শিক্ষার মানোন্নয়নের কাজ প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করতে হবে

অধ্যাপক ড. এম রিজওয়ান খান
অধ্যাপক ড. এম রিজওয়ান খান  © টিডিসি ফটো

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম রিজওয়ান খান; যিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়েই পরপর তিন মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। যে নজির সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সচারচার দেখা যায়নি। সম্প্রতি গুণী এই অধ্যাপকের মুখোমুখি হয়েছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। কথা শুনেছে শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে তাঁর চিন্তা-পরিকল্পনা, দুই দশক পেরোনো ইউআইইউ’র অর্জন-সফলতা ও উচ্চশিক্ষার নানা বিষয় নিয়ে। পাঠকদের জন্য সেই আলাপচারিতা তুলে ধরা হলো। 

আপনার মাস্টার্স ও পিএইচডি'র গল্প জানতে চাই। বিশেষ করে জানতে চাই— গবেষণার বিষয়বস্তু স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন, অ্যান্টেনা ডিজাইন, ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ন্যানো স্ট্রাকচার সম্পর্কে। 
অধ্যাপক এম. রিজওয়ান খান: ১৯৮২-৮৩ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন থেকে অপটিক্যাল কমিউনিকেশন বিষয়ে মাস্টার্স করেছি। তখন অপটিক্যাল কমিউনিকেশনের ব্যাপক চাহিদা ছিল। তবে বাংলাদেশে বিষয়টি তখনও নতুন বিধায় দেশে তেমন গবেষণার সুযোগ ছিল না। সেজন্য স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন অ্যান্ড অ্যান্টেনা ডিজাইনের ওপর পিএইচডি করেছিলাম।

পিএইচডি পর মনে হলো—গবেষণার জন্য এ বিষয়টি যথেষ্ট নয়। সেজন্য ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসগুলোর ন্যানো স্ট্রাকচারকে বেছে নিয়েছিলাম। ন্যানো স্ট্রাকচার তখনও প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল। ফলে এ বিষয়ে ব্যবহারিক অ্যানালাইসিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, গবেষণারও পর্যাপ্ত সুযোগ ছিল। তখন এটি নিয়ে কাজ করি।

এমআইটি-হার্ভার্ডের মতো গবেষণাগারের সুযোগ পান ইউআইইউ’র শিক্ষার্থীরা। ছবি: সৌজন্যে প্রাপ্ত

গত ২০ বছর যাবৎ জ্বালানি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে কাজ করছেন। এখাতে বাংলাদেশের অর্জন ও সম্ভাবনা কেমন? 
অধ্যাপক এম রিজওয়ান খান: যখন নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে কাজ শুরুর পর কী ধরনের উৎস ব্যবহার করব—সেটি নির্ধারণ বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তখন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কাজ শুরু করতে হয়েছে, কাজ করতে অনেক বাধা এসেছে; তবে সবকিছু মোকাবেলা করেই দেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত আজ এতদূর এসেছে। এখন আমরা সৌর প্যানেল ব্যবহার করে রান্নাও করতে পারি, যা সাধারণ চুলা থেকে বেশি সাশ্রয়ী।

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে গবেষণা আবশ্যক হলেও দেশের তরুণরা গবেষণায় আগ্রহ খুঁজে পায় না। কেন? 
অধ্যাপক এম রিজওয়ান খান: প্রযুক্তি পরিবর্তন হচ্ছে। তরুণরা নানা ধরনের প্রযুক্তিতে আকৃষ্ট হচ্ছে। কেউ মোবাইলে ভিডিও গেম খেলছে; এ থেকে তাদের আটকানো যাবে না। তবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আগে পৃথিবী কী ছিল, বর্তমানে কী হয়েছে এবং ভবিষ্যতে কী হতে পারে— তরুণদের এসব বোঝাতে হবে।

তরুণদের জন্য গবেষণার ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে, সুফল বোঝাতে হবে। তরুণদের ভালো একটি পরিবেশ দিতে পারলে তারা গবেষণায় আগ্রহ দেখাবে। বাংলাদেশে ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের গবেষণায় আগ্রহী করতে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে—যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

দেশের স্নাতক-স্নাতকোত্তর সনদধারীদের একটি বড় অংশই বেকার এবং যারা চাকরি করছেন, তাদের বেতনও বেশ কম। কারণ কী? উত্তরণের উপায় আছে কিনা? 
অধ্যাপক এম রিজওয়ান খান: এদেশে গ্র্যাজুয়েটদের সংখ্যা বেশি এবং তারা মানসম্মত শিক্ষাও পাচ্ছে না। ফলে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের চাকরি দেন না। এছাড়া আমাদের স্নাতক-স্নাতকোত্তরের ডিগ্রিধারীরা কর্মক্ষেত্রের জন্য কতটা উপযোগী—তা ভাবতে হবে। দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করতে হবে এবং তা কাটিয়ে উঠতে হবে। যদিও বিষয়টি অনেক কঠিন, তবে সম্ভব। গ্র্যাজুয়েটদের শিক্ষার মান আরেকটু উন্নত করতে পারলে এ সমস্যা থাকবে না।

