ভুটান থেকে হাবিপ্রবিতে এসে বন্ধুদের নতুন পরিবার পেয়েছি
উচ্চশিক্ষার জন্য নিজ দেশ ভুটান পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন জর্জি গিল্টশেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২য় ব্যাচের শিক্ষার্থী। এখানে পড়তে এসে গিল্টশেন ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য্য, শিক্ষার মনোরম পরিবেশ, প্রকৃতি ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্তরিকতায় আকৃষ্ট হয়েছেন। সম্প্রতি তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এসেছে ভুটান থেকে বাংলাদেশে পাড়ি জমানোর গল্প। গিল্টশেনের কথাগুলো শুনেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাবিপ্রবি প্রতিনিধি রিয়া মোদক।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: উচ্চশিক্ষার জন্য হাবিপ্রবিকে কেন বেছে নিয়েছিলেন?
জর্জি গিল্টশেন: আমি শুনেছিলাম হাবিপ্রবি বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় তুলনামূলকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন একটি ক্যাম্পাস। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান, শিক্ষকদের দক্ষতা এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ-সুবিধার কথা শুনে আমি এখানে পড়ার জন্য আগ্রহী হই।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ভুটানের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে বলুন। যেমন এখানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক...
জর্জি গিল্টশেন: ভুটান ভারতের মতো একই শিক্ষাব্যবস্থা অনুসরণ করে। আমরা পিপি (গ্রেড-০) থেকে শুরু করি। সেখানে প্রাথমিক, নিম্ন, মধ্য এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আমাদের ১২তম পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা দেওয়া হয়। তবে আপনি যদি প্রাইভেট স্কুলে যেতে চান তবে সরকার আপনার শিক্ষার জন্য অর্থ প্রদান করবে না। কিন্তু ১৩তম পর্যন্ত সরকারি বিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া আপনি যদি ১৩তম পড়ে ভালো করেন তাহলে বৃত্তির জন্য আবেদন করাও সহজ।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ভুটান থেকে কতজন শিক্ষার্থী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছেন?
জর্জি গিল্টশেন: বর্তমানে ভুটান থেকে হাবিপ্রবিতে মোট ১২ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছেন। এর মধ্যে ৫ জন মেয়ে শিক্ষার্থী এবং ৭ জন ছেলে শিক্ষার্থী রয়েছেন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: হাবিপ্রবিতে পড়তে আসার পর এখানে আপনি কেমন বন্ধু পেয়েছেন, তারা আসলে কেমন?
জর্জি গিল্টশেন: আমি এখানে অনেক ভালো বন্ধু পেয়েছি। কিন্তু আমি বেশিরভাগই সময় আমার বিভাগের তিনজন বন্ধুর সাথে বেশি চলাফেরা করি। সায়েম আবরার, নাজমুল হাসান ও নিতি।
মেয়েরা মনে করেন আমরা বিটিএস বা কোরিয়ান বা অন্য কিছু। ছেলে বা মেয়ে সব শিক্ষার্থীই খুব কৌতূহল নিয়ে আমাদেরকে দেখেন।
মজার ঘটনা, আমি যখন বাংলাদেশে পৌঁছেছিলাম তখন তারাই প্রথম আমাকে রিসিভ করেছে, শুভেচ্ছা জানিয়েছে। সেখান থেকে এখন পর্যন্ত আমরা সবাই কাছাকাছি। এখন আমরা একটা পরিবারের মতো হয়ে গেছি।
সায়েম একজন চমৎকার ফটোগ্রাফার, এটা তার স্বপ্ন এবং আবেগ কাজ। নাজমুল একজন খুব মানবিক বন্ধু। যে তার বন্ধুদের সাহায্য করার জন্য সবকিছু করবে। আর নিতি খুব স্মার্ট এবং একইসঙ্গে মনের দিক থেকে যেমন সুন্দর এবং তেমনি দেখতেও সুন্দর।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ভুটান ভালো ফুটবল খেলে। ভূটানের ফুটবল নিয়ে বলুন।
জর্জি গিল্টশেন: ফুটবল একটি সার্বজনীন খেলা। হ্যাঁ ভুটান আমাদের নিজস্ব জাতীয় খেলা তীরন্দাজির চেয়ে ফুটবলকে বেশি পছন্দ করে। এমনকি আমাদের একজন খুব বিখ্যাত ফুটবলার আছে চেনচো গিল্টশেন নামে। যিনি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত। তিনি ইন্দোনেশিয়ার একটি ক্লাবের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সর্বশেষ চলতি বছরের জুনে সাফের সেমিতে ভূটানকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে কাছে নিজের দেশের হারটা হাবিপ্রবিতে থেকে কীভাবে নিয়েছিলেন?
