আইইউটির উগান্ডার ছাত্র আব্দুল্লাহর কাছে শৈশবের ঈদ ‘জাদুকরী’
আফ্রিকান দেশ উগান্ডা থেকে বাংলাদেশের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে পড়তে তিন বছর আগে এদেশে এসেছেন আব্দুল্লাহ। তিনি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ালেখা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র তিনি। জীবনের এ পর্যায়ে এসে পড়াশোনার জন্য নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে তিনটি ঈদ তিনি বাংলাদেশে কাটিয়েছেন। বাংলাদেশ ও উগান্ডায় তার স্মৃতির কথাগুলো জানাচ্ছেন তাওফিকুল ইসলাম হিমেল।
* আপনার সম্পর্কে জানতে চাই।
আব্দুল্লাহ: আমি উগান্ডা থেকে এসেছি। বর্তমানে বাংলাদেশে পড়াশোনা করছি ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়টির অনার্স চতুর্থ বর্ষে আমার পাঠদান চলছে।
* বাংলাদেশে আপনি কত বছর যাবৎ রয়েছেন?
আব্দুল্লাহ: আমি উগান্ডা থেকে প্রায় ৩ বছর ধরে দূরে আছি।
* ঈদের দিন আপনি কী করেন, কতটা ব্যস্ত থাকেন?
আব্দুল্লাহ: ঈদের দিন আমি সকালে ঈদের নামাজ আদায় করি। এরপর বন্ধু ও সহপাঠীদের সাথে সময় কাটাই। আমরা প্রায়ই ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরি করি এবং তা অন্যের সাথে শেয়ার করি। কমিউনিটি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করি এবং ভিডিও কলে পরিবারের সাথে সংযুক্ত থাকি। এটি একটি ব্যস্ত দিন। যা উদযাপন এবং প্রিয়জনদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে কেটে যায়।
* ঈদুল আজহা থেকে ঈদুল ফিতর অনেকটাই ভিন্ন। এই ঈদ কীভাবে উদযাপন করেন?
আব্দুল্লাহ: ঈদুল আজহা কোরবানি রীতিতে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। যা নবী ইব্রাহিমের পুত্র নবী ইসমাঈলকে কোরবানির ইচ্ছার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। অন্যদিকে রমজান শেষে আসে ঈদুল ফিতর। এছাড়া দুই ঈদের ভিন্ন ভিন্ন অনেক পার্থক্য রয়েছে।
* সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কোন দেশের ঈদ উদযাপন আপনার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
আব্দুল্লাহ: অবশ্যই আমি আমার নিজ দেশ উগান্ডাকে এখানে প্রথম গুরুত্ব বলে বিবেচনা করবো। সেখানকার ঐতিহ্য, রীতিনীতি এবং কমিউনিটির সম্পর্ক আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। তবে, বাংলাদেশে পড়াশোনা করার ফলে এখানেরও আমি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। এটাও আমাকে অনেক বেশি টানে।
* পরিবারের বাইরে বিদেশে ঈদ আপনার কাছে কেমন?
আব্দুল্লাহ: পরিবার ছাড়া বিদেশে ঈদ উদযাপন করা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং এবং কখনও কখনও বেদনাদায়ক। এমন গুরুত্বপূর্ণ আচার-অনুষ্ঠানে পরিবারের অনুপস্থিতি নিজের কাছে শূন্যতা তৈরি করে। তবে, এখানে পড়াশোর জন্য দীর্ঘদিন থাকার ফলে বাংলাদেশেও একটা কমিউনিটি তৈরি হয়েছে। তাদের সঙ্গে এমন বিশেষ দিনগুলো উদযাপন করা যায়। এতে কিছুটা হলেও পরিবারের সঙ্গে না থাকার ব্যথা ভুলে থাকা যায়।
* এমন বিশেষ দিনগুলোতে পরিবারকে কতটা মিস করেন?
আব্দুল্লাহ: পরিবার ছাড়া এমন উৎসবগুলো উদযাপন আমার কাছে ব্যথাতুর। আমি ছাড়াও আমার বাড়ির উষ্ণতা, ভালোবাসা এবং পরিচিত ঐতিহ্যগুলো সেখানে নিয়ম করেই হচ্ছে। প্রতিটি মুহূর্ত, সকাল থেকে সন্ধ্যা নিয়ম করে হচ্ছে। বিশেষ দিনগুলোতে আমার দেশের কথা অনেক বেশি মনে পড়ে।
* শৈশবের ঈদ সম্পর্কে বলুন। এখনও শৈশবের কোনো ঈদের স্মৃতি মনে পড়ে?
আব্দুল্লাহ: শৈশবের ঈদগুলো ছিল জাদুকরী। আমি এখনো স্মরণ করি, নতুন কাপড় পরে সকালে উঠে মসজিদে যাওয়ার কথা। আমার মায়ের হাতে তৈরি করা বিশেষ খাবার। কাজিনদের সাথে খেলা করা এবং ঈদি (উপহার) পাওয়া ছিল কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত। এই স্মৃতিগুলি মূল্যবান এবং আমি এগুলো গভীরভাবে মিস করি।
* ঈদুল আজহার প্রধান শিক্ষা কী হওয়া উচিত?
আব্দুল্লাহ: ঈদুল আজহার প্রধান পাঠ হলো ত্যাগ, আনুগত্য এবং দানের প্রতি গুরুত্ব। এটি আমাদের নিঃস্বার্থ হতে, গরিব-দুঃখীদের পাশে দাঁড়াতে উদ্বুদ্ধ করে। এ ঈদ আমাদের উদার হতে শিক্ষা দেয়। এই ঈদ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের মূল্যবোধগুলোকে গভীরভাবে স্মরণ করিয়ে দেয়।