মাস্টার্স শেষ হওয়ার আগেই সহকারী জজের পরীক্ষায় প্রথম জেনি
১৬তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলে সহকারী জজ হিসেবে মেধাতালিকায় প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুসরাত জেরিন জেনি। তিনি তার মাস্টার্স শেষ আগেই জজ নিয়োগের পরীক্ষায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। পরীক্ষায় তার প্রস্তুতি ও সাফল্য নিয়ে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছেন। তার কথাগুলো শুনেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মারুফ হোসেন মিশন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় দেশব্যাপী প্রথম হয়েছেন। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা।
নুসরাত জেরিন জেনি: আপনাকে ধন্যবাদ।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে আপনার কেমন লাগছে? আপনার অনুভূতি জানতে চাই।
নুসরাত জেরিন জেনি: অবশ্যই অনেক বেশি ভালো। আমার পড়ালেখা চলাকালীন সময়ে আমি সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। এটা আমার জন্য অনেক বেশি গর্বের।
আমি অনেক বেশি কৃতজ্ঞ আমার সৃষ্টিকর্তার প্রতি। যার ইচ্ছাই আমি সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। এ সফলতার পেছনে আমার মা-বাবা, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণের অবদান রয়েছে। তাদের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার পরিবারে কে কে আছেন? আব্বু-আম্মু কী করেন?
নুসরাত জেরিন জেনি: আমার বাসা গাইবান্ধা। আমার পরিবারে আমার আব্বু-আম্মু ও একটা বোন রয়েছে। আমার আব্বুর নাম একেএম আব্দুর নুর ও আম্মু মোছা. শিরীন তাজ বেগম।
আব্বু বাসুদেবপুর চন্দ্র কিশোর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও আম্মু প্রাইমারি স্কুলে চাকরিরত আছেন। আব্বু ও আম্মু উভয়ই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার প্রাইমারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত গল্প শুনতে চাই
নুসরাত জেরিন জেনি: আমি ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি বগুড়ার বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। তারপর সরকারি আজিজুল হক কলেজে ভর্তি হই। তারপর ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে চান্স পেয়েছিলাম। এখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: উচ্চশিক্ষায় আইন নিয়ে পড়াশোনা শেষ করতেই সহকারী জজ হয়ে গেলেন। এ যাত্রাটা কেমন ছিল?
নুসরাত জেরিন জেনি: সহকারীর জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হতে আমার অবশ্যই অনেক বেশি চেষ্টা ছিল। আমার সাথে যারা সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন, তারা কেউই আমার থেকে মেধায় কোনো অংশে কম নয়।
আমার যখন যেমন পড়ালেখার প্রয়োজন হতো, আমি তখন সেভাবেই পড়তাম। তবে নির্দিষ্ট সময় নিয়ে ধারাবাহিকভাবে পড়েছি এমনটা না। এমন হয়েছে যে, সারাদিনে একদমই পড়ালেখা করা হইনি। আবার এমন হয়েছে, সারাদিন পড়ালেখা করেছি। তবে যখন অনেক পড়া জমা পড়ে যেত, পরীক্ষার সময় আসত তখন অনেক বেশি পড়তাম।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিজেএস পরীক্ষায় ভালো করার জন্য আইনের পাশাপাশি আর কোন কোন বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
নুসরাত জেরিন জেনি: বিজেএস পরীক্ষায় আইন সম্পর্কিত বিষয় একটা শক্তিশালী জোন। ফলে আইনের বিষয়গুলোর উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কেউ চাইলে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিভাগগুলোতে একটা সন্তোষজনক নাম্বার তুলে ও আইনের বিষয়গুলোতে বেশি নাম্বার তুলেও বিজেএস পরীক্ষায় ভালো করতে পারেন।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বিজেএস পরীক্ষার পূর্ববর্তী প্রশ্নগুলো দেখে তবে যার যে বিষয়ে দুর্বলতা বেশি, তার সেই বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যাদের রিটেনে লেখার হাত ভালো তাদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। কারণ বিজেএস পরীক্ষায় ‘রিটেন’ অনেক বড় একটা ফ্যাক্ট।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যারা আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে আগ্রহী তাদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?
নুসরাত জেরিন জেনি: আইন খুবই ভালো একটা সাবজেক্ট। যদি কেউ আইন নিয়ে পড়তে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই আইনকে ভালোবাসতে হবে। আইনের বিষয়গুলোর উপর ভালো লাগা কাজ করাতে হবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আইন নিয়ে পড়ার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভালো না কি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়?
নুসরাত জেরিন জেনি: বিজেএস পরীক্ষায় ভালো করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। যিনি পরীক্ষায় বসবেন তিনি কেমন পরিশ্রম করছেন তার উপর নির্ভর করবে তার সাফল্যতা।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নতুন যারা বিচারক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তাদের কোন কোন বিষয়গুলো বেশি ফোকাস করলে তাদের পথটা সহজ হবে?
