দেশীয় প্রযুক্তির সোলার কার উদ্ভাবন যবিপ্রবি শিক্ষকের

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবির
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবির  © টিডিসি ফটো

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) এক থেকে দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে সৌরচালিত গাড়ি উদ্ভাবন করেছেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবির।

এই গাড়িটির মানোন্নয়ন করে বাণিজ্যিকভাবেও এর ব্যবহার সম্ভব। এই গাড়ির সোলার প্যানেল ছাড়া সবকিছুই দেশীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং স্থানীয় একটি মোটর ওয়ার্কশপে এটি তৈরি করা হয়েছে।

ড. মো. হুমায়ুন কবির জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা তহবিল থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট থেকে গবেষণা প্রকল্পের জন্য প্রস্তাব আহ্বান করা হয়। এই প্রেক্ষিতে তিনি সৌরশক্তিচালিত গাড়ি তৈরি করার জন্য প্রকল্প প্রস্তাব জমা দেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব গ্রহণ করে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অর্থের যোগান দেন।

এরপর হুমায়ুন কবির গাড়ি তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় জিনিসপত্র স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করেন এবং স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপে গাড়িটি তৈরি করেন। তিনি উল্লেখ করেন, এই গাড়ির সব যন্ত্রাংশ দেশে তৈরি, শুধু সোলার প্যানেল ছাড়া।

ড. মো. হুমায়ুন কবির আরও জানান, সারা পৃথিবীতেই ব্যাটারিচালিত গাড়ি তৈরি এবং ব্যবহারের আগ্রহ বেড়ে চলেছে। টেসলা নামক কোম্পানি এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে। সৌরশক্তি দিয়ে গাড়ি চালানোও নতুন নয়। তবে, বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয়নি। গবেষণা চলছে উন্নত করার।

ড. হুমায়ুন কবিরের মতে, আমাদের দেশে সৌরশক্তিচালিত গাড়ির অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, আমাদের দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। আর যে ফসিল ফুয়েল দিয়ে গাড়ি চলে তার পুরোটাই আমদানিনির্ভর এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। এই বিষয়গুলো চিন্তা করে আমরা সৌরশক্তিচালিত গাড়ি তৈরি করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করি।

এই গাড়ির মূলনীতি হল: সৌরশক্তি ব্যাটারিতে জমা হবে, জমা হওয়া বৈদ্যুতিক চার্জ দিয়ে মোটর চলবে যা গাড়ির চাকা ঘোরাবে। দুইজন যাত্রী এবং একজন চালকসহ ৩৩০ কেজি ওজনের এই গাড়ি একদিনের চার্জে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলবে। তবে, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরকোষ ব্যবহার করে তা দ্বিগুণ বা তিনগুণ বাড়ানো সম্ভব।

প্রাথমিকভাবে এই গাড়ি তৈরিতে খরচ পড়ছে এক থেকে দেড় লাখ টাকা। একটু মানসম্পন্নভাবে গাড়িটি তৈরি করা গেলে এটি দশ বছর পর্যন্ত চলতে পারবে। সে ক্ষেত্রে ব্যাটারি পরিবর্তন ও সোলার প্যানেলটি রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ জানান, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রশাসন গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। এখানে নানা ধরনের গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এখানে মুরগির প্রোবায়োটিক, মাছের ন্যানো ফিশফিড উদ্ভাবন করা হয়েছে। সোলার কারটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন।

তিনি বলেন, যশোরকে ইজিবাইকের শহর বলা হয়। এই ইজিবাইক আমদানি করতে যেমন প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়, তেমনি এটি চালাতে প্রচুর বিদ্যুতের খরচ হয়। এ কারণে এই সোলার কারটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা গেলে যেমন ডলার সাশ্রয় হবে, তেমনি বিদ্যুতের উপরেও চাপ কমবে।


সর্বশেষ সংবাদ