দেশে অ্যানথ্রাক্স বাড়ছে, সচেতন থাকতে হবে আপনাকেও
- টিসিডি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০২:২৫ PM
দেশে আবারও অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চল রংপুরের পীরগাছা ও গাইবান্ধায় ২২ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। চলতি বছরের জুলাই ও সেপ্টেম্বরে পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজন মারা যান। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তবে সচেতনতা ও সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই রোগ থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব।
চলুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে এ রোগ ছড়ায়, কীভাবে নিরাপদ থাকবেন?
অ্যানথ্রাক্স কী:
অ্যানথ্রাক্স ব্যাসিলাস অ্যাথ্রাসিস নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত একটি রোগ। এরা মাটির নিচে বহু বছর সুপ্ত অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারে। বর্ষাকালে গরু, ছাগল, মহিষ বা ভেড়া ঘাস খাওয়ার সময় এদের শরীরে এই ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে। এতে গবাদিপশু খুব দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে। অ্যাথ্রাসিস নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত একটি রোগ। এরা মাটির নিচে বহু বছর সুপ্ত অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারে। বর্ষাকালে গরু, ছাগল, মহিষ বা ভেড়া ঘাস খাওয়ার সময় এদের শরীরে এই ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে। এতে গবাদিপশু খুব দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে।
অ্যানথ্রাক্স যেভাবে ছড়ায়:
ব্যাসিলাস অ্যাথ্রাসিস আক্রান্ত গবাদি পশুর মাধ্যমে এ রোগ প্রাণীর দেহে ছড়ায়। আক্রান্ত গবাদিপশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, মাংস, হাড়, নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে এলে মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। এজন্য একে জুনোটিক ডিজিজ বলা হয়। ত্বকে কোনো ক্ষত থাকলে সেই ক্ষত দিয়ে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। তবে এই রোগ মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। এ রোগের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে চামড়ায় ঘা সৃষ্টি হওয়া।
অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ:
অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু কীভাবে প্রবেশ করছে, তার ওপর নির্ভর করে এর উপসর্গ।
সংক্রমিত গবাদিপশুর মাংস খাওয়ার মাধ্যমে আক্রান্ত হলে বমিভাব, বমি, রক্তবমি, পেটব্যথা, মাথাব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, জ্বর, গলা ব্যথা বা ঘাড় ফুলে যেতে পারে। এছাড়া রক্তমিশ্রিত পাতলা পায়খানাও হতে পারে।
নিশ্বাসের মাধ্যমে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হলে গলাব্যথা, পেশি ব্যথা, জ্বর, ক্লান্তি দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি বুকে অস্বস্তি এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে। বমিভাব থাকতে পারে। কফের সঙ্গে রক্ত আসতে পারে। ঢোক গিলতে ব্যথা হতে পারে। জ্বরের তীব্রতাও বাড়তে পারে। মস্তিষ্কের পর্দায় হতে পারে প্রদাহ। রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
ত্বকের মাধ্যমে ছড়ালে ত্বকে পোকার কামড়ের মতো ফোলা ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। চুলকানিও হয়। পাশাপাশি ক্ষতস্থানের মাঝখানে কালো হয়ে যায়। ক্ষতের আশপাশেও ফুলেও যেতে পারে।
অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
- মাংস খুব ভালোভাবে সেদ্ধ করে রান্না করতে হবে;
- শরীরে কোনো ঘা বা ক্ষত থাকলে কাঁচা মাংস নাড়াচাড়া করার সময় গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে;
- গবাদিপশুকে নিয়মিত অ্যানথ্রাক্সের টিকা দিতে হবে;
- অসুস্থ গবাদিপশুর মাংস খাওয়া, কাটাকুটি করা বা নাড়াচাড়া করা থেকে বিরত থাকতে হবে;
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু মাটিতে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারে। বর্ষাকালে গবাদিপশু ঘাসের মাধ্যমে অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়। মানুষ পরিবেশ থেকে অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয় না, তবে প্রাণী থেকে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত প্রাণী যারা নাড়াচাড়া করে, কিংবা মাংস কাটাকাটি করে, তাদের শরীরে সামান্য কাটা কিংবা ক্ষত থাকলে, আবার মাংস কাটার সময়েও অনেক সময় হাত সামান্য কেটে যেতে পারে, তখন এই সংক্রমণ ঘটে।
অ্যানথ্রাক্স আক্রান্তের চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটার চিকিৎসা পদ্ধতি খুব সহজ। সিপ্রোফ্লক্সাসিন ট্যাবলেটে কাজ হয়। অ্যানথ্রাক্সে মানুষের মৃত্যু একেবারে নেই বললেই চলে। অন্যদিকে আমরা অনেক হাই হিট দিয়ে দীর্ঘক্ষণ মাংস রান্না করি, এতে আক্রান্ত পশুর মাংসও যদি কেউ খায়, তাতে সংক্রমণ হবে না। এই রোগে আতঙ্কের কিছু নাই, তবে স্বাস্থ্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, মানুষকে সচেতন করতে হবে যেন এটা বেশি না ছড়ায়।