জর্জি গিল্টশেন: সত্যি কথা বলতে আমরা এটাকে খুব একটা সিরিয়াসলি নিইনি। আমরা সাফ বাস্কেটবল জয় উদযাপনে তখন ব্যস্ত ছিলাম। আমাদের দলগুলো সাফ বাস্কেটবল টুর্নামেন্ট জিতেছিল। তাই খারাপের দিকে মনোনিবেশ না করে ভালোটাতে ফোকাস করেছিলাম।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার দেশের সংস্কৃতি ও এখানকার সংস্কৃতির মধ্যে কি কি মিল-অমিল দেখতে পান?
জর্জি গিল্টশেন: আমরা মশলাদার খাবার পছন্দ করি। এখানকার লোকেরাও এটি পছন্দ করে। একইসাথে ভাত এবং তরকারি ভুটানেও একটি সাধারণ খাবার।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: খাওয়া-দাওয়ার কোন সমস্যা হয় কিনা? কোথায় খাওয়া-দাওয়া করা হয় বেশিরভাগ সময়?
জর্জি গিল্টশেন: আমার খাওয়া-দাওয়ার কোন সমস্যা হয় না। কারণ আমি একজন বহুমুখী মানুষ। আমি দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে পারি। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ যারা এখানে প্রথমবারের মতো এসেছেন তারা এখানকার খাবার এবং পানীয়ের সাথে নিজেদের খাপখাইয়ে নিতে পারেন না। আর আমরা বেশিরভাগ মেসে নিজেদের খাবার রান্না করি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এখানকার স্থায়ী শিক্ষার্থীরা আপনার মতো বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি কেমন মনোভাব পোষণ করেন?
জর্জি গিল্টশেন: একটু মজার, মেয়েরা মনে করেন আমরা বিটিএস বা কোরিয়ান বা অন্য কিছু। ছেলে বা মেয়ে সব শিক্ষার্থীই খুব কৌতূহল নিয়ে আমাদেরকে দেখেন। তারা যখন আমাদের দিকে তাকান, তখন আমাদের নিজেদেরকে এলিয়েনদের মতো মনে হয়।
বর্তমানে ভুটান থেকে হাবিপ্রবিতে মোট ১২ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছেন। এর মধ্যে ৫ জন মেয়ে শিক্ষার্থী এবং ৭ জন ছেলে শিক্ষার্থী রয়েছেন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে বলুন। এখন পর্যন্ত এখনকার কয়টি বিশ্ববিদ্যালয় আপনি ভ্রমণ করেছেন?
জর্জি গিল্টশেন: আমি এখন পর্যন্ত ৪টি বিশ্ববিদ্যালয় ভ্রমন করেছি। ভুটানের সাথে তুলনা করলে আমি বলবো বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক বড়। আমি এখন পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রংপুর মেডিকেল কলেজ ঘুরে দেখেছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এখানকার মানুষের ভালো ও মন্দ দিকগুলো নিয়ে বলুন।
জর্জি গিল্টশেন: এখানকার মানুষের ভালো দিক হলো তারা খুব সুন্দর করে কথা বলেন, খুব ভদ্র। তারা আমাদেরকে তাদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানায়। যাইহোক না কেন আমাদের সহায়তা করেন, পাশে থাকেন। বাংলাদেশের মানুষের খারাপ দিক হলো তারা বেশি ধূমপান করেন। আমার মনে হয় এখানকার প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ ধূমপায়ী।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর আপনার সাথে ঘটে যাওয়া মজার কোনো ঘটনা সম্পর্কে বলুন।
জর্জি গিল্টশেন: যখন আমি এখানে প্রথমবার এসেছি, লোকেরা আমাকে চাইনিজ বা কোরিয়ান ভাবতো। রাস্তায় বের হলেও আমাকে জিজ্ঞাসা করেছে, জানতে চেয়েছে আমি কোরিয়া থেকে এসেছি কিনা। আমি বুঝতে পারি তারা বেশ কৌতূহলী আমাকে নিয়ে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আপনার কোন প্রত্যাশা যদি থাকে, বলতে পারেন।
জর্জি গিল্টশেন: আমাদের এখানে সাংস্কৃতিক বিনিময় অনুষ্ঠান থাকলে ভালো হবে। এখন পর্যন্ত আমি বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসে তেমন কিছু দেখিনি।