বিজেএস পরীক্ষা: যেমন হবে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের প্রস্তুতি

শাহ বিলিয়া জুলফিকার
শাহ বিলিয়া জুলফিকার  © টিডিসি সম্পাদিত

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়সমূহ অংশে প্রিলিমিনারিতে ১০ নম্বর এবং লিখিততে ১০০ নম্বর নির্ধারিত থাকে, যা অনেক পরীক্ষার্থীর কাছে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ধরা হয়। তবে সঠিক কৌশল, সময়ানুবর্তিতা, হালনাগাদ তথ্য এবং সুন্দর উপস্থাপনা থাকলে তুলনামূলকভাবে সহজেই এ অংশে ভালো নম্বর অর্জন করা সম্ভব। ১৭তম বিজেএস পরীক্ষায় সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত সুব্রত পোদ্দার এ অংশে সফল হওয়ার প্রক্রিয়া ও প্রস্তুতির কার্যকর কৌশল নিয়ে তার অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ শেয়ার করেছেন।বিস্তারিত শুনেছেন শাহ বিলিয়া জুলফিকার। 

প্রিলিমিনারি পরীক্ষায়  প্রস্তুতি:

প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়সমূহের অংশে সাধারণত ৩-৪টি সাম্প্রতিক প্রশ্ন আসে। এজন্য পরীক্ষার ৩-৪ মাস আগ পর্যন্ত কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স নিয়মিত পড়া অত্যন্ত জরুরি। শুধুমাত্র সংক্ষিপ্ত সংবাদ না দেখেই, প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো গভীরভাবে বোঝা এবং বিশ্লেষণ করা গুরুত্বপূর্ণ।এছাড়া লিগ্যাম প্রশ্নব্যাংক থেকে পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নগুলোর বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত কার্যকর। এর মাধ্যমে পরীক্ষার্থী জানতে পারেন কোন ধরনের প্রশ্ন কোন সূত্র থেকে আসছে এবং কোন বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে পড়া উচিত। এটি শুধু প্রস্তুতির দক্ষতা বাড়ায় না, বরং সময় ব্যবস্থাপনায়ও সাহায্য করে।

বিশেষভাবে যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: বৃটিশ ও মুসলিম শাসনকালের ঘটনা, মুক্তিযুদ্ধ ও তার পরবর্তী বিষয়গুলো।

স্মৃতিস্তম্ভ ও সম্মানসূচক খেতাব: জাতীয় গুরুত্ব বহনকারী ভাস্কর্য, স্মৃতিসৌধ এবং ব্যক্তিগত/জাতীয় খেতাব।

ভূগোল ও প্রকৃতি: দ্বীপ, পাহাড়-পর্বত, ঝরণা এবং বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য।

অর্থনীতি ও নীতি: প্রতিবেদন, সমীক্ষা, বাজেট ও নীতিনির্ধারণ সংক্রান্ত তথ্য।

আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক বিষয়: বিভিন্ন দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা, চুক্তি, যুদ্ধ, বিপ্লব এবং বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া।

এভাবে বিস্তারিতভাবে প্রস্তুতি নিলে পরীক্ষার্থী কেবল তথ্য মুখস্থ করবে না, বরং বিশ্লেষণ এবং প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম হবে, যা প্রিলিমিনারি পরীক্ষার উচ্চমানের নম্বর অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


লিখিত পরীক্ষার কৌশল ও প্রস্ততি
বিজেএস লিখিত পরীক্ষায় বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়সমূহ অংশে ১০০ নম্বর নির্ধারিত থাকে। যদিও অনেক পরীক্ষার্থীর কাছে এটি চ্যালেঞ্জিং মনে হয়, সঠিক কৌশল, হালনাগাদ তথ্য এবং সুন্দর উপস্থাপনা থাকলে তুলনামূলকভাবে সহজেই ভালো নম্বর অর্জন সম্ভব। শুধু পরিকল্পনা থাকলেই চলবে না, সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য শ্রম, অধ্যবসায় এবং সঠিক প্রস্তুতি কৌশল অপরিহার্য। এ অংশের প্রস্তুতি এবং লেখার কৌশলকে সাধারণত তিনটি ভাগে সাজানো যায়—প্রথম, কৌশলগত বিষয়,  দ্বিতীয়, কি কি পড়বেন, এবং তৃতীয়, সহায়ক বই ও অন্যান্য উৎস। এ সমন্বিত কৌশল অনুসরণ করলে এ অংশে সফলতা পাওয়া সহজ হয়ে ওঠে।

১. কৌশলগত বিষয়
সময় ব্যবস্থাপনা :পুরো প্রশ্নপত্রের জন্য সময় থাকবে ১৮০ মিনিট। প্রতিটি ১০ নম্বরের প্রশ্নে সর্বোচ্চ ১৮ মিনিট ব্যয় করুন। সময়ের সীমা অতিক্রম করলে পরের প্রশ্নগুলোতে চাপ তৈরি হবে।

প্রশ্ন নির্বাচন ও উত্তরপদ্ধতি 
কোনো প্রশ্ন ছেড়ে আসবেন না। সব প্রশ্নের উত্তর করার অভ্যাস করুন। প্রতিটি উত্তরের শুরুতে ভূমিকা (Introduction), মাঝখানে মূল বিষয়বস্তু (Analysis) এবং শেষে উপসংহার (Conclusion) রাখুন। উত্তরের ভারসাম্য বজায় রাখুন। যেমন: একই মার্কের এক প্রশ্নের উত্তর দুই পৃষ্ঠা আরেকটি এক পৃষ্ঠা যেন না হয়।

উপস্থাপনা কৌশল 
পরিষ্কার হাতের লেখা অত্যন্ত জরুরি। উত্তরে চার্ট, সারণি, মানচিত্র ও হালনাগাদ পরিসংখ্যান ব্যবহার করলে তা অনেক বেশি প্রভাববিস্তারকারী হয়। গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ বা রাষ্ট্রনেতাদের কোটেশন ব্যবহার করুন। লেখায় তথ্যগত যথার্থতা বজায় রাখার পাশাপাশি যৌক্তিক বিশ্লেষণও থাকতে হবে।

অতিরিক্ত কিছু কৌশল 
কালো ও নীল কলম ব্যবহার করতে পারেন, তবে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে। প্রয়োজনে পেনসিল দিয়ে ডায়াগ্রাম বা মানচিত্র আঁকুন। উত্তর লেখার গতি বাড়ানোর জন্য নিয়মিত লেখার চেষ্টা করবেন।

২. কি কি পড়বেন (Study Areas) 

(ক) বাংলাদেশ বিষয়ক 
১. বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি, ভূ-রাজনীতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।
২. সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, সংসদীয় গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য।
৩. স্বাধীনতা যুদ্ধ,  যুদ্ধাপরাধ ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
৪. বাংলাদেশের বর্তমান সামাজিক-অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ (দারিদ্র্য, বেকারত্ব, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন)।
৫. উন্নয়ন কার্যক্রম।
৬. পররাষ্ট্রনীতি “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়”—এ নীতির আলোকে প্রতিবেশী দেশ ও বিশ্বশক্তির সঙ্গে সম্পর্ক।
৭. আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের অবদান: শান্তিরক্ষী মিশন, জলবায়ু কূটনীতি, শ্রম রপ্তানি।
৮. বাংলাদেশের বর্তমান সংকট: বৈদেশিক মুদ্রার চাপ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি ও সমাধানপথ। 

(খ) আন্তর্জাতিক বিষয়ক 
১. বিশ্ব রাজনীতি: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনৈতিক অবস্থান।
২. সমসাময়িক যুদ্ধ ও দ্বন্দ্ব: ফিলিস্তিন ইসরায়েলের, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যের সংকট, দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যু।
৩. গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ও সম্মেলন: প্যারিস চুক্তি, ব্রিকস সম্প্রসারণ, জি-২০ সম্মেলন ইত্যাদি।
৪. আন্তর্জাতিক সংগঠন: জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, IMF, WTO, ASEAN, SAARC, OIC—এর উৎপত্তি, কার্যক্রম ও সংস্কার।
৫. বৈশ্বিক ইস্যু: জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন সংকট, খাদ্য নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ, সাইবার অপরাধ।
৬. আলোচিত ব্যক্তিত্ব ও তাদের ঘোষণা: যেমন-জাতিসংঘ মহাসচিব, মার্কিন প্রেসিডেন্ট, ভারত/চীনের নীতিনির্ধারকরা।
৭. ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা: ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ করিডোর বনাম চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ।
৮. বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক স্বার্থ: বঙ্গোপসাগরের জ্বালানি, রোহিঙ্গা সংকট, কূটনৈতিক টানাপড়েন। 

(গ) ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ

প্রতিটি ইস্যুতে নিজের যুক্তিনির্ভর ব্যাখ্যা লিখতে শিখুন সমাধানমুখী সুপারিশ দিন। বিশ্লেষণে সর্বশেষ রেফারেন্স ও তথ্য ব্যবহার করুন।

৩. সহায়ক বই ও অন্যান্য উৎস 
সহায়ক বই ও অন্যান্য উৎস হিসেবে পরীক্ষার্থীদের জন্য বাজারে প্রচলিত প্রথম সারির প্রস্তুতিমূলক বই অত্যন্ত কার্যকর। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- “নাগরিকদের জানা ভালো” (বিচারপতি হাবিবুর রহমান) এবং “বিশ্বরাজনীতির ১০০ বছর” (তারেক শামসুর রেহমান)। পাশাপাশি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নিয়মিত অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ, যা কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া সম্পাদকীয় ও সংকলিত নোটও কার্যকর, যেমন হাসান জাহিদের MENs মাসিক সম্পাদকীয় সমাচার, মুহিদ’s সম্পাদকীয় সমাচার এবং আলমগীর হোসেনের Handbook, যা বিষয়বস্তুর বিশ্লেষণ, প্রাসঙ্গিক তথ্য এবং ব্যবহারযোগ্য কৌশল প্রদানে সাহায্য করে।


সর্বশেষ সংবাদ