পাবলিকে সান্ধ্য কোর্স বন্ধ হলে লাভবান প্রাইভেট!
- রবিউল শুভ
- প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৪০ AM , আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:৩৪ AM
গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্য কোর্সের তীব্র সমালোচনা করেন রাষ্ট্রপতি। এরপর বুধবার সান্ধ্য কোর্স বন্ধে উপাচার্যদের চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। সে নির্দেশনা অনুসরণ করে গতকাল সান্ধ্য কোর্সে নতুন করে ভর্তি না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে জগন্নাথ ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। বন্ধের বিষয়ে আলোচনা চলছে আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে প্রশ্ন উঠছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স বন্ধে ফায়দা কার? সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাবলিকে সান্ধ্যকালীন এসব প্রোগ্রাম বন্ধ হলে লাভবান হবে শিক্ষার্থী সংকটে থাকা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়।
দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে শতাধিক। এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় সবকটিতেই ইভিনিং প্রোগ্রাম রয়েছে। যদিও কাঙ্খিত শিক্ষার্থী না পাওয়ায় বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই আসন ফাঁকা থাকে। তাই সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সান্ধ্য কোর্সে ভর্তি বন্ধ করলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে শিক্ষার্থী সংকটে থাকা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ইভিনিং প্রোগ্রামের সংস্কৃতি খারাপ না। বিশেষ করে কর্মজীবীদের জন্য এটি একটি সুযোগ। ব্যাংকার, ডাক্তার ও প্রকৌশলীসহ নানা পেশার মানুষ পদায়ন ও পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এসব ডিগ্রি নেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষক ও অ্ন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বেশি থাকায় তারা এখানে ভর্তি হন। এখন যদি সান্ধ্য কোর্স বন্ধ করা হয় তাহলে এসব শিক্ষার্থী বাধ্য হয়েই প্রাইভেটে যাবে। এক্ষেত্রে তাদের পড়ার খরচ বেড়ে যাবে। এমনকি দেখা যাবে পাবলিকের টিচাররাই প্রাইভেটে গিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করে সান্ধ্যকালীন এসব কোর্সের মান নিয়ে।তাই বন্ধ না করে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা যায়।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের লাভবান হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্থায়ী সনদপ্রাপ্ত ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমএম শহীদুল হাসান বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স বন্ধ হলে প্রাইভেটে চাপ বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের উচিৎ বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে ভর্তি হওয়া।
জানা যায়, দেশে সান্ধ্য কোর্স প্রথার সূচনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই। ২০০২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টির ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের চারটি বিভাগে সান্ধ্য কোর্স চালু করা হয়। পরবর্তীতে অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও সান্ধ্যকোর্স চালু করে। বর্তমানে প্রায় ২০টির বেশি পাবিলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দেড় শতাধিক সান্ধ্য কোর্স চালু রয়েছে। এসব কোর্সে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি।
উন্নত অবকাঠামো, মানসম্মত শিক্ষক ও চাকরির বাজারে গ্রহণযোগ্যতা— এসব কারণেই সান্ধ্য কোর্সের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পছন্দ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও বাড়তি আয়ের সুযোগ থাকায় নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রমের তুলনায় সান্ধ্য কোর্সে আগ্রহী হয়ে উঠে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু বিভাগ। কোনো কোনো বিভাগ বা ইনস্টিটিউট একাধিক সান্ধ্যকোর্স চালু করে। কিছু বিভাগ নিয়মিত শিক্ষার্থীর তুলনায় সান্ধ্যকোর্সে দ্বিগুণ বা তার বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়।
বর্তমানে সবচেয়ে বেশি সান্ধ্যকালীন কোর্স রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৪টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে অর্ধশতাধিক সান্ধ্যকালীন প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯টি ও আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫টি করে বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে সান্ধ্যকালীনে কোর্স চালু রয়েছে। এর বাইরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে আট, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চার, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইটি করে, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি করে সান্ধ্য কোর্স চালু রয়েছে।