ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক অস্থিরতা: শিক্ষার্থীরা কীভাবে মানসিকভাবে দৃঢ় থাকতে পারেন

নাঈমা ইসলাম অন্তরা
নাঈমা ইসলাম অন্তরা  © টিডিসি সম্পাদিত

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতা নতুন কোনো বিষয় নয়। দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের আধিপত্য, দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন, ধর্মঘট, সংঘর্ষের ঘটনায় বারবারই শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হয়েছে। এসব অস্থিরতা কেবল শিক্ষার গতি থামিয়ে দেয় না, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যকেও গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিশেষত যারা হলে থেকে পড়াশোনা করে বা পরিবার থেকে দূরে অবস্থান করে, তাদের জন্য এসব পরিস্থিতি অত্যন্ত মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

একজন মনোবিজ্ঞানী হিসেবে  আলোচনা করবো, কীভাবে শিক্ষার্থীরা এমন প্রতিকূল পরিবেশেও মানসিকভাবে দৃঢ় থাকতে পারে এবং কেমন মানসিক কৌশল অবলম্বন করলে তারা নিজের পড়াশোনা, ভবিষ্যৎ ও মানসিক শান্তিকে ধরে রাখতে সক্ষম হবে-

১. মানসিক চাপ বুঝে নেওয়া ও স্বীকার করা
মানসিক স্বাস্থ্যের প্রথম ধাপ হলো নিজের অনুভূতিগুলোকে চেনা। রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় অনেক শিক্ষার্থী উদ্বেগ, ভয়, আতঙ্ক, বিভ্রান্তি বা রাগ অনুভব করে। এসব আবেগকে স্বীকার না করে চেপে রাখলে তা দীর্ঘমেয়াদে বিষণ্নতা, উদ্বেগ বা পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের (PTSD) রূপ নিতে পারে। তাই নিজেকে সময় দেওয়া, অনুভূতির মূল্যায়ন করা এবং প্রয়োজনে কাউন্সেলরের সহায়তা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

২. রুটিন মেনে চলা ও গঠনমূলক ব্যস্ততা
রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় ক্যাম্পাসে ক্লাস বন্ধ হয়ে গেলেও একটি স্থির রুটিন ধরে রাখা মানসিক স্থিতিশীলতার জন্য উপকারী। যেমন-

*প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম ও খাওয়া,

*বই পড়া বা অনলাইন কোর্স করা,

*ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ বা ইয়োগা করা,

*নতুন কোনো হবি শেখা (যেমন লেখালেখি, আঁকা, সংগীত,

*গঠনমূলক ব্যস্ততা ব্রেইনের ‘ডোপামিন’ এবং ‘সেরোটোনিন’ নিঃসরণ বাড়ায়, যা আমাদের মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে সহায়তা করে।

৩. সংবেদনশীলতা নয়, সচেতনতা
রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা জরুরি, তবে অতিরিক্ত সংবাদ দেখা বা সামাজিক মাধ্যমে নেতিবাচক পোস্ট পড়া মানসিক উদ্বেগ বাড়াতে পারে। তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় রাজনৈতিক খবর পড়া যথেষ্ট। বাকি সময়টুকু নিজের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করা উচিত।

৪. সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করা
পরিবার, বন্ধু বা সহপাঠীদের সঙ্গে মানসিক সংযোগ ধরে রাখা অস্থির সময়ে মনকে প্রশান্ত রাখতে সাহায্য করে। একে অপরের অনুভূতির কথা শুনুন, শেয়ার করুন। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সেলিং সেন্টার বা বিভিন্ন  মানসিক স্বাস্থ্য হেল্পলাইনের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।

৫. দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য মনে রাখা
রাজনৈতিক উত্তপ্ততা অস্থায়ী, কিন্তু আপনার স্বপ্ন ও লক্ষ্য দীর্ঘমেয়াদি। এই কঠিন সময়গুলো পার করেও বহু শিক্ষার্থী সফল হয়েছে। তাঁদের মত করে আপনিও হতে পারেন, যদি মানসিকভাবে স্থির থাকেন।

৬. স্ব-মূল্যায়ন ও আত্ম-উন্নয়ন
এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আপনি নিজের চিন্তা-ভাবনা, ক্যারিয়ার প্ল্যান, স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদিতে ফোকাস করতে পারেন। এতে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার হতাশা কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

পরিশেষে রাজনৈতিক অস্থিরতা হয়তো শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তবে মানসিক দৃঢ়তা অর্জন করা সম্পূর্ণ নিজস্ব একটি বিষয়। সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি, কৌশল ও সহায়তার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী এমন প্রতিকূল পরিবেশেও নিজের পথ খুঁজে নিতে পারে। মনোবিজ্ঞান আমাদের শেখায়—‘সংকট মানেই শেষ নয়, বরং নতুন শুরু।’ 

লেখক:
নাঈমা ইসলাম অন্তরা
মনোবিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষক

 


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!