মান নিয়ন্ত্রণে শর্ত 

২৫ শতাংশের কম নম্বরে বেসরকারি মেডিকেলে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ হচ্ছে

মেডিকেল শিক্ষার্থী
মেডিকেল শিক্ষার্থী  © ফাইল ছবি

দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মান নিয়ন্ত্রণে মেডিকেল কলেজ পরিচালনা বিধিমালায় ব্যাপক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকার। সে অনুযায়ী ২৫ শতাংশের কম নম্বর পেলে বেসরকারি মেডিকেলে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখা হবে। এমন কি মেডিকেল কলেজ বন্ধের সুপারিশও করা হতে পারে।

সূত্র জানায়, নতুন বিধিমালায় বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোকে ৫০টি সূচকে মূল্যায়ন করা হবে। সবগুলো সূচক যথাযথভাবে পূরণ হলে ১০০ নম্বর দেওয়া হবে। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশ নম্বর পেলে শর্ত দিয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজকে পরিচালনার জন্য নতুন করে নবায়ন দিতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) সুপারিশ করবে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর।

৫০ থেকে ৭০  শতাংশ নম্বর পাওয়া মেডিকেল কলেজগুলোতে শর্ত পূরণ করে পুনরায় আবেদন করতে হবে। নম্বর ৫০ শতাংশের নিচে হলে মেডিকেল কলেজগুলোকে নবায়নের সুপারিশ করা হবে না। আর ২৫ শতাংশের কম নম্বর পেলে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধসহ মেডিকেল কলেজ বন্ধের সুপারিশ করবে অধিদপ্তর।

এমবিবিএসের যে সকল বিষয়ে বোর্ড হয় (মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, প্যাথলজি, ফার্মাকোলজি, মাইক্রোবায়োলজি, ফরেনসিক মেডিসিন, কমিউনিটি মেডিসিন, বায়োকেমিস্ট্রি, এনাটমি, ফিজিওলজি, পেডিয়াট্রিকস, অর্থোপেডিকস) সে সকল বিষয়ের ক্ষেত্রে নূন্যতম একজন করে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক থাকতে হবে। আর যে সকল বিষয়ে বোর্ড হয় না সে সকল বিষয়ের ক্ষেত্রে অন্তত পাঁচজন করে শিক্ষক থাকতে হবে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৭২টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এর অধিকাংশই চলছে জোড়াতালি দিয়ে। কলেজগুলোতে শিক্ষক কম। প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ নেই। অবকাঠামোও দুর্বল। পাঠদান ও চিকিৎসাসেবা দীর্ঘদিন ধরে সংকটে ভুগছে। ফলে শিক্ষার্থীরা মানসম্পন্ন শিক্ষা পাচ্ছে না। এ অবস্থায় মেডিকেল কলেজের মানোন্নয়নে কঠোর হচ্ছে অধিদপ্তর। নতুন করে বিধিমালা তৈরি করছে সংস্থাটি। 

জানা গেছে, দেশের শতকরা ৮০ শতাংশ বেসরকারি মেডিকেল কলেজ পরিচালনা নীতিমালার শর্ত পূরণ না করেই কার্যক্রম চালাচ্ছে। শর্ত পূরণ না করা মেডিকেল কলেজগুলোকে নতুন করে নবায়নের সুপারিশ না হলেও প্রভাব খাটিয়ে নবায়ন নিচ্ছেন মেডিকেল কলেজের কর্তাব্যক্তিরা বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। এজন্য বিদ্যমান নীতিমালা আরও কঠোর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

১৯৮৫ সালে দেশে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের মধ্য দিয়ে বেসরকারিভাবে মেডিকেল শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু সে সময় থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কোনো প্রকার বিধিবদ্ধ আইন না থাকায় শুধু নীতিমালার ভিত্তিতেই এসব প্রতিষ্ঠান খেয়াল-খুশি মতো পরিচালিত হচ্ছিল। সম্প্রতি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ পরিচালনার আইন পাস হয়েছে। এখন আইনের বিধিমালা ও প্রো-বিধিমালা তৈরির কাজ করছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর।

