হাদি হত্যা মামলা

ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক, বান্ধবী পুনরায় ৪ দিনের রিমান্ডে

ফয়সাল করিম মাসুদ রাহুল দাউদের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, তার ভাই ওয়াহিদ আহমেদ শিপুু ও বান্ধবী মারিয়া আক্তার
ফয়সাল করিম মাসুদ রাহুল দাউদের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, তার ভাই ওয়াহিদ আহমেদ শিপুু ও বান্ধবী মারিয়া আক্তার  © সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ রাহুল দাউদের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, তার ভাই ওয়াহিদ আহমেদ শিপুু ও বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমাকে পুনরায় চার দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে রিমান্ড শেষে রেন্টকার ব্যবসায়ী মো. নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বলকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সিদ্দিক আজাদের আদালত এ আদেশ দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ আসামিদের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর এডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম। 

তাদেরকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠান। রিমান্ড শেষে পূনরায় আসামিদেরকে রিমান্ডে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। রাষ্ট্র পক্ষের প্রসিকিউটর এডভোকেট শামসুদ্দোহা সুমন এ তথ্য নিশ্চিত। রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট শামসুদ্দোহা সুমন আসামিদের রিমান্ড চেয়ে শুনানি করেন।পরে শুনানি শেষে আদালত তাদের ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

এর আগে হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার মামলায়  অভিযোগে গতকাল (১৪ ডিসেম্বর) পল্টন থানায় ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। তবে আদালত সূত্রে জানা গেছে,হাদির মৃত্যুর পরে বর্তমানে এটি হত্যা মামলা হিসেবে দন্ডবিধির অনেক ধারা যুক্ত হয়েছে। সেহেতু এটি এখন হত্যা মামলা হিসেবেই চলবে।

আরও পড়ুন : জাতীয় কবি নজরুলের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত ওসমান হাদি

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, হত্যার পিছনের উদ্দেশ্য উদঘাটন,  জড়িতদের সনাক্তকরণ ও গ্রেফতার সহ হত্যাকান্ডে অর্থদাতাদের সনাক্তকরণে ও এজাহারনামীয়, অজ্ঞাতনামা পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের জন্য এসব আসামিদের পূনরায় রিমান্ড প্রয়োজন। 

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ রাহুল দাউদ (৩৭) সহ অজ্ঞাতনামা আসামি/আসামিরা তৎকালীন সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভানেত্রী এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গসংগঠন সমূহের নেতা-নেত্রী ও অন্যান্য সদস্যগণ অভ্যুত্থানকে হত্যা, গুম ও খুনের মাধ্যমে প্রতিহত করতে চেয়েছিল। উক্ত অভ্যুত্থানে দেশব্যাপী গণমানুষের অংশগ্রহণে স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়। 

২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হয়। ২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানে আহত শরীফ ওসমান হাদি (৩৩), গুরুত্ব ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। তিনি (শরীফ ওসমান হাদি) অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক প্লাটফর্ম ইনকিলাব মঞ্চ গঠন ও উক্ত মঞ্চের মুখপাত্র হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। 

তিনি গণহত্যাকারী বা মানবতাবিরোধী অপরাধী 'বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ' নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন ধরণের বিশ্লেষণমূলক বক্তব্য প্রদান করেন। পরবর্তীতে (শরীফ ওসমান হাদি) বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ বিরোধী বিভিন্ন বক্তব্য ও যৌক্তিক সমালোচনা অব্যাহত রাখেন। তার এই ধরণের কার্যকলাপের কারণে তিনি কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রতিপক্ষে পরিণত হন ও চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন। তার বক্তব্য ও সভা সমাবেশের ভিডিও সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সোশ্যাল মিডিয়ার নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের লোকজনের তীব্র প্রতিবাদ, ক্ষোভ ও হুমকির সম্মুখীন হন। 

আরও পড়ুন : প্রিয় ওসমান হাদি তোমাকে বিদায় দিতে আসিনি : প্রধান উপদেষ্টা

এ ছাড়াও তাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। গত ১১ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষিত হয়। শরীফ ওসমান হাদি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্ব হতেই ঢাকা-৮ আসনের একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনমুখী বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেন। গণহত্যা পরিচালনাকারী/মানবতা বিরোধী অপরাধী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের পলাতক কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ২৪ এর ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বিজয়ের পর হতে প্রকাশ্য ও গোপন ষড়যন্ত্র, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনা, নির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম, নাশকতা, ককটেল বিস্ফোরণ, পেট্রোল বোমা, গান পাউডার দিয়ে আগুন সন্ত্রাস, দেশি ও বিদেশি অস্ত্র গোলাবারুদের যোগানদান, অনলাইন গুজব রটনা ও ভীতি প্রদর্শন ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করা, অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করা, জনমনে আতঙ্ক ও ভীতি তৈরি করা সর্বোপরি আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৬ কে বাঁধা প্রদান এবং আগ্রহী প্রার্থীদের মনোবলে আঘাত হানার মধ্য দিয়ে নির্বাচনকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। 

এরই অংশ হিসাবে মতিঝিল মসজিদ (ওয়াপদা মসজিদ) হতে জুমার নামাজ শেষে নির্বাচনী প্রচারণা সমাপ্ত করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার পথে গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর অনুমান ২ টা ২০ মিনিটে শরীফ ওসমান হাদি কে বহনকারী অটোরিক্সা পল্টন মডেল থানাধীন বক্স কালভার্ট রোডস্থ ডিআর টাওয়ারের সামনে বিজয়নগর পানির ট্যাংকের অভিমুখী পাকা রাস্তার উপর পৌঁছালে তার (শরীফ ওসমান হাদি) পিছন হতে অনুসরণ করে আসা মোটরসাইকেলে থাকা দুষ্কৃতিকারীরা শরীফ ওসমান হাদিকে চলন্ত অবস্থায় হত্যার উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা গুলি করে পালিয়ে যায়।

এতে তিনি (শরীফ ওসমান হাদি) মাথা ও ডান কানের নিচের অংশে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক গুরুতর জখম প্রাপ্ত হন। তাকে তৎক্ষণাৎ তার সঙ্গীয় ও উপস্থিত লোকজন উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরবর্তীতে মুমূর্ষু অবস্থায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করার পর আজ তাকে দাফন করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!