নুসরাত জেরিন জেনি: যাদের সহকারী জজ হওয়ার ইচ্ছে তাদের অবশ্যই আইনের বিষয়গুলোতে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ কেউ চাইলেই শুধুমাত্র আইনের বিষয়গুলোর উপর পরীক্ষা দিয়ে ৬০০ নাম্বারের মধ্যে ৪৫০-৫০০ নাম্বার অনায়াসে তুলতে পারবেন।
আইনের বাইরের বিষয়গুলো অনেক সময় কমন পড়ে না। ফলে সেগুলো লিখতে অনেক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। এসবগুলোর থেকে আইনের বিষয়গুলোর উপর নম্বর তোলা সহজ। পাশাপাশি গ্রামারের দিকে খেয়াল রেখে দ্রুত লেখার উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ বিজেএস পরীক্ষায় ‘লিখিত’ বিষয়ে অনেক নম্বর থাকে।
আরও পড়ুন: সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম নুসরাত
বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বছরের কোর্সগুলোর মধ্যে যেগুলো বিজেএস পরীক্ষায় সিলেবাসভুক্ত সেগুলোতে ফাঁকি না দিয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়া উচিত। ফলে তার জন্য বিজেএস পরীক্ষায় ভালো করা অনেক বেশি সহজ হবে বলে আমি মনে করি।
তবে বিজেএস সিলেবাসের বাইরের বিষয়গুলোও ভালো করে পড়া উচিত। এগুলো অবহেলা করার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। কারণ ভাইভাতে এগুলো থেকেও কিছু প্রশ্ন ধরে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিজেএস পরীক্ষায় ভালো করার জন্য কোন বর্ষ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
নুসরাত জেরিন জেনি: বিজেএস পরীক্ষায় ভালো করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো বর্ষ আমি উল্লেখ করতে চাই না। কে কখন প্রিপারেশন নেবে সেটা ব্যক্তিগত ব্যাপার। কেউ যদি মনে করে তার প্রথম বর্ষ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত, তাহলে তার প্রথম বর্ষ থেকেই পড়া উচিত।
আবার কেউ যদি মনে করে, সে অনার্স পরীক্ষার পরে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে ভালো করতে পারবে, তাহলে তার সেটাই করা উচিত। তবে নির্দিষ্ট করে যদি বলতেই হয়, তাহলে বলবো তৃতীয় বর্ষ থেকে বিজেএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া ভালো।
আমার কথা যদি আমি বলি, সব সময় ইচ্ছা ছিল একাডেমিক রেজাল্ট ভালো করা। কারণ একাডেমিক রেজাল্ট ভালো করলে বিজিএস পরীক্ষায় ভালো করা সম্ভব। চাকরির জন্য প্রিপারেশন আমি আগে থেকেই নেইনি। অনার্স ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষার পরে জবের প্রিপারেশন নিয়েছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিজেএস পরীক্ষায় একাডেমিক রেজাল্টের গুরুত্ব কতটুকু?
নুসরাত জেরিন জেনি: আসলে বিজেএস পরীক্ষায় একাডেমিক রেজাল্টের গুরুত্ব নেই বললেই চলে। একাডেমিক রেজাল্টের কারণে বিজেএস পরীক্ষায় বাড়তি কোনো সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায় না। এমনকি ভাইভাতেও যে দুইটা মার্কস বাড়িয়ে দেবে এমনটাও না।
তবে এটা সত্য, বিজেএস পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থী তখনই ভালো করে, যখন তার একাডেমিক রেজাল্ট ভালো থাকে। কারণ সে একাডেমিক বিষয়গুলো ভালো করে পড়েছে। একাডেমিক রেজাল্ট ভালো হওয়া মানে ৬০% জবের প্রিপারেশন সম্পন্ন হওয়া।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নিয়োগ পরীক্ষার ফলে আপনি প্রথম হয়েছেন। দেশের প্রতি আপনার অনেক বেশি দায়িত্ব। নিয়োগ পাওয়ার পর দেশ নিয়ে আপনার ভাবনা জানতে চাই। কোনো বিশেষ পরিকল্পনা আছে কিনা?
নুসরাত জেরিন জেনি: বিচারক অনেক মার্যাদার একটা আসন। এটির সাথে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, বিশ্বাস জড়িত। সর্বোচ্চ সৎ থেকে যেন ভালো কিছু করে যেতে পারি তার জন্য আমার যা কিছু করা দরকার আমি ততটুকুই করে যাব। আল্লাহ আমাকে যে সম্মান দিয়েছেন, সেই সম্মান রেখে যেন আমি চলতে পারে তার জন্য আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার সাফল্য কামনা করছি।
নুসরাত জেরিন জেনি: আপনাকেও ধন্যবাদ। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্য শুভকামনা।