তিন মাসে হাতে কোরআন লিখে চমক সৈয়দপুরের সেলিমের

সেলিম উদ্দিন রেজা (১৯)
সেলিম উদ্দিন রেজা (১৯)  © সংগৃহীত

টানা তিন মাস ছয়দিনের প্রচেষ্টায় নিজ হাতে পবিত্র কোরআন লিখলেন আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদরাসার ছাত্র সেলিম উদ্দিন রেজা (১৯)। সেলিম । তিনি সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের দক্ষিণ অসুরখাই এলাকার মোহাম্মদ ইমান আলীর ছেলে। 

জানা যায়, হাতের লেখা খারাপ থাকায় ক্লাসে হুজুরের পরামর্শে তিনি কোরআন লিখা শুরু করেন। মসজিদের ভেতরে বসেই তিন মাস ধরে পবিত্র কোরআন লিখেছেন সেলিম। ৩০ পারা কোরআন হাতে লিখতে সেলিমের এ-ফোর সাইজের ৪০০টি কাগজ লেগেছে। কলম লেগেছে ৫৫টির মতো। এ কাজে সেলিমের ব্যয় হয়েছে দৈনিক পাঁচ ঘণ্টা।

সেলিম গণমাধ্যমকে জানান, ছোটবেলায় তার হাতের লেখা একেবারেই ভালো ছিল না। এজন্য তাকে মাদরাসার হুজুরেরা অনেক সময় বকেছেন তাকে। মায়ের হাতে পিটুনিও খেতে হয়েছে অনেক। ক্লাসের হুজুরের পরামর্শে প্রথমে কয়েকটি আয়াত এরপর সুরা লিখতে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিই পবিত্র কোরআন হাতে লিখবো। শুরুও করে দেই। তিসমাসের চেষ্টায় পুরো পবিত্র কোরআন হাতে লিখে শেষ করি।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের বয়সী ছেলে মেয়েদের মধ্যে ফেসবুক আসক্তি ব্যাধির মত ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় সময় কারণে–অকারণে বেশির ভাগ সময় আমরা ফেসবুকে সময় দিচ্ছি। এতে আমাদের সময় নষ্ট হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে সৃষ্টিশীলতা, কর্মক্ষমতা। কিন্তু আমি আল্লাহ ও রাসুলের (সা.) সন্তুষ্টি অর্জন ও ফেসবুক ইউটিউব আসক্তি থেকে মুক্ত থাকতে পবিত্র কোরআন লেখায় সময় ও মনযোগ দিয়েছি। আমি ভাইরাল হওয়ার জন্য হাতে পবিত্র কোরআন লিখিনি। তবে এখন ভাবি, আমার এ কাজ দেখে অন্যরা অনুপ্রাণিত হতেও পারেন। আর হাতে লেখা কোরআনটি বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিতে চাই, যাতে আমি যখন থাকব না তখনো আমার এ কাজ মানুষের কাছে সংরক্ষিত থাকবে।

সেলিমের বাবা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, আমার ছেলে সেলিম রেজা যে কাজটা করেছে তাতে আমি অনেক খুশি। আমি দেশবাসীর কাছে আমার ছেলের জন্য দোয়া চাচ্ছি। আমি গরিব মানুষ কোন রকমে ছেলেটাকে পড়াশুনা করাচ্ছি। টাকা পয়সা থাকলে আরও ভালো জায়গায় দিতাম। আমার সেলিমসহ তিন ছেলে বাকি দুই ছেলে অন্যের বাড়িতে কাজ করে আমাদের সংসার চলে। মসজিদে মুয়াজিনের বেতনে তার লেখাপড়ার খরচ চলে।

অসুরখাই জামে মসজিদে সভাপতি মো. ইকবাল হোসেন বলেন, সেলিম অসহায় গরিব পরিবারের সন্তান। পড়ালেখার পাশাপাশি আমাদের মসজিদে সামান্য বেতনে চাকরি করে সে। তার বাবা একজন দিনমজুর। তার দুই ভাই অন্যের বাড়িতে কাজ করে। নিজের প্রচেষ্টায় সে পবিত্র কোরআন শরিফের ৩০ পারাই হাতে লিখেছেন। তার হাতে লেখা পবিত্র কুরআন শরীফ দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসছে। আমরা চাই তাকে সরকারি কোরো সুযোগ-সুবিধা দিলে সে আরও ভালো কিছু করবে সমাজে।

 

সর্বশেষ সংবাদ