ঢাকা কলেজ থেকে বই-পুস্তক নিয়ে পাঠদান শুরু করেছিল ঢাবি
১৮২ বছরে পদার্পণ করলো ইতিহাস ঐতিহ্যের বিদ্যাপিঠ ঢাকা কলেজ। ‘নিজেকে জানো’ মূলমন্ত্র ধারণ করে দীর্ঘ ১৮১ বছরের পথচলার সমাপ্তি ঘটলো। কলেজটির ১৮১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার। তিনি কলেজের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংগ্রাম-সাফল্য নিয়ে কথা বলেছেন। তার কথাগুলো শুনেছেন হাসান তামিম
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আজ ঢাকা কলেজের ১৮১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। কলেজ নিয়ে আপনার অনুভূতি জানতে চাই।
অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার: ঢাকা কলেজ ১৮২ বছরে পদার্পন করেছে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের এবং আনন্দের। ঢাকা কলেজ এই উপমহাদেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠান। যা অসংখ্য কৃতি শিক্ষার্থীদের গৌরবে গৌরবান্বিত। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই দিনে সকল শিক্ষার্থীকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। একসঙ্গে এখানকার শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই; যাদের মেধা-মননে ঢাকা কলেজ শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঢাকা কলেজসহ আরও ৬টি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছে। এতে শিক্ষার মানে কেমন পরিবর্তন এসেছে, আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা কলেজসহ ছয়টি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন। আমি মনে করি এতে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণের জন্য সরকারের লক্ষ্য কিছুটা হলেও পূরণ হবে। কিন্তু সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরও ভূমিকা পালন করতে হবে।
সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের যে সুযোগ-সুবিধাগুলো দরকার সেগুলো অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে আমরা দেখেছি, কলেজে উচ্চশিক্ষা নিতে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য যে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তুলনায় একেবারেই কম। অথচ এরা সবাই একইসঙ্গে চাকরির বাজারে অংশ নিচ্ছে। এক্ষেত্রে বাজেট আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ঢাকা কলেজের অনেক অবদানের কথা আমরা শুনে আসছি। আসলে এ ব্যাপারটা কেমন ছিল?
অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন-প্রদীপ জ্বালাতে ঢাকা কলেজের যে মহিমাময় ত্যাগ ও অবদান ইতিহাসে তা বিরল। বস্তুত ঢাকা কলেজের সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী, বিভিন্ন ভবন, পাঠাগার, বিজ্ঞানাগার, বই-পুস্তক ইত্যাদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রদান করা হয়। এর ফলেই ১৯২১ সালের ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় তার একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে পেরেছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঢাকা কলেজের সমর্থনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর কলেজটির অবস্থা কেমন ছিল?
অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার: ঢাকা কলেজের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সঙ্কটের সম্ভাবনা ছিল। এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী নিশ্চিত করতে ঢাকা কলেজে উচ্চশিক্ষা বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে ঢাকা কলেজকে ইন্টারমিডিয়েট কলেজে রূপান্তর করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর মূল ফোকাসে চলে আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশেষ করে পাকিস্তান আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, গণ আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অসামান্য অবদান সেটা ইতিহাসে বড় একটি জায়গা দখল করে আছে। এসব কারণে ঢাকা কলেজ তখন পিছিয়ে পড়েছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রামসহ দেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের ব্যাপক অবদান রয়েছে। এ সম্পর্কে আপনার কাছে শুনতে চাই।
অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার: দেশের ভাষা আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ সব কিছুতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদেরও বিশাল অবদান ছিলো। ঢাকা কলেজ অনেক রাজনীতিবিদ, জ্ঞানী-গুণী শিক্ষক, গবেষকের জন্ম দিয়েছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই সন্তানও ঢাকা কলেজের গর্বিত শিক্ষার্থী ছিলেন। এর বাইরেও বর্তমানের অনেক উচ্চপর্যায়ের রাজনীতিবিদ আছেন যাদের রাজনীতিতে হাতে খড়ি এই কলেজে হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঢাকা কলেজের নকশা গ্যাসটিনের, ভিত্তিপ্রস্তর ড্যানিয়েলের
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঢাকা কলেজের সঙ্গে আপনার দীর্ঘদিনের পথচলার গল্প। কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এই দিনে বিশেষ কোনো স্মৃতি সম্পর্কে যদি বলতেন।
অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার: প্রায় ২০ বছর ঢাকা কলেজের সঙ্গে ছিলাম। তাই অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী আমি। ভালো-মন্দ অনেক কিছুই আমার স্মৃতিতে আছে। একটা কষ্টের স্মৃতিই বলি। বিষয়টি আমার জন্য অনেক কষ্টের ছিল।
ঢাকা কলেজে পদায়ন হওয়ার পর ১৯৯২ সালে ফরহাদ হোসেন নামের ঢাকা কলেজের একজন নিরপরাধ শিক্ষার্থীকে নীলক্ষেতে ব্যবসায়ীরা পিটিয়ে হত্যা করেছিল। যার নামে এখন শহীদ ফরহাদ হোসেন ছাত্রাবাস করা হয়েছে। আসলে সে সম্পূর্ণ নিরপরাধ ছিল।
আমাদের কিছু ছাত্রের সঙ্গে তাদের (ব্যবসায়ীদের) বৎসার জেরে পরবর্তীতে নীলক্ষেতে তাকে ঢাকা কলেজের ছাত্র শুনেই পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। এটা আমার একেবারেই চাকরির প্রথম দিকের ঘটনা। এসময় আমরা খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম। মূলত তার নামেই পরবর্তীতে আমাদের ছাত্রাবাস তৈরি করা হয়।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এ দীর্ঘ যাত্রায় একটি ভালো স্মৃতি সম্পর্কে জানতে চাই।
অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার: ২০১০ সালের একটি ভালো স্মৃতি স্মরণ করতে পারি। সেটি হলো অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম। তখন অনার্স মাস্টার্সে ভর্তি নিয়ে খুব অনিয়ম হতো। সেসব অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এটা নিয়ে আমাদেরকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। এ সময় ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন ড. সিরাজ উদ্দিন আহমেদ।
আমাদের এই অবস্থানের কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তখন ভর্তি কার্যক্রম অনলাইনে শুরু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরবর্তী বছর থেকে পর্যায়ক্রমে উচ্চমাধ্যমিকেও অনলাইনে ভর্তি শুরু হয়। আমি মনে করি ঢাকা কলেজ অবশ্যই এই গৌরবের অংশীদার হতে পারেন। আর অনেক বড়মাপের ব্যক্তিদের সঙ্গে চাকরি করা সৌভাগ্য হয়েছে আমার। বিশেষ করে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা আক্তারুজ্জামান ইলিয়াসের মতো সহকর্মীর সঙ্গে আমি কাজ করেছি। এরকম অসংখ্য স্মৃতি আঁকড়ে ধরে আছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্যেও শুভকামনা রইলো।