বেফাকে আল্লামা শফীর চেয়ারে কে, সিদ্ধান্ত আজ

আল্লামা আহমদ শফী
আল্লামা আহমদ শফী  © সংগৃহীত

আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুতে শূন্য হওয়া কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক)-এর নেতৃত্ব ঠিক করতে বৈঠকে বসছেন কওমি আলেমরা। আজ শনিবার (৩ অক্টোবর) যাত্রাবাড়ীর কাজলায় অবস্থিত বেফাকের কেন্দ্রীয় অফিসে মজলিসে আমেলার এ বৈঠকেই পরবর্তী সভাপতি নির্বাচিত হতে পারে।

বেফাকের অধীনে ছয়টি স্তরে সারা দেশের ১৩ হাজার মাদ্রাসা রয়েছে। এসব মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ। কওমি শিক্ষা সনদের সরকারি স্বীকৃতি থাকায় এর গুরুত্ব বেড়েছে কয়েকগুণ।

এতদিন হেফাজতের আমীর আল্লামা শাহ্‌ আহমদ শফীর হাতে বেফাকের নিয়ন্ত্রণ ছিল। তিনি মারা যাওয়ার পর কওমি মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষা বোর্ড বেফাকের শীর্ষ পদটিও শূন্য হয়ে পড়েছে।

হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফী একই সঙ্গে বেফাকের সভাপতি এবং কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সরকার গঠিত সংস্থা আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়ার চেয়ারম্যান ছিলেন। বেফাকের প্রধানই হাইয়াতুল উলয়ার চেয়ারম্যান হবেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর এই তিনটি পদই শূন্য হয়ে গেছে।

২০০৫ সালে বেফাকের সভাপতি নির্বাচিত হন আল্লামা আহমদ শফী এবং ২০১৭ সালে নির্বাচিত হন আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়ার চেয়ারম্যান।

কওমি আলেমরা বলছেন, এতদিন হাটহাজারী মাদ্রাসা, বেফাক-হাইয়া ও হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্ব এককেন্দ্রিক থাকলেও এখন তিনটি আলাদাভাবে পরিচালিত হবে। কারণ আল্লামা শফীর মতো সর্বজনমান্য এমন কেউ নেই। তাই এসব পদে সবার গ্রহণযোগ্য এবং রাজনৈতিক কোনো অভিলাষ নেই এমন কাউকে নির্বাচিত করতে হবে।

জানা গেছে, আজ সারা দেশের প্রায় ১৫৭ সদস্য বিশিষ্ট আমেলা কমিটির বেশির ভাগ সদস্য উপস্থিত থেকে প্রত্যক্ষভাবে তাদের সমর্থন প্রকাশ করে সভাপতি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন। তবে আমেলার সদস্যদের নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। এ সবের মধ্যেই আমেলা বৈঠক সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা ও গঠনতন্ত্র অনুসারে আমেলা মিটিং পরিচালনা করাসহ বেশকিছু বিষয় নিয়ে বেফাকের খাস কমিটির একটি জরুরি বৈঠক আহ্বান করা হয়েছিল গত ৩০ সেপ্টেম্বর। মজলিসে খাসের বেশির ভাগ সদস্যের উপস্থিতিতে এ বৈঠকে বেশকিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

বেফাকের সভাপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া কী হবে? জানতে চাইলে বেফাকের প্রভাবশালী সহ-সভাপতি মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস বলেন, শনিবার কোনো নির্বাচন হবে না বরং শীর্ষ দায়িত্বশীলদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে আল্লামা আহমদ শফীর ইন্তেকালে যে শূন্য পদ সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ করা হবে।

