ব্লুটুথ ইয়ারবাড কি মস্তিষ্কের জন্য আসলেই ক্ষতিকর?
- আব্দুর রহমান সার্জিল
- প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৩২ PM , আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:২২ PM
বর্তমান সময়ে ব্লুটুথ ইয়ারবাড একটি জনপ্রিয় প্রযুক্তি। তবে অনেকেই ভাবেন, এগুলো ব্যবহার করলে কি মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে? যদিও ব্লুটুথ রেডিয়েশন বিদ্যমান তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
২০১৫ সালে একদল বিজ্ঞানী একটি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন বিভিন্ন ধরনের নন-আয়োনাইজিং ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড (EMF) প্রযুক্তির সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে, যার মধ্যে ক্যানসারও উল্লেখযোগ্য। ব্লুটুথ ডিভাইসগুলো ঠিক এই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট বলছে, ‘ব্লুটুথ বা অন্য কোনও ওয়্যারলেস ডিভাইস ব্যবহারে ক্যানসার বা অন্যান্য রোগের সাথে কোনও নির্ভরযোগ্য বৈজ্ঞানিক সম্পর্ক এখনও প্রমাণিত হয়নি বরং তারা ফোন ব্যবহারের নিরাপদ পন্থা হিসেবে ব্লুটুথ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে।’
ব্লুটুথ প্রযুক্তি যেভাবে কাজ করে
ব্লুটুথ প্রযুক্তি একটি ছোট পরিসরের রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি (আরএফ) ব্যবহার করে দুটি ডিভাইসের মধ্যে তারবিহীন সংযোগ তৈরি করে। এটি এক ধরনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন (ইএমআর), যা প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উভয়ভাবেই পাওয়া যায়। যেমন- সেল ফোন, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি।
পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক কেন ফস্টার জানিয়েছেন, ব্লুটুথ ডিভাইস থেকে যে রেডিয়েশন নিঃসৃত হয় তা মোবাইল ফোনের তুলনায় অনেক কম। যদিও কেউ যদি দিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্লুটুথ হেডফোন ব্যবহার করেন, তাহলে সেই রেডিয়েশন একত্রিত হয়ে কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, এটি এখনও মোবাইল ফোনের সরাসরি ব্যবহার থেকে কম ঝুঁকিপূর্ণ।
রেডিয়েশন এবং ক্যানসারের মধ্যে সম্পর্ক
রেডিয়েশন দুই ধরনের হয়, আয়োনাইজিং এবং নন-আয়োনাইজিং। নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশনে শক্তি কম থাকে এবং এটি কোষের ডিএনএ নষ্ট করতে পারে না। অন্যদিকে আয়োনাইজিং রেডিয়েশন যেমন এক্সরে বা তেজস্ক্রিয় বর্জ্য, কোষের ডিএনএতে ক্ষতি করে এবং ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্লুটুথ প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন সাধারণত ক্ষতিকর নয়।
ব্লুটুথ হেডফোন কি নিরাপদ?
বর্তমানে পাওয়া তথ্য ও গবেষণা অনুযায়ী, ব্লুটুথ ওয়্যারলেস হেডফোন থেকে যে রেডিয়েশন নির্গত হয় তা সাধারণত স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ নয়। তবে, শ্রবণশক্তি রক্ষায় সচেতন থাকা জরুরি। দীর্ঘক্ষণ উচ্চ ভলিউমে গান শোনা শ্রবণশক্তির ক্ষতি করতে পারে, যা একবার নষ্ট হলে আর ফিরে আসে না।
তবুও চিন্তা হলে যা করতে পারেন?
যুক্তরাষ্ট্র সরকার গ্রাহকদের ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত নিরাপদ রেডিয়েশন সীমা নির্ধারণ করেছে। ব্লুটুথ ডিভাইসগুলো এই সীমার অনেক নিচে থাকে যদি এটি ত্বকের কাছাকাছি রাখা হয়।
তবুও যদি আপনি আরও সতর্ক হতে চান, তাহলে আপনি তারযুক্ত হেডফোন ব্যবহার করতে পারেন। তবে হেডফোন ব্যবহার না করলেই কানের জন্য ভালো।
বিশেষজ্ঞ পরামর্শ
দৈনিক ৬০–৯০ মিনিটের বেশি হেডফোন ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। হেডফোনের ভলিউম ৬০%–৮০%-এর মধ্যে রাখা এবং মাঝেমধ্যে বিরতি নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া শব্দ নিরোধক (Noise-Canceling) হেডফোন ব্যবহার করাও ভালো, যাতে আশপাশের শব্দ ঢাকতে গিয়ে ভলিউম বেশি না করতে হয়।
সুত্র: হেলথ