অভিন্ন নীতিমালা কাউন্সিলের
সরকারি-বেসরকারি সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসিতে মাস্টার্স চালুর সুযোগ
- খাঁন মুহাম্মদ মামুন
- প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:১৫ PM , আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৪৭ PM
দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য ফার্মেসি শিক্ষায় স্নাতকোত্তর (এম ফার্ম বা মাস্টার্স) কোর্স চালু ও পরিচালনা সংক্রান্ত বিস্তারিত নীতিমালা প্রকাশ করেছে ফার্মেসি শিক্ষার তদারক সংস্থা বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল। কাউন্সিলের সভাপতি ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার এবং কাউন্সিলের সচিব মুহাম্মদ মাহবুবুল হক স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। ফলে এখন থেকে দেশের সরকারি ও বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নীতিমালার শর্ত পূরণ সাপেক্ষে স্নাতকের পাশাপাশি পাঠ্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে স্নাতকোত্তরেও।
নতুন নীতিমালার আওতায় এখন থেকে দেশের সকল সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসিতে মাস্টার্স (এম. ফার্ম) কোর্সে শর্ত পূরণ সাপেক্ষে অনুমোদন প্রদান করবে কাউন্সিল। বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল (পিসিবি) কর্তৃক প্রণীত ও অনুমোদিত এই নীতিমালা বাংলাদেশের সকল সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এম. ফার্ম কোর্সের অনুমোদন প্রদানের ক্ষেত্রে কার্যকরী হবে।
ফার্মেসী কাউন্সিল সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, নতুন এ নীতিমালার ফলে শৃঙ্খলা ফিরবে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ফার্মেসি শিক্ষায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ নীতিমালা অনুসরণ করলে উচ্চশিক্ষা স্তরে ফার্মেসি শিক্ষায় গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। কাউন্সিল দেশের উচ্চশিক্ষায় আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে চায় এবং সে লক্ষ্যেই নীতিমালা প্রণয়নসহ অন্যান্য কার্যাদি সম্পন্ন করছে।
নতুন নীতিমালায়, দেশের যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল কর্তৃক অভিস্বীকৃত (অ্যাক্রেডিটেশন) বি. ফার্ম কোর্স চলমান রয়েছে, সে সকল বিশ্ববিদ্যালয় এম. ফার্ম কোর্সের অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে পারবে। এম. ফার্ম থিসিস, নন-থিসিস উভয় কোর্সের ক্ষেত্রে ৪০ ক্রেডিটের বেশি হবে না বলে জানিয়েছে কাউন্সিল। এক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষালয়গুলোকে নিজ উদ্যোগে ফার্মেসি শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে এম. ফার্ম কোর্স কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে। এরপর তা অনুমোদন করবে কাউন্সিল।
এখন থেকে দেশের সকল সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসিতে মাস্টার্স (এম. ফার্ম) কোর্সে শর্ত পূরণ সাপেক্ষে অনুমোদন প্রদান করবে কাউন্সিল। বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল (পিসিবি) কর্তৃক প্রণীত ও অনুমোদিত এই নীতিমালা বাংলাদেশের সকল সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এম. ফার্ম কোর্সের অনুমোদন প্রদানের ক্ষেত্রে কার্যকরী হবে।
স্নাতকোত্তরে বছরে একটি শিক্ষাবর্ষ এবং ক্ষেত্রবিশেষে, কাউন্সিলের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রতি শিক্ষাবর্ষে জানুয়ারি-জুন ও জুলাই-ডিসেম্বর দুটি সেমিস্টার রাখতে পারবে উচ্চশিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো। এক্ষেত্রে এম. ফার্ম (নন-থিসিস) কোর্সের মেয়াদ হবে ০১ (এক) বছর এবং এম. ফার্ম (থিসিস) কোর্সের মেয়াদ হবে ০১ (এক) বছর ০৬ (ছয়) মাস।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোর্স পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল কর্তৃক অভিস্বীকৃত (অ্যাক্রেডিটেশন) বি. ফার্ম কোর্স চলমান থাকা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পূর্ণকালীন শিক্ষক নিয়োজিত থাকতে হবে, তন্মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও গবেষণায় পারদর্শী ন্যূনতম ০১ (এক) জন পিএইচডি ডিগ্রিধারী অধ্যাপক হতে হবে। সেক্ষেত্রে ন্যূনতম ০৪ (চার) জন পূর্ণকালীন শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে ফার্মেসি বিভাগ চালু করতে হবে বলেও জানিয়েছে কাউন্সিল।
