সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের মেলবন্ধনে তা’মীরুল মিল্লাত ক্যাম্পাসে প্রাণবন্ত ইফতার

তা’মীরুল মিল্লাত ক্যাম্পাসে প্রাণবন্ত ইফতার
তা’মীরুল মিল্লাত ক্যাম্পাসে প্রাণবন্ত ইফতার  © টিডিসি ফটো

চলছে পবিত্র মাহে রমজান—রহমত, বরকত ও নাজাতের মাস। এই মাস জুড়ে ইবাদতের পাশাপাশি তৈরি হয় পারস্পরিক সৌহার্দ্যের এক অনন্য আবহ। অন্যান্য ছুটির সময় যখন দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিস্তব্ধতায় ঢেকে যায়, তখন রমজানের ছুটি যেন ভিন্ন এক ব্যতিক্রম। অন্তত দেশসেরা বিদ্যাপীঠ তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা টঙ্গী ক্যাম্পাসের চিত্র তাই বলে।

রমজানের শুরুতেই তা’মীরুল মিল্লাত কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের উদ্যোগে ক্যাম্পাসের জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ ঝাড়বাতি দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়, যা পুরো পরিবেশে এক ব্যতিক্রমী আধ্যাত্মিক অনুভূতি সৃষ্টি করে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাধারণ মুসল্লিরা প্রশংসায় ভাসান এই আয়োজনকে। তবে প্রকৃত প্রাণবন্ততা আসে ৫ রমজানের পর—যখন শুরু হয় ব্যাচভিত্তিক ইফতার মাহফিল।

দাখিল ও আলিম ব্যাচ ভিত্তিক ইফতার যেন এক মিলনমেলা। পুরানো বন্ধু, সহপাঠী  সঙ্গে ইফতারের এ আয়োজন পরিণত হয় স্মৃতিচারণের এক মহা-উৎসবে। রমজানের পুরো মাসজুড়েই প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনো ব্যাচের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

কখনো এটি হয় শহীদ আব্দুল মালেক অডিটোরিয়ামে, কখনো খোলা আকাশের নিচে ছাদে, আবার কখনো মাদ্রাসার পরীক্ষা ভবনের আঙিনায়। কোনো কোনো দিন একাধিক ব্যাচের ইফতার মাহফিলও অনুষ্ঠিত হয়, যা পুরো ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ এনে দেয়।

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) দাখিল ২০১৮ ব্যাচের ইফতার মাহফিল ছিল অনন্য এক উদাহরণ। ঐ ব্যাচের শিক্ষার্থী ফিরোজ মাহমুদ বলেন, ইফতার আমাদের উৎসব, আমাদের ইবাদত। পূর্ববর্তী ব্যাচের বড় ভাইদের ধারাবাহিকতায় আমরাও প্রতিবছর এটি আয়োজন করি এবং আমাদের জুনিয়ররাও এ ধারা অব্যাহত রাখে। এর মাধ্যমে আমরা পুরানো বন্ধুদের সঙ্গে একত্রিত হতে পারি, তৈরি হয় বন্ধনের এক অনন্য মেলবন্ধন।

একইদিনে দাখিল ২০১৯ ব্যাচের ইফতার মাহফিল ছিল, আরিফুল ইসলাম বলেন, দাখিল ২০১৯ এবং আলিম ২০২১ ব্যাচের আমরা সবাই আজ একত্রিত হয়েছি ইফতার মাহফিলের জন্য। তবে এই মাহফিল শুধু আমাদের সাধারণ পুনর্মিলনী নয়, এটি উৎসর্গ করা হয়েছে আমাদের প্রিয় সহপাঠী, জুলাই বিপ্লবের শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর নামে।

আমাদের মাঝে ওসমান নেই, কিন্তু তার স্মৃতি আমাদের হৃদয়ে অম্লান। তার অনুপস্থিতি আমাদের ব্যথিত করে, তবে আমাদের সৌভাগ্য যে, এই মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন তার গর্বিত পিতা। তিনি আবেগময় কণ্ঠে তার সন্তানের স্মৃতিচারণ করেছেন—হলে কাটানো দিন, মাঠের হাসি-আনন্দ, বন্ধুত্বের মুহূর্তগুলো আমাদের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠেছে তার বর্ণনায়। শহীদ ওসমানের পিতা আমাদের সবাইকে তার সন্তানের কবর জিয়ারতের আহ্বান জানিয়েছেন।

দাখিল ২০২০ ও আলিম ২০২২ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আয়োজিত ইফতার মাহফিল ছিল ১২ মার্চ। এ ব্যাচের শিক্ষার্থী সালমান আবদুল্লাহ বলেন, পড়াশোনা ও অন্যান্য ব্যস্ততার কারণে আমরা দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকি। তবে রমজান এলেই ইফতারকে কেন্দ্র করে প্রাণের ক্যাম্পাসে একত্রিত হই, যা আমাদের মধ্যে আত্মিক মেলবন্ধন সৃষ্টি করে।

রমজানের এই ইফতার আয়োজন শুধু ভোজনের উপলক্ষ্য নয়, বরং প্রজন্মের পর প্রজন্ম শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভালোবাসা, সৌহার্দ্য ও ঐক্যের এক অনুপম দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে। রমজানের এই মহিমান্বিত সময়ে এমন আয়োজন তাদের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করে, যা সারা জীবন স্মৃতিতে গেঁথে থাকে।


সর্বশেষ সংবাদ