শনাক্তের কত দিন পর ইতালি-যুক্তরাষ্ট্রে মহামারি হলো?

নোভেল করোনায় ধুঁকছে গোটা বিশ্ব। চীন শুরু হওয়া এই মহামারী এখন একের পর সব দেশকে আক্রান্ত করছে। প্রশ্ন উঠেছে- মজবুত অর্থনীতি, উন্নত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের প্রথম বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলো করোনা মোকাবিলা করতে পারল না কেন? আপাতদৃষ্টিতে এ জন্য ঢিলেমিকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বলা হচ্ছে, করোনার প্রকোপে চিনে প্রতিনিয়ত যখন মৃত্যুমিছিল চলছিল, তখনও প্রাণঘাতী এই ভাইরাসকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি আমেরিকা। যে কারণে জানুয়ারির শেষ দিকে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা যখন ছিল ৫, মার্চের মাঝামাঝি তা এসে ঠেকে ১৭০০-তে। তার পরও লকডাউন ঘোষণা বা জন সমাগম রুখতে তেমন কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি মার্কিন প্রশাসন। চীনের ঘাড়ে গোটা পরিস্থিতির দায় চাপিয়েও ক্ষান্ত থাকেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর সরকারের আমলারা।

গত ১ এপ্রিল মৃত্যুসংখ্যার নিরিখে চীনকে যখন ছাপিয়ে যায় আমেরিকা, তখনই প্রথমবার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা যায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। সামনের দিনগুলি কঠিন হতে চলেছে এবং তার জন্য সকলকে প্রস্তুত থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। কিন্তু তত দিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে আক্রান্তের নিরিখে গোটা বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে আমেরিকা। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ লক্ষ ৭৮ হাজার ৪৫৮। প্রাণ হারিয়েছেন ৭ হাজার ১৫৯ জন।

ইউরোপের মধ্যে ইটালিতেই করোনার প্রকোপ সবচেয়ে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখনও পর্যন্ত ১৪ হাজার ৬৮১ জন প্রাণ হারিয়েছেন সেখানে। আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে ১ লক্ষ ১৯ হাজার ৮২৭-এ।

জানা যায়, গত ২৩ জানুয়ারি চীনের হুবেই প্রদেশের দুজন পর্যটক ইতালির মিলান বিমানবন্দর দিয়ে প্রবেশের কিছুদিন পরই রোমে গিয়ে অসুস্থ হন। তাদের মধ্যে করোনা ধরা পড়ে। ৬ ফেব্রুয়ারি চীনের উহান থেকে দেশে ফেরেন এক ইতালীয় নাগরিক। ওই তিনজনই ইতালিতে ধরা পড়া প্রথম করোনা রোগী। তবে দেশটিতে করোনায় প্রথম মৃত্যু হয় ২২ ফেব্রুয়ারি। ওই সময় অবশ্য করোনা সংক্রমিত রোগীরা সুস্থ হওয়ার পরই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। সংক্রমণের প্রথম দিকের ঘটনাগুলো ইতালি সফলভাবে মোকাবেলা করেছিল। ওই সময় ধরা পড়া রোগীরা কয়েকদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছিলো।

তুরস্কের রাষ্ট্রীয় এজেন্সি আনাদোলুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তবে দেশটির রাজধানী মিলান থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরের কডোনো শহরের করোনা আক্রান্ত এক বাসিন্দা হাসপাতালে ভর্তির পর পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর ফলে ওই হাসপাতালের অন্যান্য রোগী ও কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে করোনা। আর সেখান থেকেই পুরো ইতালিতে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যা এখন মহামারি রূপ নিয়েছে।

তুরস্কের ইস্তাম্বুলের টুয়েন্টিনাইট মেইজ ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মিকেলাঞ্জেলে গুইদা বার্তা সংস্থা আনাদুলুকে বলেছেন, করোনার প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ইতালিই উইরোপের প্রথম দেশ যারা কিনা চীনের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়। ইউরোপে তারাই প্রথম বিমানবন্দরগুলোতেই করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ‘থার্মাল ক্যামেরা’ বসায়। ওই সময় ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুজেপ্পে কোন্তে দাবি করেছিলেন, করোনা প্রতিরোধে ইতালির নেওয়া ব্যবস্থা পুরো ইউরোপ মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী।

এদিকে ইতালির এই পরিস্থিতির জন্য দেশের বয়স্ক জনসংখ্যার অনুপাতকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইতালির মোট জনসংখ্যা ৬০ কোটি ৪ লক্ষ ৬১ হাজার। তার মধ্যে ২২.৮ শতাংশের বয়সই ৬৫ বা তার চেয়ে বেশি। যে কারণে তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম। আবার দেশের উত্তরে যেখানে করোনার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি, সেখানে পরিবারের প্রবীণ এবং নবীন সদস্যরা একসঙ্গে থাকেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একজনের থেকে অন্য জনের শরীরে থাবা বসিয়েছে মারণ ভাইরাস। চেষ্টা সত্ত্বেও যা রুখতে পারেনি সে দেশের সরকার। আবার প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা বেশি হওয়ায়, সে দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবাও মুখ থুবড়ে পড়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