নিয়োগকর্তারা দক্ষ কর্মী খোঁজেন, বিপরীতে শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফলে পরও চাকরির বাজারে প্রবেশ করতে পারছে না। এটাকে কীভাবে দেখছেন?
অধ্যাপক এম রিজওয়ান খান: এখানে অনেকগুলো বিষয় জড়িত। যারা এসএসসি-এইচএসসি উত্তীর্ণ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছেন, তাদের শিক্ষার মান আশানুরূপ নয়। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অষ্টম শ্রেণির বইয়ের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেও তারা উত্তর পারেন না। দেশে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার মান খারাপ হওয়ায় তারা গ্র্যাজুয়েট হয়েও খুব ভালো করতে পারছে না। দেশের শিক্ষার মান শুরু থেকে উন্নতি করতে হবে তথা প্রাথমিক পর্যায় থেকে স্কুল-কলেজ পর্যায় পর্যন্ত ভালো করতে হবে। তবেই ভালো গ্র্যাজুয়েট তৈরি করা যাবে এবং সমস্যার সমাধান হবে।

আরও পড়ুন: শিক্ষাবিদ, দক্ষ প্রশাসক কিংবা বরেণ্য গবেষক— সবই মানানসই  ড. এম রিজওয়ান খানের সঙ্গে

দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও ব্যবহারিক শিক্ষা হাতে-কলমে দিতে পারছে না। শিক্ষার্থীদের শিখন-শেখানোর জন্য আমাদের করণীয় কী? 
অধ্যাপক এম রিজওয়ান খান: স্কুল-কলেজে ব্যবহারিক শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে—তবে খুব বেশি না। কারণ ইংরেজি মাধ্যমের ‘ও’ লেভেল কিংবা  ‘এ’ লেভেলে ব্যাবহারিকে কম গুরুত্ব দেওয়া হলেও তারা ভালো করছে। তাদের মৌলিক শিক্ষার ভিত শক্তিশালী। ছোটবেলা থেকেই শিক্ষার্থীদের সাধারণ বিজ্ঞান, ইংরেজি এবং গণিতের ভিত শক্ত করতে হবে। জোর দিতে হবে মৌলিক শিক্ষায়। শেখানোর ক্ষেত্রে কোনো অপূর্ণতা রাখা যাবে না। শিক্ষার্থীদের নিজেকে অন্যদের সামনে উপস্থাপন করা শেখাতে হবে। 

ইউআইইউতে সময়োপযোগী গবেষণা সরঞ্জাম কতটুকু রয়েছে এবং এই খাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় কেমন?
অধ্যাপক এম রিজওয়ান খান: বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে গবেষণায় খুব বেশি অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় না। গবেষণার ক্ষেত্রে ইউআইইউ উদার প্রতিষ্ঠান। এখানে একটি গবেষণার জন্য ২৫ লাখ টাকা পর্যন্তও অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। মূলত, গবেষকদের প্রস্তাবনা দেখেই বাজেট প্রদান করা হয়। ফলে বাজেট থেকেই গবেষণার প্রয়োজনীয় সবকিছু করা যায়।

পূর্বের তুলনায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণায় বাজেট বাড়িয়েছে ইউজিসি। এরপরও দেশে কাঙ্ক্ষিত মানের গবেষণা হচ্ছে কী? আপনার অভিমত জানতে চাই।
অধ্যাপক এম রিজওয়ান খান: গবেষণার জন্য বাজেট গুরুত্বপূর্ণ। তবে শুধু বাজেট দিলেই ভালো মানের গবেষণা হবে না। গবেষণায় সফলতার জন্য গবেষকদের আগেই তার মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানাতে হবে।

ইউজিসির প্রদেয় ফান্ডের দুর্বলতা হচ্ছে— সেখানে গবেষণা পদ্ধতি সম্পর্কে কোনো ধারণা দেওয়া হয় না। ফলে অর্থ খরচ হলেও তার ফল আসে না। গবেষণার সঠিক মূল্যায়ন প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত হলেই মানসম্পন্ন গবেষণা হবে।

বর্তমানে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় র‌্যাংকিংয়ের যে আলোচনা—তা কেবলই অবস্থানকেন্দ্রিক নাকি অন্য কোনো বিষয় আছে?
অধ্যাপক এম রিজওয়ান খান: র‌্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্বলতা বোঝা যায়। র‍্যাংকিংয়ে এগোতে হলে অবশ্যই গবেষণায় ভালো করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যত বেশি গবেষণা হবে, র‍্যাংকিংয়ে তত ভালো করা যাবে। এক্ষেত্রে বাজেট জরুরি। বাজেট ছাড়া গবেষণা হবে না।

ইউআইইউতে যৌথ গবেষণার সুযোগ কতটুকু—দেশের বাইরের কেউ এখানে গবেষণা করতে চাইলে কীভাবে যুক্ত হবে?
অধ্যাপক এম রেজওয়ান খান: ইউআইইউ এ পর্যন্ত ১১০টি গবেষণা প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। এর মধ্যে দেশীয় ৪৭টি এবং বিদেশি ৫১টি পার্টনার প্রতিষ্ঠান। এখানে ইউআইইউ’র একজন গবেষককে সাথে রাখার শর্তে দেশ ও দেশের বাইরের যে কেউই গবেষণা করতে পারবেন। সেজন্য গবেষণা প্রস্তাব আহ্বানের প্রেক্ষিতে প্রস্তাবনা জমা দিতে হবে এবং যাচাই-বাছাইয়ের পর তা নির্ধারিত কমিটির মাধ্যমে চূড়ান্ত হবে।

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাস। ছবি: সৌজন্যে প্রাপ্ত

দেশে প্রায়ই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে। উত্তরণের উপায় কী?
অধ্যাপক এম রিজওয়ান খান: ঢালাওভাবে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মান খারাপ’ বলা যাবে না। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখার মান খারাপ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভালো তদারকি করা গেলে মান নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এখানে সেভাবে মান নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এবং অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়বে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence