বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ইতিহাসে শেখ হাসিনার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে

  © টিডিসি ফটো

স্বাধীনতার ৫৩তম বর্ষে পদার্পণ করেছে বাংলাদেশ। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ সর্বত্রই ছিল তরুণদের সরব উপস্থিতি। ৪৭ পরবর্তী অন্ধকার সময় থেকে তারুণ্যই দেখিয়েছিল মুক্তির পথ। ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বর্তমান বিভিন্ন ইস্যুতে তরুণদের ভাবনা নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরেছেন— ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: স্বাধীনতার ৫৩তম বর্ষে পদার্পণ করেছে বাংলাদেশ। একজন তরুণ ছাত্রনেতা হিসেবে বর্তমান বাংলাদেশ নিয়ে আপনার বিশ্লেষণ কি?
শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান: বাংলাদেশের ইতিহাস সংগ্রামের ইতিহাস, বাংলাদেশের ইতিহাস লড়াইয়ের ইতিহাস। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ যে মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয় ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মাধ্যমে তা পরিপূর্ণতা পায়। পরবর্তীতে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্র যেখানে কোনো বৈদেশিক রিজার্ভ ছিল না, কোনো অবকাঠামোগত অবস্থান ছিল না, আমলাতান্ত্রিক কাঠামো ছিল না, সেখান থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মাত্র সাড়ে তিন বছরেই ঘুরে দাড়ায় বাংলাদেশ। কিন্তু ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেয়া হয় এবং ৭৫ থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে আবারও পশ্চাদপদতার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। ইনডেমনিটি আইনের মত ইতিহাস ঘৃণিত আইন পাস করা হয়, যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়। ৯৬-তে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশকে আবারও উন্নয়নের ধারায় ফিরিয়ে আনেন, ২০০১-এ ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আবারও পিছিয়ে দেয়া হয় যার অবসান ঘটে ২০০৮ এর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। একজন তরুণ ছাত্রনেতা হিসেবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি ৯৬-২০০১ ছিল বাংলাদেশকে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ফিরিয়ে আনার সময় এবং ২০০৯ থেকে২০২৩ পর্যন্ত ১৪ বছরে হলো বাংলাদেশকে উন্নত ও স্মার্ট রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার সময়। আমি বিশ্বাস করি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের এই উন্নয়নযাত্রা অব্যাহত থাকবে এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ইতিহাসে শেখ হাসিনার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বর্তমান তরুণ সমাজের একাংশ বাঙালি ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে বিমুখ হয়ে পড়ছে। আপনার মতে এর কারণ কি?
শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান: বাংলাদেশে অপসংস্কৃতির যে চর্চা সেটির সূচনা হয়েছিল ৭৫ পরবর্তী সময়ে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা একটি মহলকে বাঙালি ইতিহাস-সংস্কৃতির যে গঠণতান্ত্রিক কাঠামো ছিল তা ধ্বংসের অপচেষ্টা করতে দেখেছি। আমরা রমনার বটমূলে বোমা হামলা দেখেছি, সিনেমা হল বোমা হামলা করে উড়িয়ে দিতে দেখেছি। আমরা দেখেছি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে বাংলার সাংস্কৃতিক জাগরণের অগ্রসারণী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে অপসংস্কৃতি চর্চাকারীদের নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার প্রচেষ্টা। এর ফলাফলস্বরূপ তরুণদের একটি অংশ দেশীয় ভাষা সংস্কৃতি থেকে বিচ্যুত হয়েছেন। তবে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের ভাষা ও সংস্কৃতিকে রক্ষার্থে নিরলস কাজ করছে এবং সামগ্রিকভাবে চিন্তা করলে বর্তমানে তরুণ সমাজের বড় অংশই নিজ ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে গর্বিত। আমি মনে করি, এই তরুণ সমাজই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বাঙালির শত বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবে এবং যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের সংস্কৃতিকে এমন অবস্থানে নিয়ে যাবে যাতে বিশ্বব্যাপী এর চর্চা আরো বৃদ্ধি পায়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও বিভিন্ন সময় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে, শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এ বিষয়ে তরুণ সমাজের একজন প্রতিনিধি হিসেবে আপনার মন্তব্য কি?
শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান: এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক বিষয় যে এখনও বাংলাদেশের কিছু মানুষ ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের বছরকে গণ্ডগোলের বছর হিসেবে উল্লেখ করেন। এছাড়া, ৭৫ পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার যে অপচেষ্টা শুরু হয়েছিল তাদের সেই অপচেষ্টা এখনও অব্যাহত আছে। তরুণ সমাজের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই যারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এ ধরনের ঘৃণিত মন্তব্য করে এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে আমরা তাদের কঠোরভাবে প্রতিহত করবো। ২৫শে মার্চ কালোরাত থেকে মুক্তিযুদ্ধকালীন ৯ মাস যারা ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছে তাদের পক্ষ হয়ে যারা কাজ করছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তাদের সবাইকে সারেন্ডার করতে বাধ্য করবে। এই দেশে আমরা কোনোভাবেই যারা দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করতে চায় তাদের আস্ফালন সহ্য করবো না। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবকাঠামো, শিক্ষাসহ সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা চলমান রয়েছে তা অব্যাহত থাকলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার সকল অপচেষ্টা ব্যর্থ হবে এবং তরুণদের নিকট মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস পৌঁছে যাবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: তরুণদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস পৌঁছে দিতে ছাত্রলীগের কি ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে?
শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান: বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সর্বদাই তরুণদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। ৭৫ পরবর্তী সময়ে যখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃতভাবে প্রকাশ করা হচ্ছিলো তখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরেছে। তরুণ প্রজন্মকে বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি সঠিকভাবে জানানোর জন্য শিক্ষার্থীদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন বই বিতরণ, মুক্তিযুদ্ধের তথ্যভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজনসহ আমাদের আরও বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: মুক্তিযুদ্ধের সময়ে হওয়া গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ কি ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারে
শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান: ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতাযুদ্ধ প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের অগ্রজরা তাদের তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়েই সামনে এগিয়ে গিয়েছেন। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে তরুণরা তাদের তাজা রক্ত দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমাদের অগ্রজদের এই ত্যাগ যাতে কোনোভাবেই ভূলুণ্ঠিত না হয় তার জন্য ১৯৭১ এ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছিল তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করতে হবে। আর এক্ষেত্রেও তরুণদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার সুযোগ রয়েছে এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে বারবারই এ বিষয়ে যোগাযোগ করছি যে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে হওয়া ভয়াবহ গণহত্যার স্বীকৃতির বিষয়টি যেনো আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পাশাপাশি দেশের বাইরে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আপনারা যে যেই দেশে অধ্যয়নরত রয়েছেন সেই দেশে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে হয়ে যাওয়া গণহত্যার স্বীকৃতির বিষয়ে জনমত গড়ে তুলুন। বর্তমান যুগ ইন্টারনেটের যুগ। আপনারা জাতিসংঘ বরাবর মেইলের মাধ্যমে গণহত্যার স্বীকৃতি প্রদানের আবেদন জানান।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বর্তমান তরুণ সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কি?
শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান: ২০২৩ সালে আজকের এই সময়ে দাড়িয়ে আমার মতে তরুণদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন। তরুণদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কোন বাংলাদেশ চাই। আমরা কি বিএনপি-জামায়াতের পশ্চাদপদতার বাংলাদেশে পিছিয়ে যাবো নাকি শেখ হাসিনার উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার বাংলাদেশকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবো। জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে, বাংলাদেশের দিন বদল হয়েছে, বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। তাই তরুণদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কি আফগানী, পাকিস্তানী, তালেবানি ভাবধারার বাংলাদেশ চায় নাকি পদ্মাসেতুর বাংলাদেশ চায়, মেট্রোরেলের বাংলাদেশ চায়, একদিনে একশত সেতুর বাংলাদেশ চায়, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাংলাদেশ চায়, কর্ণফুলী টানেলের বাংলাদেশ চায়। আমি বিশ্বাস করছি তরুণরা এই সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে নিতে পারবে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশকেই বেছে নেবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।
শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও অনেক ধন্যবাদ।


সর্বশেষ সংবাদ