‘আমরা বিধিমালায় ৫০টি সূচকের মাধ্যমে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোকে মূল্যায়ন করব। মূল্যায়ন সূচকে যারা ২৫ শতাংশের কম নম্বর পাবে তাদের ওখানে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকবে। সূচক পূরণ না করলে কাউকেই নবায়নের সুপারিশ করা হবে না। শর্ত পূরণ না করায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কয়েকটি মেডিকেল বন্ধের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সবাইকে আইন মেনেই কার্যক্রম চালাতে হবে’—অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা, মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধদপ্তর

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ পরিচালনার আইনে অনেক ফাঁক রয়েছে। এজন্য চিকিৎসা শিক্ষায় নীরব সর্বনাশ ঘটছে। কয়েক বছর ধরেই বেশ কিছু মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ নীতিমালা কিংবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভর্তি স্থগিতসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিলেও নানাভাবে অবৈধ কার্যক্রম বৈধ করে নেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য আইন লাগে। সম্প্রতি আইন তৈরি হয়েছে। তবে এতে সব বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ থাকে না। এজন্য আমরা একটি বিধিমালা এবং প্রো-বিধিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এটি তৈরি হলে দেশের মেডিকেল শিক্ষায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। তখন কেউ চাইলেই আইন পাশ কাটিয়ে মেডিকেল কলেজের নবায়ন নিতে পারবেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিধিমালায় ৫০টি সূচকের মাধ্যমে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোকে মূল্যায়ন করব। মূল্যায়ন সূচকে যারা ২৫ শতাংশের কম নম্বর পাবে তাদের ওখানে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকবে। সূচক পূরণ না করলে কাউকেই নবায়নের সুপারিশ করা হবে না। শর্ত পূরণ না করায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কয়েকটি মেডিকেল বন্ধের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সবাইকে আইন মেনেই কার্যক্রম চালাতে হবে।’

বিধিমালায় যে পরিবর্তন আসছে
মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নিজস্ব জমি ও ফ্লোরস্পেস থাকতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) অধিভুক্তি হালনাগাদ, হাসপাতালে ৫০ জন রোগীর জন্য ২৫০টি বিছানা থাকতে হবে। পরবর্তীতে প্রতি একজন শিক্ষার্থী বৃদ্ধির জন্য ১০টি করে শয্যা বাড়াতে হবে।

শ্রেণিকক্ষ, মিউজিয়াম, ল্যাবের পরিসর ও সরঞ্জাম বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া সার্ভিস রুল, অর্গানোগ্রাম, তিন মাস অন্তর গভর্নিং বডির সভা, কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স স্কিম কার্যক্রম নিয়মিত হতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:১০ হতে হবে। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ শিক্ষক পোস্ট গ্রাজুয়েশন (ফ্যাকাল্টি পর্যায়ের) সম্পন্নকারী হতে হবে। এটি কোনো ভাবেই ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না।

শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। মেডিকেল কলেজগুলোতে পৃথকভাবে শিক্ষার্থীদের হোস্টেল নির্মাণ করতে হবে।

হাসপাতালের ক্ষেত্রে এমবিবিএসের যে সকল বিষয়ে বোর্ড হয় (মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, প্যাথলজি, ফার্মাকোলজি, মাইক্রোবায়োলজি, ফরেনসিক মেডিসিন, কমিউনিটি মেডিসিন, বায়োকেমিস্ট্রি, এনাটমি, ফিজিওলজি, পেডিয়াট্রিকস, অর্থোপেডিকস) সে সকল বিষয়ের ক্ষেত্রে নূন্যতম একজন করে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক থাকতে হবে। আর যে সকল বিষয়ে বোর্ড হয় না সে সকল বিষয়ের ক্ষেত্রে অন্তত পাঁচজন করে শিক্ষক থাকতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