বিজ্ঞান শিক্ষায় পিছিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা, জনবল সংকটকে দায়ী বোর্ডের

মাদ্রাসা
মাদ্রাসা  © সংগৃহীত

নড়াইলের সদর উপজেলার বরাশুলা কমপ্লেক্স ক্যাডেট ফাজিল মাদ্রাসার মানবিক শাখায় দাখিল ও আলিমে শতাধিক করে শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে বিজ্ঞান শাখায় শিক্ষার্থী সংখ্যা ২০-এর আশপাশে। বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ তথ্যমতে, দেশে ৬ হাজার ৫১১টি মাদ্রাসায় দাখিল আর ১ হাজার ৩৯৪টি মাদ্রাসায় আলিম চালু আছে। এসব মাদ্রাসায় দুটি বিভাগ (মানবিক ও বিজ্ঞান শাখা) চালু রয়েছে। তবে, অধিকাংশ মাদ্রাসায় নেই বিজ্ঞান শাখা।

তবে, যেগুলোতে বিজ্ঞান শাখা আছে বরাশুলা কমপ্লেক্স ক্যাডেট ফাজিল মাদ্রাসার ন্যায় ভুগছে শিক্ষার্থী সংকটে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, শিক্ষকদের যথাযথ ট্রেনিংয়ের অভাব, জনবল সংকট, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং প্রাইভেট-কোচিংয়ে অভিভাবকদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কারণে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান শিক্ষায় পিছিয়ে থেকেই যাচ্ছে। 

আরো পড়ুন: মাদ্রাসায় ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ চালুর উদ্যোগ

জানা যায়, দেশের সব আলিয়া মাদ্রাসার দাখিল ও আলিম শ্রেণিতে মানবিক শাখা চালু রয়েছে। তবে রাজধানীসহ দেশের জেলা শহরের কয়েকটি নামকরা মাদ্রাসায় শুধু বিজ্ঞান বিভাগ চালু রয়েছে। বাংলাদেশ মাদ্রাসা বোর্ড সূত্র বলছে, বেশিরভাগ মাদ্রাসার দাখিল ও আলিম শ্রেণিতে জনবল সংকটের কারণে বিজ্ঞান বিভাগ চালু করতে পারছে না মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। 

এ বিষয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বোর্ডের পরিদর্শক মোহাম্মদ নাছিমুল ইসলাম বলেন, দেশের প্রায় সব আলিয়া মাদ্রাসার দাখিল ও আলিম শ্রেণীতে মানবিক শাখা রয়েছে। রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি নামকরা মাদ্রাসায় বিজ্ঞান শাখা চালু রয়েছে। জনবল সংকটের কারণে বেশিরভাগ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ দাখিল ও আলিম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগ চালু করতে পারছে না। তবে বিজ্ঞান শাখা চালুর ব্যাপারে যেসব মাদ্রাসা নীতিমালা অনুযায়ী ও শর্ত ফিলাপ করতে পারছে তারাই আবেদন জমা দিয়েছে। 

তিনি আরো বলেন, দেশের হাতেগোনা কয়েকটি মাদ্রাসার আলিম ও দাখিল শাখায় বিজ্ঞান বিভাগ চালু রয়েছে। এ ছাড়াও যেসব মাদ্রাসা বিজ্ঞান বিভাগ চালুর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে কিংবা তাদের ছাত্ররা বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে চাচ্ছে তারা আবেদন জমা দিচ্ছে এখনো।

জানা গেছে, মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ১৯৭৮ সালে মাদ্রাসা শিক্ষা অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুনঃগঠন করা হয়। ১৯৭৯ সালের ৪ জুন বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। 

দেশ স্বাধীনের ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে মানবিক, বিজ্ঞান শাখা চালু করা হলেও দেশের বেশিরভাগ মাদ্রাসায় বিজ্ঞান শাখা চালু করতে পারেনি। তবে দেশের হাতেগোনা কয়েকটি নামকরা দাখিল ও আলিম মাদ্রাসায় বিজ্ঞান বিভাগ চালু রয়েছে, আর জেলা শহর বা মফস্বল শহরের যেসব মাদ্রাসায় বিজ্ঞান বিভাগ চালু রয়েছে সেখানেও রয়েছে চরম জনবল সংকট।

নড়াইলের সদর উপজেলার বরাশুলা কমপ্লেক্স ক্যাডেট ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নাসির উদ্দিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমার মাদ্রাসার দাখিলে মানবিক শাখায় নবম ও দশম শ্রেণির মানবিক শাখায় প্রায় ৮০ জন ও আলিম শাখায় প্রায় ১০০ জন। আর বিজ্ঞান শাখায় দশমে প্রায় ২৫ জন ও আলিমে প্রায় ১২ জন। 

তিনি বলেন, প্র্যাকটিল বিষয়ে বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষকরা কম গুরুত্ব দিচ্ছেন। শিক্ষকরাও প্রাইভেটমুখি হচ্ছেন। প্রাইভেট পড়তে খরচ বেশি হওয়ার কারণে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বিজ্ঞান শাখায় পড়াতে চান না। এ ক্ষেত্রে মাদ্রাসা বোর্ড প্রশাসন শিক্ষকদের ট্রেনিং দিলে তারা আরো যুগোপযোগী হবে এবং শিক্ষকরাও দক্ষ হবে ও বিজ্ঞানে পড়তে ছাত্রদের উৎসাহিত করতে পারবেন।

তিনি আরো বলেন, মাদ্রাসাগুলো তদারকি করে মাউশি। কিন্তু তদারকি করার কথা ছিল মাদ্রাসা বোর্ডের। জেলা পর্যায়ের মাদ্রাসার পরিদর্শকরা শুধু মাদ্রাসার করা অভিযোগগুলো তদন্ত করতে আসেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও টিচার ঘাটতি আছে কিনা ইত্যাদি বিষয়ে জেলা পর্যায়ের মাদ্রাসার পরিদর্শকরা তদারকি করেন না।

‘‘এটা করতে পারলে হয়তো এসব সমস্যা দূর হতো। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মাদ্রাসাগুলোর যে টিচার সংকট রয়েছে, তা যদি সঠিক তদারকি হতো তাহলে সংকট কেটে যেত। আমরা চাই মাউশি নয় মাদ্রাসা অধিদপ্তর আমাদের তদারকি করুক। এতে মাদ্রাসার কার্যক্রম ও বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী ও জনবল সংকট কেটে যেত।’’

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডিমলা কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের মাদ্রাসায় বিজ্ঞান শাখায় মানবিকের চেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। কারণ তাদের বিজ্ঞানভীতি রয়েছে। এই ভীতি দূর করতে না পারলে মাদ্রাসায় বিজ্ঞানে শিক্ষার্থী বাড়ানো সম্ভব নয়।


সর্বশেষ সংবাদ