প্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান বা বিভাগীয় প্রধানকে অবশ্যই স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মেসি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এবং বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল কর্তৃক ‘এ’ ক্যাটাগরিতে নিবন্ধিত ফার্মাসিস্ট হতে হবে। ফার্মেসির বিষয়সমূহ পাঠদানের জন্য নিযুক্ত শিক্ষককে অবশ্যই ফার্মেসি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হতে হবে। এছাড়াও অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকের সংখ্যার অনুপাত হবে ১:২:৪:১২। আর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর আদর্শ অনুপাত ১:১৫ হবে বলেও জানিয়েছে বিশেষায়িত এ শিক্ষাখাতের তদারক সংস্থাটি।
ফার্মেসি বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক সংখ্যা পূর্ণকালীন শিক্ষক সংখ্যার শতকরা ৪০ (চল্লিশ) এর অধিক হবে না এবং শিক্ষকতা সহকারী বা গবেষণা সহকারী শিক্ষক হিসেবে বিবেচিত হবে না বলে জানিয়েছে কাউন্সিল। খণ্ডকালীন শিক্ষকদের নিয়োগ ও যোগ্যতা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বা বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিলের বিধি অনুযায়ী হতে হবে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়াও শিক্ষক নিয়োগে এবং সম্পৃক্ততায় মানতে হবে বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিলের নির্ধারিত শর্ত।
আরও পড়ুন: শিক্ষক, ল্যাব ও রাসায়নিক সংকট নিয়ে চলছে ফার্মেসি শিক্ষা
এছাড়াও পাঠদান পদ্ধতি নিয়েও বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়েছে কাউন্সিল। সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবস্থা থাকতে হবে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ক্লাসের পাশাপাশি পর্যাপ্ত কুইজ, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন ইত্যাদির। পাশাপাশি তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ক্লাসের ও পর্যাপ্ত কুইজ, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকতে হবে। এছাড়াও নীতিমালায় আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং প্রযুক্তির সাথে শিক্ষার্থীদের পরিচিত করানোর জন্য পর্যাপ্ত ব্যবহারিক শিক্ষা প্রদান উৎসাহ দেওয়া হলেও সুযোগ থাকবে না দূর-শিক্ষণ বা খণ্ডকালীন এম. ফার্ম কোর্স।
নীতিমালায় পরীক্ষা ও মূল্যায়ন সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়েও বিস্তারিত নির্দেশনা জানিয়েছে বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল। এক্ষেত্রে লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক শিক্ষার উপর ভিত্তি করে পরীক্ষাসমূহ গ্রহণ করতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট বিভাগের চেয়ারম্যান বা বিভাগীয় প্রধান অথবা তাঁর ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন শিক্ষক শিক্ষার্থীর প্রকৃত মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে নিয়মিত পরীক্ষা ছাড়াও অতিরিক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে পারবেন।
শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো মিড টার্মে ৩০ শতাংশ, টার্ম ফাইনাল ৫০ শতাংশ, কুইজ ১০ শতাংশ, অ্যাসাইনমেন্ট ও ক্লাস উপস্থিতি ১০ শতাংশ হারে নম্বর প্রদান করবে। এক্ষেত্রে কুইজ, অ্যাসাইনমেন্ট ও ক্লাস উপস্থিতির নম্বর সংশ্লিষ্ট শিক্ষক কর্তৃক প্রদান করতে হবে বলে জানানো হয়েছে ওই নীতিমালায়। তবে উচ্চশিক্ষালয়গুলোকে গ্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বা বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদিত পদ্ধতি। এছাড়াও পরীক্ষা পরিচালনা করার জন্য থাকবে একটি সুনির্দিষ্ট কমিটি; কাউন্সিলের শর্ত অনুসরণ করে যা গঠন করবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
একটি সেমিস্টারে সপ্তাহে একজন শিক্ষার্থীকে ৫০ মিনিট করে ক্লাস সম্পন্ন করতে হবে এক ক্রেডিট সম্পন্ন করতে। অ্যাকাডেমিক কাজের একক হিসেবে সেমিস্টার ক্রেডিট বা সেমিস্টার আওয়ারকে বুঝাবে এবং সমতা হিসেবে ১ বছরের জন্য শিক্ষাবর্ষের মেয়াদকাল ৩৬ সপ্তাহ ও ৬ মাসের জন্য একটি সেমিস্টারের মেয়াদকাল ১৮ সপ্তাহ হবে ফার্মেসি শিক্ষার স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য।
ফার্মেসি বিভাগে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এবং ফার্মেসি বিভাগ থেকে নিয়মিত গবেষণাপত্র প্রকাশ করার জন্য থাকতে হবে লাইব্রেরি ও গবেষণার সুযোগ। এছাড়াও শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণে বিদ্যমান কাঠামো মূল্যায়ন করবে বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিলের অ্যাক্রেডিটেশন ও এডুকেশন কমিটি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসিতে স্নাতকোত্তরে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রার্থীর বি. ফার্ম পরীক্ষায় মোট সিজিপিএ ২.৫০ থাকলে তিনি মাস্টার্সে ভর্তি হতে পারবেন। এছাড়া সরকার কর্তৃক সংরক্ষিত বিদেশি শিক্ষার্থীদের আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী এবং বাকী আসনে শর্ত পূরণ করে শিক্ষার্থী ভর্তি নিতে পারবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সমতা নিরূপণ সনদ প্রদান করবে বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল। তবে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি একটি মৌখিক পরীক্ষা রাখার প্রস্তাবও জানানো হয়েছে নতুন এ নীতিমালায়।
দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রণীত এ নীতিমালায় সার্টিফিকেট নিরীক্ষণ, বিদেশি শিক্ষার্থীদের আবেদন পদ্ধতি এবং সেমিস্টার প্রতি আসন সংখ্যার বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছে কাউন্সিল। উচ্চশিক্ষালয়গুলোর বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী ইউসিজির অনুমোদনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ফার্মেসি বিভাগের আসনসংখ্যা নির্ধারণ করবে কাউন্সিল। এছাড়াও আসন সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পূর্বানুমোদন লাগবে কাউন্সিলের।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স পর্যায়ে এম. ফার্ম চালু করতে প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০ জন শিক্ষার্থী বসতে পারে এমন ২টি শ্রেণীকক্ষ এবং ব্যবস্থা থাকতে হবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসহ মাল্টিমিডিয়া, সাউন্ড সিস্টেম ও প্রজেক্টরের। এছাড়াও হাতে কলমে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বিকাশে থাকতে হবে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, কেমিক্যাল, রিয়েজেন্ট ও জনবলসহ মোট ৫ টি ল্যাব। এসব ল্যাব পরিচালনা করার ক্ষেত্রে অনুসরণ করতে হবে ‘গুড ল্যাবরেটরি প্র্যাক্টিস’ বা জিএলপি। এসব পরীক্ষাগারের আয়তন হতে হবে ন্যূনতম ৬শ’ বর্গফুট এবং সুযোগ থাকতে হবে ২৫জন শিক্ষার্থী একত্রে কাজ করার মতো সুযোগ-সুবিধা। আর পরীক্ষাগারের যন্ত্রাদি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাখতে হবে আলাদা কক্ষ।
ফার্মেসি বিভাগে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এবং ফার্মেসি বিভাগ থেকে নিয়মিত গবেষণাপত্র প্রকাশ করার জন্য থাকতে হবে লাইব্রেরি ও গবেষণার সুযোগ। এছাড়াও শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণে বিদ্যমান কাঠামো মূল্যায়ন করবে বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিলের অ্যাক্রেডিটেশন ও এডুকেশন কমিটি। সেজন্য তারা নিয়মিত পরিদর্শন করবে প্রতিষ্ঠানগুলো এবং কোনো প্রতিষ্ঠানে নীতিমালার শর্ত ভঙ্গ হলে কমিটির সুপারিশক্রমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে কাউন্সিল।