সহকারী জজ পরীক্ষায় তৃতীয় খালিদ

আইন পড়ার শুরু থেকেই বিচারক হওয়ার ইচ্ছে ছিল

মোহাম্মাদ খালিদ হাসান
মোহাম্মাদ খালিদ হাসান  © টিডিসি ফটো

সম্প্রতি প্রকাশিত ১৬তম সহকারী জজ নিয়োগের চূড়ান্ত পরীক্ষার মেধাতালিকায় তৃতীয় হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৬-২০১৭ সেশনের শিক্ষার্থী মোহাম্মাদ খালিদ হাসান। তার গ্রামের বাড়ি বরগুনায়। বরগুনা জেলা স্কুলে মাধ্যমিক এবং বরগুনা সরকারি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। বাবার নাম মোহাম্মাদ রেজাউল কবির, মায়ের নাম ইয়াসমিন বেগম। তিন ভাই-বোনের বড় বোন রেজোয়ানা কবির সহকারী পুলিশ সুপার বরিশালের। সহকারী জজ নিয়োগের জন্য কীভাবে নিজেকে তৈরি করেছেন খালিদ? দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে শুনিয়েছেন সেই গল্প। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জান্নাতুল ফেরদৌস—

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে আপনার কেমন লাগছে? অনুভূতি জানতে চাই।
খালিদ হাসান: এটা আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই আমার এই আশা ছিল যে আমি সহকারী জজ হব। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে হতে পেরেছি। ভালো লাগছে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিজেএস পরীক্ষা শুরুর যাত্রা কীভাবে?
খালিদ হাসান: ১৬তম বিজেএস থেকেই জুডিশিয়ারির জন্য পড়া শুরু করি। এ বছরের জানুয়ারি থেকেই শুরু হয় প্রস্তুতি। এর আগে ১৫তম বিজেএসের প্রিলিমিনারিতে আমার হয়নি; তখন আমার মাস্টার্স পরীক্ষা চলছিল। ওই পরীক্ষা শেষ করার পর থেকেই পুরোদমে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করি। যার ফল হিসেবে বিজেএসের সঙ্গে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারিতেও সিলেক্টেড হই। যে বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা সামনে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথমত আমি আইনবিষয়ক যত পড়া আছে সেগুলো দিয়ে শুরু করি। বিজেএস পরীক্ষায় এটা আমার সবচেয়ে বেশি কাজে দিয়েছে। তাছাড়া ব্যাকগ্রাউন্ড সাইন্স হওয়ায় গণিত ও বিজ্ঞানে আমার বেসিক ভালো ছিলো; এটিও আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। সর্বোপরি পরিবারের সাপোর্ট; আমার আল্লাহর রহমতে কোনো ধরনের প্রতিকূলতার মধ্যে পরতে হয়নি। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কোন বিষয় আপনার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করতো?
খালিদ হাসান: আমার বড় বোন যিনি ৩৮তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডার হয়েছেন; তাকে দেখে আমি সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত হতাম। তাছাড়া বাবা-মাসহ পরিবারের সবাইকে গর্বিত করার ইচ্ছা তো ছিলোই ।  

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য এমন কোনো স্মৃতি আছে কিনা, যা আপনি আগে কখনো বলেননি?
খালিদ হাসান: আমি ছাত্র হিসেবে সবসময় ভালো ছিলাম। জাতীয় মেধা অন্বেষণে একবার জেলা পর্যায়ে প্রথম হয়েছিলাম ২০১৩ সালে। তখন আমার খুবই ভালো লেগেছিলো। এর বাইরে আমি ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন মোটামুটি ভালো খেলতাম।  

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিজেএস পরীক্ষায় ভালো করার জন্য আইনের পাশাপাশি আর কোন কোন বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত?
খালিদ হাসান: গণিত এবং বিজ্ঞান। এ দুটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইংরেজির বেসিক অবশ্যই ভালো থাকতে হবে। সাধারণ জ্ঞানের জন্য দৈনিক পত্রিকা পড়লেই হয়। আইনের ছাত্র হিসেবে অনেকদিন গণিত এবং বিজ্ঞানে চর্চা থাকে না যার ফলে অনেকেই এটা নিয়ে স্ট্রাগল করে। তাই আমার মনে হয় এই দুটি বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এই পরীক্ষার প্রস্তুতি কখন থেকে নেয়া উচিত বলে মনে করেন?
খালিদ হাসান: আমি বলবো সবচেয়ে ভালো হয় অনার্সের পড়াগুলো ভালো করে পড়া, কারণ এসব তো বেসিক। বেসিকে ভালো থাকলে এমনিতেই ভালো পারা যায়। কারও যদি বিজেএস দেয়ার ইচ্ছা থাকে; তাহলে আমার মতে ফাইনাল ইয়ার থেকেই পড়া শুরু করা উচিত। তখন থেকেই যদি জোর দেয় ইনশাআল্লাহ ভালো করা সম্ভব। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ভাইভার সময় কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে?
খালিদ হাসান: কনফিডেন্ট থাকতে হবে। কথা-বার্তা এবং চলায় কনফিডেন্ট থাকাটা খুবই প্রয়োজন। কখনোই কোনো প্রশ্নে না পারলেও নার্ভাস হওয়া যাবে না। আরেকটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তা হলো- ভাইভা বোর্ডে বিনয়ী হতে হবে। ব্যবহার এবং কথায় ভদ্রতা থাকতে হবে। আইনের বেসিক বিষয়গুলো নিয়ে ক্লিয়ার থাকতে হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিজেএস পরীক্ষায় একাডেমিক রেজাল্টের গুরুত্ব কতটুকু?
খালিদ হাসান: একাডেমিক রেজাল্ট সব ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার একাডেমিক রেজাল্ট ভালো মানে আপনার বেসিকও ভালো। কিন্তু ভালো রেজাল্ট থাকা মানেই যে একেবারে জজ হয়ে যাওয়া যাবে বিষয়টি এমন নয়। অনেকের বেসিক ভালো থাকে কিন্তু সিজিপিএ কম তারাও কিন্তু জজ হয়। আমার নিজেরও একাডেমিক রেজাল্ট খুব একটা ভালো না। অনার্সে আমি সিজিপিএ-৩.২৩ পাই মাত্র। আইন বিষয়ের বেসিকটাই গুরুত্বপূর্ণ।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নিয়োগ পাওয়ার পর দেশ নিয়ে আপনার ভাবনা জানতে চাই। কোনো বিশেষ পরিকল্পনা আছে কিনা?
খালিদ হাসান: আমি আমার জায়গা থেকে সৎভাবে কাজ করতে চাই। দেশের এবং দেশের জনগণের জন্য কাজ করতে চাই। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যারা এ পরীক্ষা দিতে আগ্রহী তাদের কোন কোন বিষয়গুলো বেশি গুরুত্ব দিলে সফল হওয়া সম্ভব?
খালিদ হাসান: বিজিএসে যে সিলেবাস আছে সে সিলেবাসভিত্তিক পড়াশোনা করলে, ওখানের যে আইনগুলো আছে সেগুলো ভালোভাবে পড়লে ভালো করা সম্ভব। আর ম্যাথ, বিজ্ঞান ভালো করে পড়তে হবে। যেটা আসলে আমার ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে কাজ করছে। আর আইনের বিষয়ে তো অবশ্যই খুঁটিনাটি সবকিছু জানতেই হবে। বেসিক ভালো থাকলে জার্নিটা সহজ হবে আর বেসিক ভালো না থাকলে ৬ মাস থেকে একবছর খুব ভালোভাবে পরিশ্রম দিতে হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার সাফল্য কামনা করছি।


সর্বশেষ সংবাদ