তিনি বলেন, আমি মনে করি বেফাকের অতীত ঐতিহ্য, স্বকীয়তা ও কাজের গতি স্বাভাবিক রাখার জন্য এমন কেউ দায়িত্বে আসা উচিত যিনি শুরু থেকে বেফাকের জন্য শ্রম-ঘাম দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের সভাপতি পদে তিন–চারজনের নাম আলোচনায় আছে। তাদের মধ্যে বেফাকের চেয়ারম্যান পদে ঢাকার জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী এবং দারুল উলুম মাদানিয়া যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা মাহমুদুল হাসানের নাম বেশি আলোচনায়।

তবে নূর হোসাইন কাসেমী সরাসরি রাজনৈতিক দল ও ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে যুক্ত থাকায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনি এখনই সভাপতি হতে পারবেন না। এ জন্য তাকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব পদ ছাড়তে হবে।

বেফাকের বর্তমান সহ-সভাপতি ময়মনসিংহের মাওলানা আবদুর রহমান হাফেজ্জী ও ফেনী ওলামাবাজার মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা নুরুল ইসলাম আদীবের কথাও কেউ কেউ বলছেন।

এক্ষেত্রে যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আল্লামা মাহমুদুল হাসান সবদিক বিবেচনায় এগিয়ে রয়েছেন বলে অনেক কওমি আলেমরা মনে করছেন।

সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না থাকার পাশাপাশি সারা দেশের আলেমদের মধ্যে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এছাড়া অতীতে তাকে নিয়ে তেমন বিতর্কও দেখা যায়নি।

সভাপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে বেফাকের মহাপরিচালক মাওলানা যুবায়ের চৌধুরি বলেন, অতীতে মজলিসে আমেলার বৈঠকে কণ্ঠভোটেই সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে। সে হিসেবে অধিকাংশের মতের ভিত্তিতেই এটি নির্ধারিত হবে। তবে কাল যদি কোনো সিদ্ধান্তে না আসা যায়, তাহলে উপস্থিত সবাই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।

সভাপতি পদে সম্ভাব্য কয়জন প্রার্থী রয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এখানে আগে প্রার্থী হওয়ার রেওয়াজ নেই। তবে বিভিন্ন আলোচনায় যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আল্লামা মাহমুদুল হাসান, বারিধারা মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী ও ময়মনসিংহের মাওলানা আবদুর রহমান হাফেজ্জীর কথা শোনা যাচ্ছে।

বর্তমানে বেফাকের কো–চেয়ারম্যান পদে আছেন পুরান ঢাকার জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদ্রাসার মুহতামিম আবদুল কুদ্দুছ। সম্প্রতি তাঁর একটি ফাঁস হওয়া ফোনালাপে বেফাকে অনিয়মের কিছু ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর তিনি সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তিনি গত ২৩ সেপ্টেম্বর বেফাকের সভায় পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

এখন তাঁর পদটি পেতে সক্রিয় আছেন যশোর মাদানি নগর মাদ্রাসার মুহতামিম ও সাবেক সাংসদ মুফতি ওয়াক্কাছ। তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশের সভাপতি। তাঁর দল বিএনপির জোটে থাকলেও নিষ্ক্রিয়। কারণ, নূর হোসাইন কাসেমীর নেতৃত্বাধীন জমিয়ত বিএনপির জোটে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। এ কারণে মুফতি ওয়াক্কাছ এখন হেফাজত ও বেফাকের বিষয়ে আগের অবস্থান বদলে আহমদ শফীর অনুসারীদের সমর্থন নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

বেফাকের মহাসচিব পদে আলোচনায় আছে মাহফুজুল হক ও মুসলেহ উদ্দিনের নাম। মুসলেহ উদ্দিন সিলেটের গওহরপুর মাদ্রাসার মুহতামিম। তিনি বর্তমানে বেফাকের সহ-সভাপতি। তাঁর পক্ষে আহমদ শফীর অনুসারীরা সক্রিয় বলে জানা গেছে। আর মাহফুজুল হক হলেন শায়খুল হাদিস আজিজুল হকের ছেলে। তিনি মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম। বর্তমানে বেফাকের যুগ্ম মহাসচিব।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence