বিএসএমএমইউ’র গবেষণা
২১.৫ শতাংশ হৃদ-কিডনি রোগী ও শিশুর শরীরে কাজ করছে না অ্যান্টিবায়োটিক
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৩, ১২:৫০ AM , আপডেট: ১২ জুন ২০২৩, ১২:৫০ AM
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ২১.৫ শতাংশ হৃদরোগ, শিশু-নবজাতক ও কিডনি রোগীর মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স (অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের পরেও ব্যাকটেরিয়ার টিকে থাকার ক্ষমতা) তৈরি হয়েছে। রবিবার (১১ জুন) বিএসএমএমইউতে আয়োজিত ‘অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ প্রোগ্রামস ফর এনহ্যান্সিং ইনফেকশন কন্ট্রোল ইন এ টার্শিয়ারি কেয়ার হসপিটাল’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ কালে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল বলছে, হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের মধ্যে ৫২ শতাংশ রোগীর শরীরে একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স পাওয়া গিয়েছে। আর এ সংখ্যা দ্রুতহারে বাড়ছে। এসময় শিশু ও নবজাতকদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের ক্রমশ এ বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
একই সাথে অ্যান্টিবায়োটিকের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার বন্ধে খুচরা দোকানে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি মনিটর করা, পোল্ট্রি ও ফিশারিজ সেক্টরে অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নেওয়া এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান করেন তারা।
গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন কালে বিএসএমএমইউ’র ফার্মাকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম বলেন, অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধ শুধু চিকিৎসকদের একার পক্ষে সম্ভব নয়।
পোল্ট্রিশিল্পে উৎপাদিত ৫৫ শতাংশ খাদ্যসামগ্রী—বিশেষ করে মুরগীর মাংস অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত। এছাড়া মৎস্য, পশু ও পোল্ট্রিশিল্পে ১৯ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে কৃষিখাতও এর আশঙ্কামুক্ত নয়—যুক্ত করেন তিনি।
ড. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এসব খাবার খেয়ে মানুষের শরীর সহজেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। ফলে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে রোগ নিরাময় হচ্ছে না। এতে এমনকি রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। বিশ্বে রোগীদের অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্সের কারণে স্বাস্থ্য ব্যয় বছরে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আশঙ্কা, ২০৫০ সাল নাগাদ এ ব্যয় বেড়ে ১০০ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।
এ সময় বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আশঙ্কার বিষয় হলো, বর্তমানে আইসিইউতে রাখা রোগীদের শরীরে রিজার্ভ অ্যান্টিবায়োটিক, যেমন মেরোপেনাম, কাজ করছে না।
অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধ এবং জনচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, এটা বাস্তবায়ন না করতে পারলে, ২০৫০ সাল নাগাদ মানুষের শরীর অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হওয়ার ফলে করোনার চাইতে দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষ মৃত্যুবরণ করবে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কেউ যাতে অ্যান্টিবায়োটিক ক্রয়-বিক্রয় করতে না পারে তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে বলেও জানান তিনি।
বর্তমানে বিশ্বে বছরে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্সে ভোগা রোগীদের মৃত্যুর সংখ্যা সাত লাখ। ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা বেড়ে এক কোটিতে পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা—জানানো হয় সেমিনারে।
প্রসঙ্গত, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স (এআর বা এএমআর) নামেও পরিচিত। যখন রোগ সৃষ্টিকারী কোনো নির্দিষ্ট মাইক্রোবের (ব্যাকটেরিয়াম জীবাণু) বিরুদ্ধে অতীতে কাজ করা কোনো ঔষধ আর কার্যকরী হয় না, তখন তাকে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বলে।