচ্ছে ফল প্রকাশের সময় এসে শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্তে। যেই নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে পাঁচ বছর আগের আইনে; সেই নিয়োগের ফলাফল প্রকাশ কিভাবে নতুন আইনের জটিলতায় বাধাপ্রাপ্ত হয় তা আমাদের বোধগম্য নয়।

গতিশীল বাংলাদেশ কর্মকমিশন অবশ্যই তাদের সিদ্ধান্তে ন্যায়পরায়ণ হবে কিন্তু ৪০তম বিসিএস নন ক্যাডারদের ক্ষেত্রে এই নতুন আইন প্রযোজ্য হওয়া কতটা যৌক্তিক সিদ্ধান্ত তা হয়তো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নিতে পারেন। কেননা, এখন থেকে প্রতিটি বিসিএস বিপিএসসি এক বছরে শেষ করতে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে এবং অনেকটা বাস্তবায়নও করে যাচ্ছে কিন্ত ৪০তম বিসিএস এই সুফল কোনোভাবেই পায়নি।

এই বিসিএস এখন পাচ বছরে পা দিয়েছে। করোনা মহামারীতে তারা হারিয়েছে জীবনের মহামুল্যবান দুটি বছর যা পরবর্তী কোনো বিসিএস হারায়নি বা হারানোর সম্ভাবনাও নেই। এই পরিস্থিতিতে তাদের মানবিক বিবেচনায় পদ বাড়িয়ে বেশি নিয়োগের সুপারিশ না করে বরং এই ধরনের সিদ্ধান্ত কার্যকর করাটা আরও অমানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে।

৪০তম বিসিএসের জন্য চাহিদা পাওয়া পদগুলির একটি সুপারিশ করলেই সম্পন্ন হতে পারে এই বিসিএসের পূর্নাঙ্গ প্রক্রিয়া। তাই অল্পের জন্য ক্যাডার বঞ্চিত নন-ক্যাডারের মেধাকে মূল্যায়ন করে একটি কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সরকারের আরও আন্তরিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। পাঁচ বছর ধরে অপেক্ষামাণ এই মেধাবীদের ভাগ্যবিড়ম্বনা এর দায় কে নেবে। তারাতো পরীক্ষিত মেধাবী এবং চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, তাহলে তারা কেন শূন্য হাতে ফিরবেন।

সম্প্রতি বিভিন্ন প্রতিবেদন বলছে জনপ্রশাসনের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির প্রায় তিন লক্ষাধিক নন ক্যাডার পদ শূন্য। এই শূন্য পদ রেখে মেধাবীদের খালি হাতে ফিরে যাওয়া, এই ১৫০০ নম্বরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, এই ৪-৫টা বছরের পরিশ্রম ও অপেক্ষাকে উপেক্ষা করলে মেধাবীরা কোথায় যাবে। তাছাড়া এই নতুন সিদ্ধান্ত শুধু ৪০ তমই নয় চাকুরির অনিশ্চয়তা তৈরী করবে চলমান বিসিএস গুলোতেও।

কেন শূন্য পদ গুলো বছরের পর বছর শূন্য রেখে মেধাবীদের শূন্য হাতে ফেরাতে হবে।লোকবলের অভাবে মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন বিভাগ গুলো যেখানে স্থবির হয়ে আছে,মানুষ সে পাচ্ছে না। যদি ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগের জন্য এসব শূন্য পদ পূরণের চাহিদা চেয়ে কর্মকমিশনে চাহিদাপত্র পাঠিয়ে থাকে তারাই কেন এসব সিদ্ধান্তের কারণে ৪৫তম বিসিএস পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। এ ধরনের আভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত নিয়ে মেধাবীদের ভাগ্যকে অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ফেলে দিলে এই জাতি কি তার দায় এড়াতে পারবে?

বৈশ্বিক করোনার প্রভাবে দেশের চাকরির বাজারেও অনেকটা স্থবির,বাছাই পরীক্ষা নিতে পারেনি অনেক প্রতিষ্ঠান ফলে বেকারত্ব বেড়েছে দ্বিগুণ হারে। তাই বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় নিয়েও যদি ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডারদের নতুন সিদ্ধান্তের বাইরে রেখে দ্রুত সুপারিশ করা হয় তাহলে মেধাবীদের দীর্ঘ অপেক্ষা ও পরিশ্রমের পর তাদের শূন্য হাতে ফিরতে হবে না।

অন্যদিকে, এই মহামারী উত্তর সময়ে পদ পূরণে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বাছাই প্রক্রিয়ায় অর্থ ও সময় ক্ষেপণও করতে হবে না। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, মেধাবীদের মেধার মূল্যায়ন না করলে এই মেধাবীরাই বেকারত্বকে বরণ করে অপরাধচক্রসহ মাদকাসক্ত সমাজে বিলীন হয়ে যেতে পারে। সেই সাথে নিরুৎসাহিত হবে পরবর্তী মেধাবী প্রজন্ম।

তাই বৃহৎ স্বার্থে সিদ্ধান্তটি কার্যকর করবে কি না সেটা অবশ্যই দ্বিতীয় বার বিবেচনায় নিবে এটাই প্রত্যাশা চাকরিপ্রার্থী, তাদের অভিভাবক, পরিবার ও রাষ্ট্র চিন্তকদের। পাশাপাশি মনে রাখতে হবে দেশব্যাপী দীর্ঘ ছাত্র আন্দোলনের সুফল এই ৪০তম বিসিএসটিই দেশের ইতিহাসে শতভাগ মেধাভিত্তিক বৈষম্য ও কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। সেখানে যেন তারা অহেতুক সিদ্ধান্তে বৈষম্যের শিকার এবং আরেকটি ছাত্র আন্দোলনের পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সেদিকেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে  হবে।

লেখক: নাট্যকার ও কলামিস্ট


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence