সপ্তদশ বিজেএস পরীক্ষা

হতাশ সুপারিশপ্রাপ্ত ১০২ বিজেএস ক্যাডার, ছয় মাসেও হয়নি গেজেট

সহকারী জজ
সহকারী জজ  © এআই সম্পাদিত

চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি সপ্তদশ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষা থেকে ১০২ জনকে সহকারী জজ (বিজেএস ক্যাডার) হিসেবে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ করেছিল বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন। সিভিল সার্জন কর্তৃক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষে এসব প্রার্থী এখন যোগদানের অপেক্ষায় রয়েছেন। চূড়ান্ত সুপারিশের ছয় মাস পরও এখনো তাদের নিয়োগের প্রজ্ঞাপন (গেজেট) জারি না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন সুপারিশপ্রাপ্ত এসব বিজেএস ক্যাডার। আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করে যোগদানের দাবি জানিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন সূত্রে জানা যায়, সপ্তদশ বিজেএস নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল ২০২৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি। একই বছরের ৪ মে অনুষ্ঠিত হয় প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। এরপর লিখিত পরীক্ষা নির্ধারিত ছিল জুলাই মাসে, কিন্তু তা স্থগিত হয়ে শুরু হয় ১৬ অক্টোবর। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় ৩০ ডিসেম্বর। এরপর চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে মৌখিক পরীক্ষা। পরে ২৩ ফেব্রুয়ারি ১০২ প্রার্থীকে সহকারী জজ পদে নিয়োগের সুপারিশ করে কমিশন।

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের সচিব পদটি বর্তমানে খালি রয়েছে। আগে যিনি দায়িত্ব পালন করতেন সম্প্রতি তিনি অন্যত্র বদলি হয়েছেন। তবে কমিশনের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) এ জি এম আল মাসুদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব একজন প্রার্থীর পরীক্ষা নেওয়া। আমরা আমাদের দায়িত্ব শেষ করে সরকারের কাছে পাঠিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা শেষে আমরা সরকারের কাছে প্রার্থীদের বিষয়ে সুপারিশ পাঠাই। এরপর আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য যাচাই-বাছাই করে এবং এনএসআই ও এসবিতে পাঠায়। প্রার্থীদের জেলায় যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হওয়ার পর সরকার চূড়ান্তভাবে গেজেট প্রকাশ করে।’

চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্ত কয়েকজন প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২৩ এপ্রিল তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতাল থেকে বিভিন্ন টেস্টের (ডোপ, ব্লাড ও এইচআইভি) রিপোর্ট সংগ্রহ করে ঢাকার তিনটি সরকারি হাসপাতালে (সোহরাওয়ার্দী, সলিমুল্লাহ ও ঢামেক) রোল নম্বর ক্রমিক অনুযায়ী জমা দিয়েছিল। এরপর তাদের ভেরিফিকেশনের কাগজপত্রও জমা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। এরপর কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে, তারা আর জানেন না। তবে তারা দ্রুত গেজেট প্রকাশ চান।

জানা গেছে, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে আইন ও বিচার বিভাগ এই গেজেট প্রকাশ করে থাকে। এই বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সপ্তদশ বিজেএসের চূড়ান্ত উত্তীর্ণদের তালিকা কমিশন থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে চলে যায়। সেখানে উত্তীর্ণদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রক্রিয়াটি এক মাসের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলে সময় নিয়েছে প্রায় ৬ মাস। সম্প্রতি তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে এসেছে। তারা সেটা সঙ্গে সঙ্গে ভেরিফিকেশনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠিয়ে দিয়েছে। এরপর উত্তীর্ণদের ভেরিফিকেশন করতে জেলায় জেলায় পাঠানো হয়েছে।

আইন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রক্রিয়াটি শেষ করতে বেশি সময় লেগেছে। আমাদের এখানে আসার পরপরই সেটি আমরা ভেরিফিকেশনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফরোয়ার্ড করেছি। এখন স্বরাষ্ট্র সচিব যদি জেলার এসপিদের (পুলিশ সুপার) বলে দেন, দ্রুত প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে। তাদের ভেরিফিকেশনের প্রতিবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে এলে সঙ্গে সঙ্গে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করে দেওয়া হবে।’

সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা বলছেন, ‘সরকারের সদিচ্ছা থাকলে দ্রুতই গেজেট প্রকাশ করে তাদের নিয়োগ দেওয়া সম্ভব। তা না হলে অনিশ্চয়তা বাড়বে, আর বিচার ব্যবস্থার চাপও কমবে না।’

দ্রুত গেজেট চেয়ে এক প্রার্থী বলেন, ‘আমাদের নিয়োগ বিলম্বিত হওয়ায় ব্যক্তিগত জীবনে যেমন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তেমনি দেশের বিচারব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশে প্রায় ৪৬ লাখ মামলা বিচারাধীন। আমরা যদি দ্রুত যোগ দিতে পারি, তবে মামলার জট কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারব।’

বিচার বিভাগ–সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ‘বিচারক সংকট বাংলাদেশের আদালত ব্যবস্থার দীর্ঘদিনের সমস্যা। জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে শুরু করে সহকারী জজ আদালতগুলোতে মামলার চাপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। জনবল সংকটের কারণে বিচারকরা ন্যূনতম সময়ের ভেতরে মামলা নিষ্পত্তি করতে পারছেন না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, ‘প্রতিটি মামলার পেছনে আছে মানুষের ভোগান্তি, অপেক্ষা আর ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা। নতুন ১০২ সহকারী জজ যোগ দিলে এই চাপ কিছুটা হলেও কমবে। তাই সরকার ও প্রশাসনের উচিত দ্রুত গেজেট প্রকাশ করে তাদের নিয়োগ নিশ্চিত করা।’


সর্বশেষ সংবাদ